হুমায়ূন আহমেদ। অসম্ভব রকমের জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ও চলচ্চিত্রকার। কিন্তু সবাই বলেন তিনি গল্পের জাদুকর। তার লেখায় তিনি এমন যাদু ছড়িয়েছেন যে, এখনও সেই যাদুমন্ত্রে বিহ্বল পাঠক। উপন্যাস, গান, সিনেমা- যেখানেই হাত দিয়েছেন, কথা-ছন্দ-দৃশ্যের জাদুতে একখানে হয়ে গেছেন দেশের পাঠক ও শ্রোতা-দর্শক।
আজ তার মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯ জুলাই ২০১২ সালে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুবরণ করেন হুমায়ূন আহমেদ। তার মরদেহ দেশে আনা হলে, বিষন্ন হয়ে গিয়েছিল প্রকৃতিও। পুরোটা দিন বৃষ্টি হয়েছিল। তবে কোন বাধাই তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বিরত রাখতে পারেনি ভক্ত ও সাধারণ মানুষদের। সব শ্রেণীর, সব বয়সের মানুষেরা সেদিন দাড়িয়েছিল শ্রদ্ধা জানানোর কাতারে।
১৯৪৮ সালে জন্ম নেওয়া হুমায়ূন বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেই লেখালেখি শুরু করেন। লেখা দিয়ে সাহিত্য সমালোচকদের মনোযোগ আকর্ষণ করেন তিনি। নন্দিত নরকে তার প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস। এরপর শঙ্খনীল কারাগার, রজনী, এপিটাফ, পাখি আমার একলা পাখি, ফেরা, নিষাদ, দারুচিনি দ্বীপ, নির্বাসন, অমানুষ, রূপালী দ্বীপ, শুভ্র, দূরে কোথাও, মন্দ্রসপ্তক, বাদশাহ নামদার, সাজঘর, বাসর, নৃপতির মতো পাঠক হৃদয় জয় করা উপন্যাস আসে তার লেখনীতে।
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তিনি লিখেছেন ‘জোৎস্না ও জননীর গল্প’, ‘১৯৭, ‘সূর্যের দিনের মতো’ উপন্যাস। হুমায়ূনসৃষ্ট মিসির আলী ও হিমু হয়ে উঠে পাঠকদের প্রিয় চরিত্র। ‘অনন্ত নক্ষত্র বীথি’, ‘ইরিনা’র মতো কয়েকটি কল্পবিজ্ঞান কাহিনীও লিখেছেন তিনি।
৮০ এর দশকে বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত ‘এইসব দিনরাত্রি’ দিয়ে জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছে যান তিনি। এরপর বহুব্রীহি, অয়োময়, কোথাও কেউ নেই, নক্ষত্রের রাতের মতো জনপ্রিয় নাটকও আসে তার হাত দিয়ে। নাটক লেখার এক পর্যায়ে নির্দেশনায়ও নামেন হুমায়ূন। নাটক নির্দেশনায় হাত পাকিয়ে নামেন চলচ্চিত্র পরিচালনায়। আগুনের পরশমনি দিয়ে শুরু করে শ্রাবণ মেঘের দিন, দুই দুয়ারী, চন্দ্রকথা, শ্যামলছায়ার মতো চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন তিনি। তার পরিচালিত সর্বশেষ চলচ্চিত্র ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ও মানুষের কাছে বেশ প্রশংসা কুড়ায়।
** মৃত্যুদিনে হুমায়ূনকে স্মরণ করবেন নেত্রকোনাবাসী **
নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে জননন্দিত কথাশিল্পী, নাট্যকার ও চলচ্চিত্র নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের ৬ষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হবে তার হাতে গড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠে। এই দিনে কোরান খতম, মিলাদ, দোয়া মাহফিল, শোভাযাত্রা, আলোচনা-সভার আয়োজন করেছে শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ কর্তৃপক্ষ।
** গাজীপুরে নুহাশ পল্লীতেও থাকবে মৃত্যুদিনের আয়োজন **
হুমায়ূন আহমেদের নিজের হাতে গড়া নুহাশপল্লীতেও কোরআন খানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। নুহাশপল্লীর আশপাশের মাদরাসা ও এতিমখানার ছাত্র, পরিবারের সদস্য এবং হুমায়ূন আহমেদের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন লেখকসহ প্রায় ৬০০ জনকে এ মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। নুহাশপল্লীতে হুমায়ূন আহমেদের দুই সন্তান নিষাদ ও নিনিতসহ স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন সকাল থেকে সেখানে উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে।