প্রবাসী অধ্যুষিত গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-৬ আসন। শিক্ষাদীক্ষা, প্রাকৃতিক সম্পদ গ্যাস আর ঐতিহ্য যেমন গোলাপগঞ্জের অহংকার, তেমনি প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকা ও প্রাকৃতিক গ্যাসের কারণে প্রসিদ্ধ বিয়ানীবাজার।
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে আসনটিতে মহাজোটের প্রার্থী নিয়ে দেখা দিয়েছে জটিলতা। মহাজোটের হেভিওয়েট দুই প্রার্থী এখন পর্যন্ত এ আসনে প্রার্থী থাকায় দুই উপজেলার সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে চলছে নানা আলোচনা।
আলোচিত এ আসনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য, বর্তমান এমপি ও শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এবং সদ্য বিকল্পধারায় যোগ দেওয়া প্রেসিডিয়াম মেম্বার শমসের মবিন চৌধুরী। এদের মধ্যে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বিয়ানীবাজারের সন্তান আর সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন চৌধুরী বীরবিক্রম গোলাপগঞ্জের সন্তান। শিক্ষামন্ত্রী ১৯৯৬ সাল থেকে নির্বাচন করে এলেও ভোটের লড়াইয়ে শমসের মবিন একেবারেই আনকোরা। তিনি এবারই প্রথম ভোটযুদ্ধে নেমেছেন। অবশ্য হেভিওয়েট শমসের মুবিনকে নিয়ে এলাকায় রীতিমতো চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
অনেকে বলছেন, সিলেট-৬ আসনে আওয়ামী লীগে গ্রুপিং এবং শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে নেতাকর্মীদের দূরত্বের কারণে এবার শমসের মবিনকেই মহাজোটের প্রার্থী করা হতে পারে। যদিও নিজ দলের নেতাদের সঙ্গে দূরত্ব এবং অভ্যন্তরীণ কোন্দল মেটাতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী নুরুল ইসলাম নাহিদ। কিন্তু কোন্দলের সঠিক কোনো সুরাহা তিনি এখনো করতে পারেননি। এ কারণে শিক্ষামন্ত্রীর নিজ এলাকায় তারই বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছেন দলীয় নেতাকর্মীরা।
উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক আবুল কাশেম পল্লব প্রকাশ্যে শিক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। একই সঙ্গে গোলাপগঞ্জ আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশ শিক্ষামন্ত্রী নাহিদকে আর চাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষামন্ত্রীর সামনে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন তার নিজ দল এবং বিলল্পধারার প্রার্থী শমসের মবিন চৌধুরী।
আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন আহ্বান করা হলে শিক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধে একাধিক নেতা দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনলে দলের কোন্দল প্রকাশ্য রূপ নেয়। তাই দুই বাধার কারণে শেষ পর্যন্ত তার মহাজোটের টিকিট পাওয়া না পাওয়ায় দেখা দিয়েছে সংশয়।
এ ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, গত ১৮ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে দলীয় মনোনয়ন দেন। আমি তা প্রকাশ করিনি। মহাজোট থেকে মনোনয়ন পাবেন কিনাÑ জানতে চাইলে তিনি বলেন, দল আছে, নেত্রী আছেন, তারাই আমার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। আমি এ ব্যাপারে কিছু বলতে চাই না। সিলেট-৬ আসনে আওয়ামী লীগের কোন্দলের ব্যাপারে তিনি বলেন, বড় দলে গ্রুপিং থাকতেই পারে। তবে জাতির পিতা, জননেত্রী শেখ হাসিনা এবং দলের ব্যাপারে কারও কোনো বিরোধ নেই। এ ব্যাপারে সবাই ঐক্যবদ্ধ।
অন্যদিকে বিকল্পধারার প্রার্থী শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, আমি আপাতত বিকল্পধারা থেকেই প্রার্থী হয়েছি। আশাবাদী মহাজোট থেকে আমাকেই প্রার্থী করা হবে। মহাজোট থেকে মনোনয়ন না পেলে প্রার্থী থাকবেন কিনাÑ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই সিদ্ধান্ত পরবর্তীতে নেওয়া হবে।
নুররুল ইসলাম নাহিদ : তিনি কসবা প্রাথমিক বিদ্যালয়, বিয়ানীবাজার পঞ্চখ- হরগোবিন্দ হাইস্কুল, সিলেট এমসি কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন। ষাটের দশকের শুরুতে আইয়ুব খানের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় কর্মী হিসেবে তার রাজনৈতিক জীবনের সূচনা ঘটে। সুদীর্ঘকাল ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তা ছাড়াও এই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এবং সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন।
১৯৯৬ সালে সপ্তম ও ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-৬ আসন থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সিলেট-৬ আসনের এমপি হন।
শমসের মবিন চৌধুরী : বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদান রাখেন শমসের মবিন চৌধুরী। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীরবিক্রম খেতাব প্রদান করে। ১৯৭১ সালে শমসের মবিন চৌধুরী পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে কর্মরত ছিলেন। প্রতিরোধ যুদ্ধকালে ১১ এপ্রিল চট্টগ্রাম কালুরঘাটের যুদ্ধে তিনি কোমরে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তাকে বন্দি করে।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে তিনি পররাষ্ট্র সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দুবছর দায়িত্ব পালন শেষে ২০০৭ সালে অবসরে যান। ২০০৮ সালে বিএনপিতে যোগ দেন এবং ২০০৯ সালে দলের ভাইস চেয়ারম্যান হন। ২০১৫ সালের ২৮ অক্টোবর বিএনপির রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ান। গত অক্টোবরে বিকল্পধারা বাংলাদেশে যোগ দিয়ে আবার রাজনীতিতে সক্রিয় হন।
সূত্র: আমাদের সময়