মামলাবাজ ওসি

রাজশাহীর বাগমারা থানার ওসি নাছিম আহমেদ। এলাকার কাউকে পরোয়া করেন না তিনি। তাঁর রোষানল থেকে রেহাই পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ।

এমনকি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও তাঁর হাতে নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। একের পর এক নেতাকর্মীকে ধরে এনে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে দিচ্ছেন তিনি। গত ছয় মাসে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নামেই অর্ধশতেরও বেশি মামলা দিয়েছেন ওসি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্থানীয় এক প্রভাবশালী রাজনীতিবিদের কাছের লোক ওসি নাছিম। তাঁর কথামতোই কাজ করেন ওসি। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকিরুল ইসলাম সান্টুর সঙ্গে তাঁর মতানৈক্য রয়েছে। এ কারণে ওসির মাধ্যমে সান্টুর গ্রুপের নেতাকর্মীদের নামে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। তা ছাড়া নির্বাচনী ডামাডোল শুরু হওয়ার পর তাঁর কথামতো বিএনপির নেতাকর্মীদেরও মাঠে নামতে দিচ্ছেন না ওসি। ফলে উপজেলাজুড়ে ‘ওসি নাছিম আতঙ্ক’ শুরু হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত মঙ্গলবার বিকেলে ওসির অপসারণ চেয়ে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী আবু হেনা সংবাদ সম্মেলনেও করেছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ১ ডিসেম্বর বাগমারায় দিনে-দুপুরে পিটিয়ে হত্যা করা হয় তাহেরপুর পৌর যুবলীগের সহসভাপতি চঞ্চল কুমারকে। এ ঘটনায় নিহত চঞ্চলের ভাই অমল কুমার বাদী হয়ে সর্বহারা ক্যাডার আর্টবাবু, স্থানীয় ক্যাডার বিপ্লবসহ ১৭ জনের নামে থানায় অভিযোগ করেন। কিন্তু ওসি আর্টবাবু, বিপ্লবসহ আটজনের নাম

বাদ দিয়ে মাত্র ৯ জনকে আসামি করে মামলা নথিভুক্ত করেন।

বাগমারার গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলম সরকার অভিযোগ করে বলেন, ‘তিনি বাগমারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাকিরুল ইসলাম সান্টুকে সমর্থন করেন। সান্টু এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। এ কারণে সান্টুর সমর্থক হিসেবে ওসিকে দিয়ে আমার নামে তিনটি মামলা করা হয়েছে। এর বাইরেও আমার কর্মী-সমর্থকদের নামে অন্তত আটটি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় প্রতি মাসেই হাজিরা দিতে হয় আদালতে। কোনো কোনো মামলায় ৪০-৫০ জন করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। রাজনীতি করতে গেলে সবাই এক নেতার হয়ে কাজ করতে পারেন না। আমরা সান্টুর হয়ে কাজ করেছি—তাই ওসি আমাদের হয়রানি করার জন্য একের পর এক মামলা দিয়ে যাচ্ছেন। ওসি আমাদের সঙ্গে যে অন্যায়টি করে চলছেন—এর বিচার হওয়া দরকার।’

ভবানীগঞ্জ পৌর যুবলীগের সভাপতি ফেরদৌস আলী বলেন, ‘বাগমারা থানার ওসি নাছিম আহমেদ আমার নামেও মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছিলেন। কারাগারে পাঠানোর আগে ওসি আমাকে চরম নির্যাতন করেছেন। এ নির্যাতনের কারণে আমি এখনো ঠিকমতো হাঁটতে পারি না। সরকারি দলের লোক হয়েও শুধু সান্টুর সঙ্গে রাজনীতি করার কারণে আমাদের ওপর এভাবে নির্যাতন চালিয়েছেন ওসি। তবে আমরা সব সময় নৌকার পক্ষেই আছি, থাকব।’

বাগমারার তাহেরপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগ করি। প্রার্থী যে-ই হবেন, তাঁর হয়েই আমাদের কাজ করতে হবে। কিন্তু ওসি মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদের হয়রানি করছেন।’

বাগমারা থানার ওসি নাছিম আহমেদ বলেন, ‘আমি কারো হয়ে কাজ করছি—এ কথাটা ঠিক নয়। নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বাগমারায় আছে। এর পরও ঢালাও অভিযোগ করলে আমার কিছু করার নেই। আর যারা অপরাধী তাদের নামে মামলা হতেই পারে।’

রাজশাহীর এসপি শহীদুল ইসলাম বলেন, নির্বাচন নিয়ে পক্ষপাতিত্বের কোনো সুযোগ নেই। তা ছাড়া ওসির বিরুদ্ধে কেউ লিখিত অভিযোগ করলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনে বিএনপির মনোননীত প্রার্থী আবু হেনা সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করেন, ওসি নৌকার প্রার্থীর হয়ে সরাসরি কাজ করছেন। তিনি বিএনপির নেতাকর্মীদের পোস্টার মারতেও মাঠে নামতে দিচ্ছেন না। মিথ্যা মামলা দিয়ে, বাড়ি বাড়ি পুলিশ পাঠিয়েও নেতাকর্মীদের নানাভাবে হয়রানি করছেন।