পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে আ’লীগের প্রার্থী তালিকা

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী তালিকা প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। রোববার দলটির চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের কথা রয়েছে। তবে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের আপত্তির মুখে শেষ মূহুর্তে কিছুটা রদবদল হতে পারে প্রার্থী তালিকায়।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন গণমাধ্যমে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশের পর ঢাকায় ছুটে আসেন মনোনয়নবঞ্চিত নেতাকর্মীরা। গত মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার তারা গণভবনে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ক্ষোভের কথা জানান।

সূত্র জানায়, গণভবনে দলের সভাপতির সঙ্গে দেখা করে নেতাকর্মীরা বলেছেন, জনবিচ্ছিন্ন এমপিদের মনোনয়ন দেওয়া হলে নির্বাচনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। প্রার্থীদের পরাজয়ের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের ক্ষমতা ধরে রাখার ব্যাপারে সংশয় ব্যক্ত করে নেতাকর্মীরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে কিছু আসনে সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডে প্রাথমিকভাবে বাছাই করা আওয়ামী লীগের প্রার্থী পরিবর্তনের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে বলে আশ্বস্ত করেন শেখ হাসিনা।

এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, মনোনয়নবঞ্চিতদের বক্তব্য আমরা শুনেছি। তাদের দেওয়া তথ্য বিবেচনা করা হবে।

জানা যায়, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেছেন যুব মহিলা লীগের সহশিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও পাঠাগার সম্পাদক সরকার ফারহানা আক্তার সুমি। তিনি নীলফামারী-১ আসনের বর্তমান এমপি আফতাব উদ্দিন সরকারের বিরুদ্ধে জনবিচ্ছিন্নতার অভিযোগ এনে সুমি বলেছেন, তাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হলে নৌকার ভরাডুবি হবে।

বরগুনা-১ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী মশিউর রহমান শিহাব শেখ হাসিনাকে বলেছেন, সাধারণ জনগণ আমাকে চায়। আমি জুনিয়র হলেও জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে শীর্ষে আছি। বর্তমান এমপি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুকে নিয়ে মাঠে নামলে পাবলিক আমাদের জুতো দিয়ে পেটাবে। তাঁকে এলাকায় অবাঞ্ছিত করা হয়েছে।

কুমিল্লা-৩ আসনের বর্তমান এমপি ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুনের নামে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করেছেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সরকার। তিনি বলেন, স্থানীয় এই এমপি গত পাঁচ বছরে এলাকার দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৮৮টি মামলা দিয়েছেন। তাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হলে সংগঠনের অনেক ক্ষতি হবে।

ঝালকাঠি-১ আসনের বর্তমান এমপি বি এইচ হারুনকে মনোনয়ন দিলে আওয়ামী লীগের ভরাডুবি হবে বলে শেখ হাসিনাকে জানিয়েছে স্থানীয় নেতারা। তাদের দাবি, ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মনিরুজ্জামান মনিরকে মনোনয়ন দেওয়া হলে আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে জয়ী হবে। এর বাইরে জয়ী হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে সাবেক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) এ বি তাজুল ইসলামকে। বিষয়টি জানতে পেরে গত বৃহস্পতিবার রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে কথা বলেন যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মহিউদ্দিন আহমেদ মহি। তিনি ওই আসনে নির্বাচন করার আগ্রহ প্রকাশ করে দোয়া চেয়েছেন।

চাঁপাইনাবগঞ্জ-২ (নাচোল, গোমস্তাপুর ও ভোলাহাট) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী আনোয়ারুল ইসলাম আনোয়ার চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট এবং যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য। গত বৃহস্পতিবার গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন সাবেক এই ছাত্রলীগ নেতা। আনোয়ার এই আসনে দলের মনোনয়ন চেয়েছেন।

সিরাজগঞ্জ-৩ আসনের বর্তমান এমপি গাজী ম ম আমজাদ হোসেন মিলন। এ আসনে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী সাইদুল ইসলাম খান পল। তিনি গত বৃহস্পতিবার গণভবনে গিয়ে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে মনোনয়ন চান।

জানা যায়, এভাবে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের কয়েক শ নেতাকর্মী গত তিনদিনে শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাদের অভিযোগের কথা জানিয়েছে। তাদের সবার অভিযোগ ও বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন শেখ হাসিনা। কাউকে কাউকে ইতিবাচক সিদ্ধান্তের বিষয়ে আশ্বস্তও করেছেন বলে জানা গেছে।

সূত্র: পূর্বপশ্চিমবিডি