‘ঘোচেনি’ মতিয়া-বাদশার দ্বন্দ্ব

নিজ নির্বাচনী এলাকা শেরপুরের (নকলা-নালিতাবাড়ী) আসনে দলের একাংশের সঙ্গে মান-অভিমান এখানো মেটেনি মতিয়া চৌধুরীর। স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী ও জনপ্রিয় নেতা বদিউজ্জামান বাদশা এই আসনের বদলে শেরপুর-১ (সদর) আসনে নৌকার পক্ষে প্রচারে বেশি সোচ্চার।

যদিও বাদশা দাবি করছেন, প্রার্থীর পক্ষে না থাকলেও তিনি নৌকার পক্ষে কাজ করছেন। কর্মী-সমর্থকদের বলছেন, নৌকায় ভোট দিতে।

মতিয়া ও বাদশার মধ্যে মতের অমিল কোনো নতুন ঘটনা নয়। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে সারাদেশে প্রশংসিত মতিয়া অষ্টম সংসদ নির্বাচনে নিজ নির্বাচনী এলাকায় অপ্রত্যাশিতভাবে হেরে যান অল্প ভোটে। তখনই বাদশার সঙ্গে তার বিরোধের কথা সামনে আসে।

২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোট না এলেও মতিয়াকে তার আসনে কঠোর লড়াইয়ে নামতে হয় বাদশার কারণে। কারণ, তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে চ্যালেঞ্জ করেন মতিয়াকে।

বাদশা কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি ও নালিতাবাড়ী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন। বর্তমানে তিনি শেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য। এবারও তিনি শেরপুর-২ (নকলা-নালিতাবাড়ী) আসনে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। কিন্তু তাকে দেওয়া হয়নি দলীয় প্রতীক। পঞ্চমবারের মতো নৌকা পেয়েছেন মতিয়া।

১৯৯৬ সালের আগ পর্যন্ত মতিয়ার ঘনিষ্ঠই ছিলেন বাদশা। ১৯৯৬ সালে দুজন ছাত্রলীগ নেতা খুনের ঘটনায় দুজনের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। তা ঘোচেনি আজও। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপেও কোনো ফল পাওয়া যায়নি। মতিয়ার কোনো নির্বাচনী প্রচারণায় আগ বাড়িয়ে যেতে দেখা যায় না বাদশা ও তার বলয়ের নেতাকর্মীদের। অন্যদিকে মতিয়ার পক্ষ থেকেও বাদশাকে অংশগ্রহণ করতে বলা হয়নি।

তবে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ থাকায় নৌকার পক্ষেই প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন বলে দাবি করেছেন বাদশা।

নালিতাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক বলেন, ‘বদিউজ্জামান বাদশা উপজেলা আওয়ামী লীগের কেউ না, তাই তাকে নির্বাচনী প্রচারণায় নেয়া হয়নি। আর ওর (বাদশা) বাবাতো রাজাকার ছিল। তালিকা অনুযায়ী তার বাবার নাম ২৬ নম্বরে রয়েছে। এ ছাড়া ওর শ্বশুর ৬১ আর চাচাশ্বশুর ৬২ নাম্বারে তালিকাভুক্ত রয়েছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাদশা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমার বাবার বিষয়ে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা মতিয়া চৌধুরীর আবিষ্কার। কোনো জায়গায় ঠেকাতে না পেরে দেড়-দুই বছর আগে থেকে এই অপপ্রচার চালানো হয়। পাকিস্তান আমলে আমার বাবা আব্দুল কুদ্দুস নালিতাবাড়ীর যোগানীয়া ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার ছিলেন। আর ২৬ নাম্বারে তালিকাভুক্ত আব্দুল কুদ্দুসের বাড়ি মরিচপুরান ইউনিয়নে। এ থেকে প্রমাণিত হয় আমার বাবা রাজাকার ছিলেন না।’

নির্বাচনে ভূমিকা জানতে চাইলে বাদশা বলেন, ‘আমি এবার প্রার্থী হইনি শুধুমাত্র নেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশের কারণে। ওরা এসব কথা বললে আমার লোকজন মন খারাপ করে। দলের জন্য কাজ করতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।’

‘নকলা-নালিতাবাড়ী আসনে মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়ার পর আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তিন দফা সাক্ষাৎ করেছি। তিনি যেভাবে আমাকে নির্দেশনা দিয়েছেন আমি এলাকায় সেভাবে কাজ করে যাচ্ছি। মতিয়া চৌধুরী আমাকে নির্বাচনী প্রচারে না ডাকলেও নৌকা প্রতীকের বিজয়ের স্বার্থে এলাকায় সভা-সমাবেশ করছি। ইতোমধ্যে নয়াবিল ও গাজীরখামারে সভা হয়েছে। এ ছাড়াও প্রতিনিয়ত ঘরোয়া বৈঠকের মাধ্যমে হাজার হাজার নেতাকর্মীকে বোঝানো হচ্ছে নৌকার ভোট নষ্ট করা যাবে না। মতিয়া চৌধুরীর সঙ্গে আমাদের বিরোধ থাকলেও নৌকাকে বিজয়ী করতে আমরা একজোট হয়ে কাজ করে যাচ্ছি।’

স্থানীয় একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা বাদশা ও মতিয়ার মধ্যে বিরোধ নিয়ে চিন্তিত। তারা বলেন, আওয়ামী লীগে বিভক্তির সুবিধা কাজে লাগিয়ে নালিতাবাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানের পদটি ছিনিয়ে নেয় বিএনপি। একই কারণে পৌর মেয়রের পদটি ছিল বিএনপির দখলে চলে যায়। বিভক্তির রাজনীতির লাগাম এখনই টেনে ধরা না হলে জাতীয় নির্বাচনে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।