একাদশ নির্বাচনে বিএনপির যারা নেই, যারা আছেন

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নে অধিকাংশ আসনে প্রার্থীতায় পুরণোদের ওপরই আস্থা রেখেছে বিএনপি। বয়স, দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়া এবং কোনো কোনো প্রার্থী শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন দাখিল না করার কারণে বিএনপির অনেক পরিচিত মুখ এবারের ভোটে নেই।

দণ্ড হওয়ায় ভোটে নেই বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তাঁর ছেলে ও দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও একই কারণে নির্বাচন করতে পারছেন না। এবারের নির্বাচনে দলটির নবীন প্রার্থীর সংখ্যা কম নয়। এসব নতুন মুখের তালিকায় রয়েছেন সাবেক ছাত্র নেতা এবং বর্ষীয়ান ও প্রয়াত নেতাদের পরিবারের সদস্যরা। বিএনপির মনোনীত প্রার্থীদের মধ্যে নারী মাত্র ৯ জন।

শুক্রবার (৭ ডিসেম্বর) একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২০৬ আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। ২০০১ ও ২০০৮ সালে নির্বাচিত প্রার্থী এবং পুরনো নেতাদেরই প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। জরুরি অবস্থার সময় সংস্কারপন্থি পরিচিতি পেয়ে যারা দলের মূল ধারা থেকে ছিটকে পড়েছিলেন, তাদেরও ফিরিয়ে এনে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।

২০০১-২০১৮ মেয়াদে বিএনপি সরকারের সময় দুর্নীতিসহ বিভিন্ন কারণে বিতর্কিতরাও মনোনয়ন পেয়েছেন। অনেক নেতার বিরুদ্ধে মামলা থাকায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে অধিকাংশ আসনে একাধিক প্রার্থীকে প্রাথমিক মনোনয়ন দিয়েছিল বিএনপি। মারা গেছেন এমন নেতাদের আসনে তাদের স্ত্রী ও সন্তানদের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।

বিএনপির দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তদের মধ্যে তাতে দেখা যাচ্ছে, দণ্ড হওয়ায় ভোটে নেই বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তাঁর ছেলে ও দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও একই কারণে নির্বাচন করতে পারছেন না। এছাড়া জমিরউদ্দিন সরকার, নজরুল ইসলাম খান, মাহবুবুর রহমান, রফিকুল ইসলাম মিয়া, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল,সালাউদ্দিন আহমেদ।

বয়সের কারণে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন না দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য জমিরউদ্দিন সরকার ও মাহবুবুর রহমান। একটি দুর্নীতির মামলায় তিন বছরের কারাদণ্ড প্রাপ্ত বিএনপির অপর স্থায়ী কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম মিয়াও নির্বাচন করতে পারছেন না। ভারতে থাকা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ এবার ভোটে নেই। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু তাঁর মনোনয়নপত্র জমা দেননি।

১০ বছরের কারাদণ্ড হওয়ার কারণে সাদেক হোসেন খোকা নির্বাচন করতে পারছেন না। মনোনয়ন অবৈধ হওয়ার কারণে আমিনুল হক ভোটে নেই। এ ছাড়া বিভিন্ন মামলায় সাজা বহাল থাকার কারণে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এম মোর্শেদ খান, ইকবাল হাসান মাহমুদ, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আবদুস সালাম পিন্টু, আহমদ আযম খান, গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী, ওসমান ফারুক ও মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিনের নাম নেই বিএনপি ঘোষিত তালিকায়।

দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না। তাঁর নির্বাচনী এলাকায় বিএনপির কোনো প্রার্থীর পক্ষে ভোটে জেতাও কঠিন। অবশ্য রিজভী বলছেন, দলের কারাবন্দী চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও বিদেশে থাকা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নির্বাচন না করার কারণে তিনি ভোটে নেই।

দলের যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও হাবিব-ঊন নবী খান সোহেল মনোনয়ন সংগ্রহ করেও তা জমা দেননি। মনোনয়ন জমা না দেওয়ার কারণ জানাননি কারাবন্দী সোহেল। তবে আলাল বলেছেন, তাঁর পছন্দ মতো আসনে তাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। এমনকি মনোনয়ন নিয়ে তাঁর সঙ্গে কেউ কথাও বলেননি। ঋণখেলাপি হওয়ার কারণে আসলাম চৌধুরীর মনোনয়ন বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন।

এ ছাড়া জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, সম্পদের তথ্য গোপনের মামলায় সাজার কারণে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমান উল্লাহ আমান ও কামরুল ইসলাম নির্বাচন করতে পারছেন না। একাধিক মামলায় দণ্ডিত হওয়ার কারণে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু নির্বাচন করছেন না। তাঁর পরিবর্তে স্ত্রী ভোট করছেন। এ ছাড়া দণ্ডিত হওয়ার কারণে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল ওহাব ও আবদুল ওদুদ এবার ভোটের মাঠে নেই। বর্তমান ও সাবেক ছাত্রদল এবং যুবদলের বেশি নেতাকে প্রথমবারের মতো দলীয় মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি।

বিএনপির ৯ নারী মনোনয়নপ্রাপ্তরা হলেন: রংপুর-৩ আসনে রিটা রহমান, নাটোর-১ কামরুন্নাহার, নাটোর-২ সাবিনা ইয়াসিমন ছবি, সিরাজগঞ্জ-১ রুমানা মোরশেদ কনকচাঁপা, ঝালকাঠি-২ জেবা আমিন খান, শেরপুর-১ ডা. সানসিলা জেবরিন, নেত্রকোনা-৪ তাহমিনা জামান, ফরিদপুর-২ শামা ওবায়েদ এবং কক্সবাজার-১ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন হাসিনা আহমেদ।

সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মনোনয়নপ্রাপ্তরা হলেন:সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ৬ জন এবার বিএনপির ২০৬ জনের চূড়ান্ত মনোনয়ন তালিকায় স্থান পেয়েছেন। তাঁদের মধ্যে দুজন পার্বত্য চট্টগ্রামের দুটি জেলা থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন। ঘোষিত চূড়ান্ত তালিকায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ছয় প্রার্থী হলেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায় (ঢাকা-৩), নিতাই রায় চৌধুরী (মাগুরা-২), গৌতম চক্রবর্তী (টাঙ্গাইল-৬), মিলটন বৈদ্য (মাদারীপুর-২), মণি স্বপন দেওয়ান (রাঙামাটি) ও সাচিং প্র“ (বান্দরবান)।

মনোনয়নপ্রাপ্ত স্বজনরা হলেন: সন্তানদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকারের ছেলে ব্যারিস্টার নওশাদ জমির (পঞ্চগড়-১), বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমান উল্লাহ আমানের ছেলে ইরফান ইবনে আমান (ঢাকা-২), প্রয়াত অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের ছেলে এম নাসের রহমান (মৌলভীবাজার-৩), প্রয়াত তরিকুল ইসলামের ছেলে অনিন্দ ইসলাম অমিত (যশোর-৩), প্রয়াত আসম হান্নান শাহর ছেলে শাহ রিয়াজুল হান্নান (গাজীপুর-৪), প্রয়াত শামসুল ইসলাম খানের ছেলে মাইনুল ইসলাম শান্ত (মানিকগঞ্জ-২), প্রয়াত ডেপুটি স্পিকার আখতার হামিদ সিদ্দিকীর ছেলে পারভেজ আরেফিন সিদ্দিকী (নওগাঁও-৩)।

স্ত্রীদের মধ্যে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদারের স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন (নাটোর-২), ভারতে অবস্থানরত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ (কক্সবাজার-১), ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সভাপতি এম এ কাউয়ুমের স্ত্রী শামীম আরা বেগম (ঢাকা-১১) ও প্রয়াত বিএনপির নেতা ফজলুর রহমানের সহধর্মিনী অধ্যাপক কামরুন্নাহার শিরিন (নাটোর-১)।

এছাড়া বর্ষীয়ান সাবেক ছাত্র নেতাদের মধ্যে রয়েছে, ভোলা-৪ নাজিম উদ্দিন আলম, পাবনা-৪ হাবিবুর রহমান হাবিব, নরসিংদী-১ খায়রুল কবির খোকন,ঢাকা-১২ সাইফুল আলম নীরব, খুলনা-৪ আজিজুল বারী হেলাল টাঙ্গাইল-২ সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, মাদারীপুর-৩ আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, সিরাজগঞ্জ-৫ আসনে আমিরুল ইসলাম খান আলীম প্রমুখ।–পিবিডি