দেশের শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরের জন্মদিন আজ (৩১ জানুয়ারি)। আজকের কুয়াশাভেজা সকালে ৪৩ বছরে পা রাখলেন তিনি। একাধারে তিনি বহুমাত্রিক শিল্পের প্রবক্তা, সফল উদ্যোক্তা, নতুন প্রজন্মের কাছে অনুকরণীয়। এরই মধ্যে শিল্প খাতের টাইটান হিসেবে খ্যাতি কুড়িয়েছেন। স্বপ্নপূরণের নেশা যাঁকে তাড়িয়ে বেড়ায়, লক্ষ্যে যিনি অবিচল, প্রতিটি নতুন দিন যাঁকে নতুন স্বপ্নে বিভোর করে।
বিশেষ দিনটি স্মরণীয় করে রাখতে বিশেষ আয়োজন হাতে নিয়েছেন বসুন্ধরা এমডি। তবে চাকচিক্যে মোড়ানো আলোক ঝলকানো উৎসব নয়, বরং লাখো এতিম শিশুর মুখে সুস্বাদু খাবার তুলে দিয়ে নিজের জন্মদিন পালন করছেন তিনি। শুধু তা-ই নয়, দেশের আনাচকানাচে অবহেলিত শতাধিক দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীকে নগদ বৃত্তি দিচ্ছেন নিজ হাতে।
১৯৮১ সালের ৩১ জানুয়ারি এক উত্তাল সময়ে পৃথিবীর আলো দেখেন সায়েম সোবহান আনভীর। সেই ছোট্ট শিশুটিই আজকে দেশের শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠীর অন্যতম কর্ণধার।
দেশ ও মানুষের কল্যাণ সাধনে নিয়োজিত বসুন্ধরা গ্রুপকে সম্ভাবনার দুর্গম গন্তব্যে পৌঁছে দিতে তাঁর নিরলস প্রচেষ্টা উজ্জীবিত করে নতুন প্রজন্মকে। তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করে সৃষ্টি লাখো তরুণ উদ্যোক্তার।
শিক্ষাজীবনের শুরু বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজশায়ারের অন্তর্গত এলির কিংস স্কুলে। পরবর্তীতে ২০০১ সালে তিনি লন্ডনের আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। স্নাতক শেষ করে দেশে ফেরার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর ওপর অর্পিত হয় গুরুদায়িত্ব।
দিনটি ছিল ২০০১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর। সেদিন বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে অভিষেক তাঁর।
বসুন্ধরা গ্রুপের বটবৃক্ষ আহমেদ আকবর সোবহান এই ছেলেটির চোখেই খুঁজে পেয়েছিলেন ভবিষ্যতের স্বপ্নদ্রষ্টাকে। সেই থেকে অদ্যাবধি পিতার আস্থা, বিশ্বাস ও ভরসার পূর্ণ প্রতিদান দিয়ে যাচ্ছেন সায়েম সোবহান আনভীর।
বয়স কম হলেও দূরদৃষ্টি ও তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমত্তা দিয়ে এগিয়ে নিয়েছেন বসুন্ধরা গ্রুপকে। তারুণ্যশক্তি ও মেধার সমন্বয় ঘটিয়ে নিজের ক্যারিশমাটিক বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিতে শুরু করেন। তাঁর দক্ষতা ও নেতৃত্বগুণে বসুন্ধরা গ্রুপ দেশের ২০টি শিল্প খাত নিয়ে কাজ করে আজ বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্প পরিবারে পরিণত হয়েছে।
শুরু থেকেই তিনি ব্যবসার পরিধি বাড়িয়ে বহুমাত্রিক উদ্যোক্তার পরিচয় দিয়ে আসছেন। প্রতিনিয়ত ছুটে চলেছেন নতুন নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে। তাতে প্রতিদিন তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন কর্মসংস্থান। উপকৃত হচ্ছেন লাখ লাখ মানুষ। তিনি এরই মধ্যে সমাদৃত হয়ে উঠেছেন তাঁর সুপ্ত প্রতিভা দিয়ে। তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে গেছে দেশের পরিসীমা ছাড়িয়ে দূর-দিগন্তে।
দায়িত্বভার গ্রহণের পর দেখতে দেখতে কেটে গেছে দুই দশকের অধিক সময়। এই গুণী শিল্পোদ্যোক্তার নতুন কিছু করার নেশা আজও চলমান। তাতে প্রতিদিনই যেন নতুন করে বিকশিত হচ্ছে বসুন্ধরা গ্রুপ।
সায়েম সোবহান আনভীরের একাগ্র ও স্থির নেতৃত্বের মাধ্যমে বসুন্ধরা শিল্প গ্রুপটি অবদান রেখে চলেছে সিমেন্ট, পেপার ও পাল্প, বিভিন্ন ধরনের টিস্যু, স্টিল, এলপি গ্যাস, খাদ্য ও পানীয়, নিত্যপণ্য, শিপিং, জাহাজ নির্মাণ, ড্রেজিং, ট্রেডিং কম্পানি, বিটুমিন ও জুয়েলারি খাতে।
নতুন নতুন ব্যাবসায়িক ক্ষেত্র উদ্ভাবন ও নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নে সায়েম সোবহান আনভীর একজন অগ্রগামী। দেশের ইতিহাসে প্রথম বেসরকারি খাতে গোল্ড রিফাইনারি স্থাপনের উদ্যোক্তা।
সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে তিনি স্থাপন করতে যাচ্ছেন এশিয়ার বৃহত্তম স্বর্ণ কারখানা বসুন্ধরা গোল্ড রিফাইনারি লিমিটেড। বাংলাদেশে উৎপাদিত সোনার গহনা এবং বার বিশ্ববাজারে রপ্তানির এই স্বপ্নদ্রষ্টা দেখেছেন বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম গোল্ড ব্যাংকের স্বপ্ন।
অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং আত্মনির্ভরশীল জাতি গঠনের লক্ষ্যে নিজেকে যেন উৎসর্গ করে দিয়েছেন এই তরুণ শিল্পোদ্যোক্তা। শিল্প জগতের এই উজ্জ্বল নক্ষত্র সক্রিয়ভাবে যুক্ত রয়েছেন দেশীয় বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের সঙ্গে।
তিনি বাংলাদেশ জুয়েলারি অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (ডিসিসিআই), মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এমসিসিআই) এবং সার্ক চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সক্রিয় সদস্য।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং আত্মনির্ভরশীল জাতি গঠনের স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে থাকা সায়েম সোবহান আনভীর একজন ক্রীড়াপ্রেমী হিসেবেও বেশ জনপ্রিয়। ধুঁকতে থাকা ফুটবলকে চাঙ্গা করতে নিরলস ভূমিকা রাখছেন তিনি। শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র লিমিটেডের চেয়ারম্যান হিসেবে তাঁকে দায়িত্ব দেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তাঁর আরেকটি দুর্দান্ত সংযোজন হলো নির্মাণাধীন বসুন্ধরা স্পোর্টস কমপ্লেক্স। প্রায় ৫০ একর জায়গাজুড়ে স্পোর্টস কমপ্লেক্সটি হবে বিশ্বমানের আধুনিক সকল সুবিধাসম্পন্ন। এ ছাড়া এই কমপ্লেক্সটি বসুন্ধরা গ্রুপের পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত ফুটবল ক্লাব ‘বসুন্ধরা কিংস’-এর হোমগ্রাউন্ড হিসেবেও ব্যবহৃত হবে। তিনি ক্লাবটির প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
শুধু ব্যবসার হিসাব-নিকাশের গণ্ডিতে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেননি সায়েম সোবহান আনভীর। দানশীল মানুষটি মানুষের সেবায় সব সময় কাজ করে যাচ্ছেন। শুধু অর্থ দিয়েই ক্ষান্ত নন, নিজের মূল্যবান সময় এবং সৃজনশীলতা বিনিয়োগ করছেন সমাজের টেকসই পরিবর্তনে।
বছরজুড়ে প্রতিটি শুক্রবার নিজের তত্ত্বাবধায়নে নগরীর প্রায় পাঁচ হাজার অসহায় মানুষের মাঝে খাবার বিতরণ করা হয় তাঁর উদ্যোগে। এ ছাড়া প্রতিবছর তাঁর নির্দেশনায় পুরো রমজান মাসজুড়ে চলে দুই লক্ষ রোজাদারকে ইফতার করানোর এক মহাকর্মযজ্ঞ। শুধু তা-ই নয়, ২০২২ সালে সামর্থ্যহীন ২৬ মুসল্লির ওমরাহ হজের সকল খরচ তিনি বহন করেছেন, যা এখনো চলমান।
সায়েম সোবহান আনভীর বসুন্ধরা টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের (বিটিআই) একজন পৃষ্ঠপোষক হিসেবে সুবিধাবঞ্চিত যুবকদের বৃত্তিমূলক শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থাও করেছেন। এ ছাড়া তিনি বসুন্ধরা স্পেশাল চিলড্রেন ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের সমাজের মূলধারায় একীভূত হতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছেন। এই প্রতিষ্ঠানে শিশুদের জন্য রয়েছে বিশেষ শিক্ষা কার্যক্রম এবং হোস্টেল সুবিধা।
দেশের অর্থনীতিতে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সায়েম সোবহান আনভীরকে সরকার ২০১৬ সালে বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির অর্থাৎ সিআইপির মর্যাদা দেয়। বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ব্যাবসায়িক সম্পর্ক সুসংহত করার ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য ২০১১ সালে মার্কিন কংগ্রেসের স্বীকৃতি অর্জন করেন।
দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখার পাশাপাশি ক্রীড়া, স্বাস্থ্য-চিকিৎসা, সমাজসেবা ও গণমাধ্যমে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ভারতের মর্যাদাপূর্ণ দাদা সাহেব ফালকে এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড-২০১৭-এ ভূষিত হন তিনি।
এ ছাড়া ২০২২ সালের এপ্রিলে ‘পারসন অব দ্য ইয়ার’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত করা হয় সায়েম সোবহান আনভীরকে। গ্রেটেস্ট ব্র্যান্ড অ্যান্ড লিডার্স ২০২১-২২ এশিয়া-আমেরিকা-আফ্রিকা অ্যাওয়ার্ড প্রগ্রামে তাঁকে এ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।
একই বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ভারতের কলকাতায় এক অনুষ্ঠানে বসুন্ধরা এমডিকে ‘সেন্ট মাদার তেরেসা আন্তর্জাতিক অ্যাওয়ার্ড’ পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়। বাংলাদেশে মিডিয়া জগতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তাঁকে ওই পুরস্কার দেওয়া হয়।
দেশের এই কৃতি সন্তান বিশ্বাস করেন, তরুণরা যেকোনো জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ। তাই সামাজিক পরিচয়ের বিবেচনা না করে সর্বস্তরের তরুণদের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিতে সমান সুযোগ প্রদানের লক্ষ্য কাজ করে যাবেন তিনি। আভিজাত্য আর প্রতিপত্তির লোভ নয়, শিল্প খাতের টাইটান খ্যাত সায়েম সোবহান আনভীরের মূলমন্ত্র একটাই, ‘বসুন্ধরা গ্রুপ : দেশ ও মানুষের কল্যাণে’। আর এই মূলমন্ত্রকে বাস্তবে রূপ দিতে নিরলস কাজ করতে দেশের কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছেন তিনি।