ইসিকে নিয়ে একি বললেন: অলি

২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক দল ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পাটির (এলডিপি) সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতি চলতে থাকলে নিরপেক্ষ নির্বাচন অসম্ভব। কারণ, এই নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।

তিনি বলেন, সেক্ষেত্রে নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা সে বিষয়ে ২০ দল যথাসময়ে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতে বাধ্য হবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে যত ধরনের অন্তরায় আছে, সেটা সরাতে হবে। সকলের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। অন্যথায় কখনো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আওয়ামী লীগ মনোনীত সভাপতিদের আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্য অপসারণ করতে ইসির প্রতি আহ্বানও জানান তিনি।

অলি আহমদ বলেন, সরকার লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের কথা বলে, কিন্তু মাঠে ময়দানে দেখি মন্ত্রী-এমপিরা এখনো পুলিশ পাহারায় চলে। তাহলে বিএনপি, ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতাদেরও পুলিশের নিরাপত্তা দিতে হবে। না হলে এজন্য নির্বাচন কমিশনকে এক সময় জনগণের কাছে জবাব দিতে হবে।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে জোটের এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

অলি আহমদ বলেন, মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশন আইজিকে এক নির্দেশে বলেছে, মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সময় কোনো মিছিল যেন না হয়, সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য। পরদিন বুধবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মনোনয়নপত্র জমা দিতে আসা সারা দেশের লাখ নেতা-কর্মীর ওপর পুলিশ বিনা উসকানিতে হামলা চালায়। এতে নারী কর্মীসহ বিএনপির প্রায় ৬০ থেকে ৭০ জন মারাত্মক আহত হন।

তিনি বলেন, ঘটনার পর বিএনপি কার্যালয় যখন জনশূন্য, তখন একদল হেলমেটধারী লোক গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এই হেলমেট বাহিনী নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনকারী কিশোর ছাত্র-ছাত্রীদের ওপরও হামলা চালিয়েছিল। তখন কর্তব্যরত সাংবাদিকদের অত্যাচার করেছিল।

গাড়িতে অগ্নিসংযোগকারীদের বিষয়ে অলি আহমদ বলেন, গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়া পর যে ছবি পাওয়া গেছে, সে ছেলেটি ছাত্রলীগের কর্মী বলে অনেকে অভিযোগ করেছেন। মাত্র কয়েক দিন আগে ক্ষমতাসীন দল চার হাজারেরও বেশি মনোনয়ন ফরম বিক্রি করেছে। তারা ঢাকঢোল বাজিয়ে মিছিল করেছে। নির্বাচন কমিশন তখন কোনো নির্দেশনা বা কোনো আদেশ জারি করেনি। প্রশাসন ও পুলিশ কোনো বাধা দেয়নি, কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। অন্যদিকে, বিএনপির জনসমাগম দেখে সরকার শঙ্কিত। সরকার মনে করল, এবার আর ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। গদি ছাড়তে হবে। এই ভয়ে তারা নিরপরাধ নেতা-কর্মীদের ওপর চড়াও হলো।

শান্তিপূর্ণ নেতা-কর্মীর ওপর হামলা করা হয়েছে অভিযোগ করে অলি আহমদ বলেন, দুদিন আগে লাখ লাখ নেতা-কর্মী শান্তিপূর্ণভাবে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছে। কিন্তু হঠাৎ করে এমন কী হলো যে বুধবার হামলা চালাতে হলো? আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের সময় সমর্থকদের সংঘর্ষে দুজন মারা গেছে। তাতে পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

নির্বাচনে মাঠে থাকার বিষয়ে ২০ দলীয় জোটের সিনিয়র নেতা অলি আহমদ বলেন, কেউ যদি মনে করেন, আমরা মাঠ ছেড়ে পালিয়ে যাব, তাহলে ভুল করবেন। মুক্তিযোদ্ধারা কখনো মাঠ ছেড়ে পালিয়ে যায় না। যুবসমাজকে ঐক্যবদ্ধ করে এই সরকারকে মোকাবিলা করব।

তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মতো ভোটযুদ্ধে তরুণ প্রজন্মকে অংশগ্রহণ করতে হবে। এটা কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। মুক্তিযোদ্ধারা কখনো মাঠ ছেড়ে যায় না।

তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী-এমপি-মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী সারা দেশে কয়েক মাস ধরে সরকারী ব্যয়ে নৌকার পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছে। অন্যদিকে মূল প্রতিদ্বন্দ্বি দল বিএনপির চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় জোট নেত্রী খালেদা জিয়াকে মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। হাইকোর্ট তাকে জামিন দিলেও সরকারী প্রভাবে নিম্ন আদালত তাকে জামিন না দেয়ায় তিনি মুক্ত হয়ে নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশ নিতে পারছেন না। এটা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের সম্পূর্ণ বিপরীত।

অলি আহমদ বলেন, রাজতন্ত্র কিংবা স্বৈরাচারীরাষ্ট্র ছাড়া বিশ্বের কোন গণতান্ত্রিক দেশে রাজনৈতিক নেতার বক্তব্য মিডিয়ায় প্রকাশ কিংবা প্রচার করা যাবে না এমন দৃষ্টান্ত আমাদের জানা নেই। অথচ বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তৃতা-বিবৃতি প্রচার ও প্রকাশের উপর বিধি নিষেধ আরোপের ফলে নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে পারছেন না। আসন্ন নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বি দলের ভারপ্রাপ্ত প্রধানের কথা শোনার অধিকার থেকে দেশবাসীকে বঞ্চিত করা ও নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ধারণাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, জামায়াতে ইসলামীর কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আবদুল হালিম, এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ, জাগপার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তাসমিয়া প্রধান, জাতীয় পার্টির (জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, লেবার পার্টির ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, এনপিপির ড. ফরিদ্জ্জুামান ফরহাদ, বাংলাদেশ পিপলস পার্টির লিটা রহমান, বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টির সুকৃতি কুমার মণ্ডল, খেলাফত মজলিসের ড. আহমেদ আব্দুল কাদের, জমিয়তের উলামায়ে ইসলামের একাংশের সভাপতি মুফতি ওয়াক্কাস, অপর অংশের মহাসচিব মাওলানা নূর হোসাইন কাশেমী, জাতীয় দলের অ্যাডভোকেট এহসানুল হুদা, কল্যাণ পার্টির আমিনুর রহমান প্রমুখ।