জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা ও পরিবেশনা বিদ্যা বিভাগের শিক্ষক রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে একই বিভাগের একাধিক শিক্ষিকার সাথে যৌন হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ আমলে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সাময়িক ভাবে বহিষ্কার করেন রুহুল আমিনকে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ে চাপা আতঙ্ক বিরাজ করছে।
নিপীড়নের শিকার বিভাগীয় প্রধান ইসমত আরা ভূঁইয়া ইলাসহ বিভাগের অপর দুই নারী শিক্ষক নীলা সাহা ও নুসরাত শারমিন এক অভিযোগ পত্রের মাধ্যমে উপাচার্যকে অবহিত করেন এবং এর বিচার দাবি করেন।
সেই অভিযোগপত্রকে আমলে নিয়ে উপাচার্য প্রফেসর ড. এ এইচ এম মোস্তাফিজুর আজ (১৮ জুলাই) সকালে শিক্ষকদের সাথে আলোচনায় বসেন। তারপর প্রশাসনিক ভাবে অভিযুক্ত শিক্ষক রুহুল আমিনকে সাময়িক বহষ্কার ও দায়িত্বে অবহেলার জন্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর ড. জাহিদুল কবীরকে প্রক্টর এর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উপাচার্য দপ্তরে এক বিশৃঙ্খল পরিবেশের সৃষ্টি হয়। ইসমত আরা ভূঁইয়া ইলা ও একাধিক নারী শিক্ষকসহ শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ সে সময় উপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষক রুহুল আমিন দীর্ঘ ৪ বছর ধরেই যৌন উত্তেজনা মূলক ব্যবহার করে আসছিলেন অপর শিক্ষক ইসমত আরা ভূঁইয়া ইলার সাথে। শরীরে হাত দেয়া, চোখে ইশারা দেয়া, চুলে হাত দেয়া এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকেও যৌন ইঙ্গিত মূলক বার্তা দিয়েছিলেন।
‘এতদিন ভয়ে চুপ ছিলাম, এখন তা ধৈর্যের বাইরে চলে গেছে, তাই তা প্রকাশ করতে বাধ্য হয়েছি’- এমনটাই জানিয়েছেন নাট্যকলা বিভাগের নারী শিক্ষক ইসমত আরা ভূঁইয়া ইলা।
তিনি আরো বলেন, কেবল আমি নই, অপর নারী শিক্ষিকা নুসরাত শারমিন তানিয়া বিভাগে শাড়ি পরে আসলে শিক্ষক রুহুল আমিন যৌন উত্তেজনামূলক ক্রিয়া ভঙ্গি করেন বলে জানিয়েছেন। শুধু নারী শিক্ষক নয়, ছাত্রীদের সাথেও এমন আচরণ করেন রুহুল আমিন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক রুহুল আমিন বলেন, ‘আমি চুলে হাত দিয়েছি ফান করে, উনি সিরিয়াসলি নিবেন তা ভাবিনি। তবে হঠাৎ করে এই অভিযোগ তোলা পরিকল্পিত। সম্প্রতি স্নাতকোত্তর শেষ বর্ষের ফলাফল নিয়ে ইলার সাথে বিষয়টা নিয়ে কথা হয়। যেখানে আমি শিক্ষার্থীদের পক্ষ নিই। তাই এখন তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে আমার ইমেজ নষ্ট করার জন্যে এই কাজ করছেন।’
নিপীড়নের ঘটনার সত্যতা প্রামানের জন্য কিছু অডিও রেকর্ড সংরক্ষB করেছর। যেখানে রুহুল আমিনকে উত্যক্ত করার অভিযোগ স্বীকার করে ক্ষমা চাইতে দেখা গেছে। কিন্তু তা স্বীকার করাতেও ছিলো অন্যরকম ভাষা, যেখানে রুহুল আমিন নারী শিক্ষক ইসমত আরাকে উদ্দেশ্য করে বলছিলেন, ‘তোমাকে আমার ভালো লাগে, অনেক দিন আগেই তোমার প্রেমে পড়ে গেছি, দিনকে দিন তা বেড়েই চলছে।’ চুলে হাত দেয়া, চোখ কাটার কথা অনায়াসেই স্বীকার করছেন। এমনকি এটা তার অভ্যাস তাও অনায়াসেই স্বীকার করতে শোনা গেছে সংরক্ষিত রেকর্ডে।
শিক্ষক রুহুল আমিনকে বলতে শোনা গেছে, সেক্সচুয়াল বিষয়ে ওপেন ভালো লাগা থাকতেই পারে। আর সে বিষয়ে ইসমত আরা ভূঁইয়া ইলাকে বলেন, তুমিও রাজকন্যা নও আমিও রাজপুত্র নই, কলিগ। মজা করেছি, যা আপনি নিতে পারেননি।
বিষয়টি যখন ক্যম্পাসে জানাজানি হতে শুরু করলো তখন রুহুল আমিন তার স্ত্রীকে নিয়ে দেখা করেন নিপীড়নের স্বীকার ইসমত আরা ইলার সাথে। যেখানে তার স্ত্রীকে বলতে দেখা গেছে এটা তার অভ্যাস। আমি আপনার ছোট বোন হিসেবে এসেছি, বিষয়টা বাদ দিন। এর উত্তরে ইসমত আরা বলেন, অনেকবার বলেছি, সংশোধন হয়নি। কেন এরপরেও তো রুহুল ভাই আমায় বলেছে, তিনি নাকি আমার প্রেমে পড়েছেন তাই এমন করেন (চুলে হাত, চোখ টিপি, ফেসবুকে উত্তেজক লেখা)। এটাকে প্রেম বলে না, হ্যারেজমেন্ট বলে। তা জানেন না রুহুল ভাই।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষক রুহুল আমিন এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের আলোচনার শীর্ষে। তবে এটাই প্রথম নয়। এর আগেও বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশেই ছাত্রাবাস নির্মাণ, জমি ক্রয়সহ প্রাইভেট গাড়ি কিনে আলোচনায় আসেন তিনি।
উল্লেখ্য, নিপীড়নের ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিক্ষক রুহুল আমিনকে বহিষ্কার (সাময়িক) ও প্রক্টরকে অব্যাহতি প্রদানের কারণে ক্যম্পাসে উত্তেজনা সৃষ্টি হতে পারে বলে জানা গেছে।–পিবিডি