যৌন হয়রানির অভিযোগে হলিউডের প্রভাবশালী প্রযোজক হার্ভি ওয়াইনস্টিনের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন অভিনেত্রী অ্যাশলে জাড। এর জের ধরে এখন আটক আছেন হার্ভি। আদালতে মামলার শুনানিতে তাঁর আইনজীবীদের দাবি, যৌন হয়রানির কোনো ঘটনা ঘটেনি। একাডেমি অ্যাওয়ার্ড বা অস্কার পেলে অ্যাশলেকে স্পর্শ করতে পারবেন হার্ভি—এমন চুক্তি করেছিলেন এ অভিনেত্রী।
বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়েছে, হার্ভির বিরুদ্ধে করা মামলায় অ্যাশলে জাড অভিযোগ করেছিলেন যে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ‘লর্ড অব দ্য রিংস’ নামের চলচ্চিত্র থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। ৫০ বছর বয়সী এই হলিউড অভিনেত্রীর অভিযোগ, ‘লর্ড অব দ্য রিংস’ থেকে তাঁকে বাদ দিতে পরিচালক পিটার জ্যাকসনকে বাধ্য করেছিলেন হার্ভি। প্রভাব খাটিয়ে এ কাজ করেছিলেন তিনি।
গত মঙ্গলবার লস অ্যাঞ্জেলেস আদালতে জাডের করা মামলার শুনানি হয়। শুনানিতে অংশ নিয়ে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের সময় হার্ভি ওয়াইনস্টিনের আইনজীবীরা বলেন, হার্ভির সঙ্গে যৌনতার চুক্তি করেছিলেন অ্যাশলে। হার্ভির প্রযোজনায় কিছু চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি। চুক্তির বিষয় ছিল, এসব চলচ্চিত্রে অভিনয় করে অস্কার পুরস্কার পেলে হার্ভি অ্যাশলেকে স্পর্শ করতে পারবেন।
ওয়াইনস্টিনের আইনজীবীরা আরও দাবি করেন, এ চুক্তির পর থেকে তাঁদের মক্কেল ‘যত বেশি সম্ভব চলচ্চিত্রে’ অ্যাশলে জাডকে সুযোগ দেওয়ার চেষ্টা করতে থাকেন। এই চুক্তির পরিপ্রেক্ষিতেই ‘গুড উইল হান্টিং’ ছবিতেও অ্যাশলে জাডকে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল।
অ্যাশলে জাডের করা মামলা খারিজের আবেদন জানিয়ে হার্ভির আইনজীবীরা আদালতকে বলেন, হলিউডের এই প্রযোজক অ্যাশলের ক্যারিয়ারে উন্নতি আনতে এ কাজ করেছিলেন। অভিনেত্রীর ক্যারিয়ার ধ্বংস করার উদ্দেশ্য তাঁর ছিল না।
ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির অপরাধে অভিযুক্ত হার্ভি ওয়াইনস্টিন ২৫ মে নিউইয়র্কে আত্মসমর্পণ করেন। বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, হার্ভির বিরুদ্ধে কয়েক ডজন নারী ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির অভিযোগ দায়ের করেছেন। ৬৬ বছর বয়সী এই প্রযোজক বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছেন। তাঁর বক্তব্য, জোর করে কিছুই করেননি তিনি।
হার্ভির আইনজীবীদের দেওয়া বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় অ্যাশলে জাডের মুখপাত্র বলেছেন, অভিযোগ থেকে রেহাই পাওয়ার জন্যই এসব ভিত্তিহীন কথা বলা হচ্ছে। এসব বক্তব্য শুধু ভিত্তিহীন নয়, আক্রমণাত্মকও বটে। যৌনতার প্রস্তাবে সাড়া না দেওয়ায় জাডের ক্যারিয়ারকে ক্ষতিগ্রস্ত করার দাবিও তুলেছেন এই মুখপাত্র।
প্রভাবশালী প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান দ্য ওয়াইনস্টিন কোম্পানির প্রধান ছিলেন হার্ভি। মিরাম্যাক্স ফিল্মসের প্রতিষ্ঠাতাও ছিলেন তিনি। যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠায় তাঁকে এসব প্রতিষ্ঠানের পদ থেকে সরে যেতে হয়েছে। অস্কারের সদস্যপদ থেকেও বহিষ্কার করা হয় তাঁকে।
অন্যদিকে ‘লর্ড অব দ্য রিংস’ ছবির পরিচালক পিটার জ্যাকসন বলেছেন, ওয়াইনস্টিনের বিরুদ্ধে যৌন অসদাচরণের অভিযোগ বিষয়ে তিনি তেমন কিছু জানেন না। তবে এই প্রযোজক যে অ্যাশলে জাডকে ছবিতে না নিতে চাপ প্রয়োগ করেছিলেন, সেটি স্বীকার করেছেন পিটার।
হার্ভির বিরুদ্ধে অভিযোগের সবচেয়ে বড় বিস্ফোরণ ঘটে যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী শুরু হওয়া সামাজিক আন্দোলনের পর। ওই সময় #মিটু দিয়ে নারীরা নিজেদের যৌন হয়রানির ঘটনাগুলো প্রকাশ করতে থাকেন। এতে যুক্ত হন হলিউডের নামীদামি তারকারাও। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই হার্ভির মতো প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মুখ খোলেন।