প্রবাসী বাংলাদেশিদের সৌদিতে দুর্ঘটনার শিকার নিয়ে যত প্রশ্ন

জীবন-জীবিকার তাগিদে প্রতিবছর হাজার হাজার শ্রমিক পাড়ি দিচ্ছেন মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার সৌদি আরবে। ২০ লাখেরও বেশি প্রবাসী বাংলাদেশির এই বাজারে প্রতিনিয়ত অস্বাভাবিক মৃত্যু বেড়েই চলেছে। প্রতিমাসে গড়ে ৩০ থেকে ৩৫ জন প্রবাসী বাংলাদেশি নানান দুর্ঘটনার শিকার হয়ে প্রাণ হারাচ্ছেন। সবচেয়ে বেশি প্রাণ যাচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনায়। এছাড়া কর্মস্থলে দুর্ঘটনা কিংবা জঙ্গি হামলার মতো অস্বাভাবিক ঘটনায়ও মৃত্যু হচ্ছে।

জানা গেছে, সৌদি আরবে প্রতিদিনই সড়ক দুর্ঘটনায় গড়ে নিহত হয় ১৫ জন। এর মধ্যে প্রবাসী বাংলাদেশিও রয়েছেন। দেশটি সড়ক দুর্ঘটনা রোধে নানান উদ্যোগ নিলেও তা খুব একটা কার্যকর হচ্ছে না। সর্বশেষ গত ৮ জুলাই সৌদিতে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় পাঁচ বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ১১ বাংলাদেশি। বাংলাদেশি শ্রমিকদের বহনকারী একটি মিনিবাস চাকা ফেটে নিয়ন্ত্রণ হারালে ওই দুর্ঘটনা ঘটে। ওই দুর্ঘটনায় আহত শ্রমিকদের কয়েকজন এখনো জেদ্দার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

সড়ক দুর্ঘটনার পাশাপাশি কল-কারখানায় দুর্ঘটনার ফলে মৃত্যু হচ্ছে প্রবাসীদের। কারখানার বয়লার বা সিলিন্ডার বিস্ফোরণেও মৃত্যুর সংখ্যা কম নয়। সৌদি আরবের হাইল জেলার হোলাইফা শহরে গত এপ্রিলে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে সাত বাংলাদেশি প্রাণ হারিয়েছেন। এদিকে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে জঙ্গি হামলা বেড়ে চলেছে।

সৌদির সংগে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীগোষ্ঠীর যুদ্ধ চলছে। দুই দেশই একে অন্যের বিরুদ্ধে হামলা অব্যাহত রেখেছে। এই হামলার বলী হচ্ছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরাও। গত ৮ জুলাই সৌদি আরবের কাসিম প্রদেশের বুরাইদহ এলাকার একটি চেক পয়েন্টে জঙ্গি হামলা হয়। ওই হামলায় সৌদি আরবের এক নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য ও এক বাংলাদেশি নিহত হন।

সৌদিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অস্বাভাবিক মৃত্যুর কারণ জানতে চাইলে আসির প্রদেশের খামিশ মুশাইত এলাকায় বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশি শহিদুল ইসলাম বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশিদের অস্বাভাবিক মৃত্যুর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রাণ যাচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনায়। এর একটিই কারণ অসর্তকতা। কারণ সৌদিতে দ্রুতগতিতে গাড়ি চলাচল করে। একটু অসর্তক হয়ে চললেই দুর্ঘটনা ঘটে।

শহিদুল ইসলাম আরো বলেন, বর্তমানে সৌদি আরবে নানান সংকটে বিপাকে রয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। সৌদি সরকারের যে কোনো নিয়মের বেড়াজালে আটকে যেতে পারেন এমন শঙ্কা নিয়ে প্রবাসীরা চলাফেরা করেন। এ কারণেও অতিরিক্ত মানসিক চাপ বাড়ছে প্রবাসীদের। এছাড়া হিট-স্ট্রোকেও মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।

একই কথা জানান মক্কাপ্রবাসী সাংবাদিক খলিল চৌধুরীও। তিনি বলেন, অসাবধানতা ও অসর্তকতা বাংলাদেশিদের প্রাণনাশের অন্যতম কারণ। কর্মক্ষেত্রে, রাস্তা পারাপারে কিংবা পরিবহন সুবিধা নিতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রবাসীরা অস্বাভাবিক দুর্ঘটনার শিকার হন। একটু সচেতন হলেই যা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

উল্লেখ্য, সৌদি আরবে প্রতিবছর প্রায় চারশ’র বেশি বাংলাদেশি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার কারণে মৃত্যুবরণ করছেন। এসব মৃত্যু ঠেকাতে সৌদি সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও তা যথাযথ কার্যকর হয়নি। উল্টো এ ধরনের ঘটনা বেড়েই চলেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিজে থেকে সচেতন না হলে এ ধরনের মৃত্যু ঠেকানো কোনোভাবেই সম্ভব নয়।