গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার ইউএনও রেহেনা আকতারকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর ওসমানী মিলনায়তনে জাতীয় পাবলিক সার্ভিস দিবস উদযাপন উপলক্ষে প্রধান অতিথি হিসাবে জনপ্রশাসন পদক-২০১৮ প্রদান করেন। এই পদকটি বিশ্ব মোড়ল জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০০৩ সাল থেকে প্রতি বছরের ২৩ জুন পাবলিক সার্ভিস ডে হিসাবে সরকারি কর্মকর্তাদের ভালো কাজের পুরস্কার ও স্বীকৃতিস্বরূপ প্রণোদনা দিতে ২০১৫ সালের প্রণীত নীতিমালা অনুযায়ী ২০১৬ সাল থেকে সরকার জনপ্রশাসন পদকটি দিয়ে আসছেন। একজন নারী হয়েও মানুষরূপে পুরুষের পাশাপাশি দিনরাত পরিশ্রম করে সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে সদা হাসিমাখা মুখে দৃঢ়তার সাথে কিভাবে সৃষ্টিশীল কাজ করে এই পদক পেয়েছেন বা কেন তাকে বেছে নেয়া হলো এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএনও রেহেনা আকতার ইত্তেফাকের মহিলা অঙ্গনকে জানান—
দৈনন্দিন রুটিনমাফিক সরকারি কাজের শেষ নেই, যেহেতু বর্তমানে দেশে সকল কাজেই ডিজিটালাইজেশনের ছোঁয়া আছে, তাই কাজের পরিধিও কম নয়। সেজন্য আমাদের মতো কর্মকর্তাদের হিমশিম খেতে হয় তবে কাজ ফেলে পালিয়ে বেড়াই না বরং চাপে থাকলে বিশেষ করে আমার কাজের গতি বেড়ে যায়। যেহেতু আমি মাঠপর্যায়ের একজন সর্বশেষ স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করি, তাই আমার কাজের ক্ষেত্রও বড় এবং বিষয়ভিত্তিক কার্যক্রমও বেশি। বিভিন্ন কাজ করার ফাঁকে ফাঁকে বা রুটিনের বাইরে গিয়ে কিছু কিছু ভালো কাজ করার কারণে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে সরেজমিন তদন্ত সাপেক্ষে বাছাই করে মূল্যায়ন করার মাধ্যমে প্রতিবছরের ন্যায় এ বছর অন্যান্যের সাথে বিশেষ কাজের মূল্যায়ন হিসাবে একমাত্র নারী আমি এই কাজের জন্য সরকারের দৃষ্টিতে আসায় সম্মাননা হিসাবে জনপ্রশাসন পদক পেয়েছি। যেসব কাজের জন্য আমাকে বেছে নেয়া হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে— (১) সমগ্র উপজেলায় ৩০ মিনিটে ২ লাখ চারা রোপণ করেছি বিভিন্ন স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মাধ্যমে। (২) উপজেলায় শিল্পকলা একাডেমি গঠন করে সাংস্কৃতিক চর্চার ব্যবস্থা করেছি। (৩) মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধকালীন সময়ের বিভিন্ন ঘটনা লিপিবদ্ধ করে পুস্তক আকারে সঠিক ইতিহাস সকলের মাঝে প্রচার করেছি। (৪) শ্রবণ ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা স্কুল গঠন করে সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষার মাধ্যমে তাদেরকে মূল জনসংখ্যার সাথে সম্পৃক্ত করেছি। (৫) গ্রামীণ দরিদ্র পরিবারগুলোকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদেরকে মৌলিক অধিকারের আওতায় এনেছি। (৬) গ্রামীণ পর্যায়ে মা ও শিশু সুরক্ষায় উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে ৮টি গ্রামীণ অ্যাম্বুলেন্স বিতরণের মাধ্যমে চিকিত্সা সেবা প্রদানসহ আরো অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছি।
যেহেতু বর্তমান সরকার জনবান্ধব সেহেতু আমার লক্ষ্য হচ্ছে দেশের উন্নয়নের জন্য সরকার যেসব বিষয় আমার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করার কথা, সেই কাজগুলো যেন সুষ্ঠুভাবে শতভাগ বাস্তবায়ন করতে পারি। এছাড়াও উন্নয়নের জন্য যেসব বিষয় সরকারের নজরে আসেনি অথচ আমার নজরে এসেছে লোকাল প্রশাসন হিসাবে সেসব বিষয়গুলোও বা কাজগুলোরও সুষ্ঠু সমাধান করাও আমার লক্ষ্য। প্রতিটি কাজের পেছনে অর্থনৈতিক বিষয়টি জড়িত। এসব কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়। কোনো না কোনোভাবে ম্যানেজ করে এসব কাজগুলো সম্পন্ন করতে হয়। এছাড়া আমি একজন মহিলা হয়েও নিজেকে একজন মানুষ হিসাবে সকলের সাথে মিলেমিশে কাজ করি। মহিলা মনে করে নিজেকে গুটিয়ে রাখি না বরং ঘরে-বাইরে, আমার নিজ অফিসের সকল স্টাফের এবং উপজেলার বিভিন্ন বিভাগের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা, পৌরসভার মেয়র, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও তাদের অফিস স্টাফরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে সহযোগিতা করে থাকেন। সরকারি ছুটির দিন, শুক্র-শনিবার ভাবি না, তাই যে কোনো কাজের চাপ নিতে আমি পিছপা হই না। আমি ইউএনও কিন্তু মহিলা হওয়ায় সাধারণ জনতা বিশেষ করে গ্রামপর্যায়ের অনেকে আমাকে মা-বোন-আপা-খালা-ম্যাডাম ডেকে থাকে। এসব সম্বোধন আমি খুশি হয়ে গ্রহণ করি।
বর্তমান সরকার উন্নয়নের সরকার, দেশে বর্তমানে রাজনৈতিক অস্থিরতা বা হরতাল অবরোধ নেই। জীবন-জীবিকার মান, অর্থনৈতিক অবস্থা, গড় আয়ু, সবকিছুর মান বেড়েছে বলেই দেশ এখন এগিয়ে যাচ্ছে। আমি মনে করি বর্তমান সরকার একটি আস্থাশীল সরকার।