মালয়েশিয়ায় থাকা সেই হত্যাকারী বাবার ফাঁসি চায় মেয়ে …

হত্যাকারী বাবার ফাঁসি চায়- ৭ বছর বয়সের অবুঝ শিশু সাজিয়াতুজ জোহরা মুগ্ধ। পৃথিবী সম্পর্কে বুঝে না কিছুই। আর এরই মধ্যে মাকে হারিয়ে দিশেহারা মুগ্ধ। এখন তার একটি চাওয়া মায়ের মৃত্যুর বিচায়। হত্যাকারী বাবা হলেও পড়োয়া নেই তার। তাই বাবা সহ হত্যায় সহযোগি সকলের ফাঁসি ও কঠোর শাস্তি চায় মুগ্ধ।

গতকাল বুধবার রাতে নানার বাড়িতে কান্নাজড়িত কন্ঠে নির্মম নির্যাতনের পর মা সাজেদা-ই-বুলবুলকে হত্যা করায় হত্যায় সহযোগি সকলের ফাঁসি ও কঠোর শাস্তির দাবি করে মেয়ে মুগ্ধ।

জানা গেছে, সাজেদা-ই-বুলবুল পটুয়াখালী সদরের পুরাতন আদালত পাড়ায় মো. আনিস হাওলাদারের মেয়ে। প্রাইম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ও এলএম পাস করেন সাজেদা। পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ সুবিধাখালীর ঘটকের আন্দুয়া এলাকার সোহরাব ফকিরের ছেলে শাহজাদা সাজুর সঙ্গে বিয়ে হয় সাজেদার।

বিয়ের পর ২০১৬ সালের ৩ ডিসেম্বর স্বামীর সঙ্গে মালেয়েশিয়া যান তিনি। সেখানে যাওয়ার পর শাহজাদা মালয়েশিয়ায় নিজে প্রতিষ্ঠিত হলেও স্ত্রীকে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ তৈরি করে দেননি। নিয়মিত নির্যাতন করতেন। তারই ধারাবাহিকতায় গত ৫ জুলাই বুলবুলকে নৃশংসভাবে হত্যা করে শাহজাদা।

বাবা-মাকে নিয়ে মুগ্ধ জানায়, বাবা-মা বিদেশ যাওয়ার আগে তাকে ফুফুর বাড়িতে রেখে গেলে ফুফু নানা নানু, খালা-মামা কারো সঙ্গে কথা বলতে দিতো না। নানাবাড়ি আসার আগে ফুফু মুগ্ধকে জানায় তার বাবা তার মাকে হত্যা করেছে। অকালে মা হারিয়ে তাই বাবার সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি চাই মুগ্ধ।

এদিকে বুলবুলের বাবা মো. আনিস হাওলাদার (ফিটার) ও মা মমতাজ বেগম বলেন, শেষবারের মতো আমরা আমাদের মেয়েটারে দেখতে চাই। মেয়ের লাশ দেশে আনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা ও ঘাতক শাহজাদাসহ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সকলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তারা।

সাজেদার বোন উপমা ফারহানা অভিযোগ করেন, তাদের সংসারে মুগ্ধ নামের সাত বছরের কন্যাসন্তান রয়েছে। ঘাতক শাহজাদা তার স্ত্রীকে উচ্চতর পড়াশোনা করার প্রলোভন দেখিয়ে ২০১৬ সালের ৩ ডিসেম্বর মালেয়েশিয়ায় নিয়ে যান। সেখানে নিজে প্রতিষ্ঠিত হলেও তার স্ত্রীকে স্থায়ীভাবে বসবাস করার সুযোগ তৈরি করে দেননি।

তিনি জানান, নিয়মিত নির্যাতন করা হতো তার বোনের ওপর। একদিন শাহজাদার নির্যাতন সইতে না পেরে এক আত্মীয়ের বাসায় পালিয়ে যান সাজেদা।

সেখানে ২-৩ দিন থাকার পর শাহজাদা তার কাছে ক্ষমা চেয়ে পুনরায় তাকে নিজ ঘরে ফিরিয়ে আনেন। এর পরপরই নৃশংস খুনের শিকার হন সাজেদা। ঘাতক শাহজাদা নৃশংসভাবে খুনের পর সাজেদার মরদেহ একটা লাগেজে ভরে জঙ্গলে ফেলে দেন। সেখান থেকে মালয়েশিয়া পুলিশ লাগেজ ভর্তি মরদেহ উদ্ধার করে।

তিনি আরও জানান, আইনজীবী সাজেদা-ই-বুলবুলকে স্বামী শাহজাদা বিদেশে নিয়ে যাওয়ার আগে মেয়ে মুগ্ধকে বোন মোসা. শাহানা নাজনীন পারভিনের বাড়ি রেখে যায় এবং মুগ্ধকে বোনের বাসায় আটকে নির্যাতন চালায়।

পরে গত ১৭ জুলাই মির্জাগঞ্জ থানা পুলিশের সহযোগিতায় মোসা. শাহানা নাজনীন পারভিনের কাছ থেকে মুগ্ধকে নানাবাসায় বাসায় নিয়ে আসে বুলবুলের পরিবার।