নতুন বছরের শুরুতেই প্রবাসীদের উৎকণ্ঠা। মালয়েশিয়ায় অবৈধ শ্রমিকদের স্বদেশে ফেরতের সময় শেষ। ধরা পড়লে জেল জরিমানা। এর ফলে অবৈধদের মাঝে বিরাজ করছে আতঙ্ক। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বেধে দিয়েছিল মালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার মালয়েশিয়ার পুত্রাযায়া ইমিগ্রেশন অফিসের সামনে দেখা গেছে- ট্রাভেল পাস নিতে বাংলাদেশিদের দীর্ঘ লাইন। কেউ পেয়েছেন আবার কেউ কেউ খালি হাতে ফিরে গেছেন। নরসিংদীর কালাম মালয়েশিয়ায় সাত বছর ধরে রয়েছেন। গত ৬ পির সময় বাংলাদেশি এক এজেন্টের কাছে টাকা পাসপোর্ট দিয়েছিলেন পারমিট করার জন্য। কিন্তু পারমিটতো দূরের কথা টাকা/পাসপোর্ট দুটোই গেলো তার। শুধু কালাম নয় শত শত বাংলাদেশি এমন প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
এ সুযোগে অবৈধ শ্রমিকদের বৈধ করার প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারক চক্র হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। অবশ্য এরইমধ্যে প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নিতে এবং জড়িতদের পাকড়াও করতে কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
গত এক সপ্তাহ কুয়ালালামপুরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ডেডলাইন ৩১ ডিসেম্বর সামনে রেখে চলছিল অবৈধ শ্রমিক বৈধকরণের ঘোষণা সম্বলিত নানা রঙ, বে-রঙের পোস্টারের ছড়াছড়ি অলিতে-গলিতে। বাংলাদেশি অধ্যুষিত জহুর বারু, পেনাং, মালাক্কা, ক্যামেরুন হাইল্যান্ড, পোর্ট ক্লাং, ক্লাং মেরু, শাহ আলম,ইপু,পেরাক এই ধরনের লোভনীয় পোস্টারের দেখা মিলছে।
মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিভাগ অবৈধদের দেশে ফিরতে শেষ বারের মতো সময় বেধে দিলেও তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে বৈধকরণের কথা বলে অর্থ হাতিয়ে নিতে চক্রগুলো প্রচারণায় এখনও ব্যস্ত রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, ৬পির ভিসার সময়সীমা ছিল তিন বছর। গত বছর আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে মেয়াদ এক বছর বাড়ানো হয়। এরপর সরকারিভাবে কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি।
এর মধ্যে মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিভাগ অবৈধদের স্বদেশে ফেরত যেতে ৩১ ডিসেম্বর শেষ সময় বেধে দেয়। মালয় সরকারের এ সিদ্ধান্তের কারণে অবৈধ শ্রমিকরা পড়েছেন বেকায়দায়। তাদের এ দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে অর্থ উপার্জনে গজে উঠেছে বিভিন্ন এজেন্ট এবং প্রতারক চক্র। তারা মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে শ্রমিকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। এসব চক্র যেমন অবৈধ শ্রমিকদের বৈধ করার কথা বলছে, তেমনি মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া শ্রমিকদের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য টাকা জমা দেয়ারও কথা বলছে। পোস্টার-লিফলেট ছাপিয়ে প্রচারণা চালিয়েছে।
স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কয়েক মাস আগেও ইমিগ্রেশন পুলিশ প্রতারণার ব্যাপারে সাবধান করে দেয়। এতেও প্রতারকদের তৎপরতা বন্ধ হয়নি। মালয়েশিয়ার সংবাদ সংস্থা বারনামার একজন সংবাদ কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত কয়েক বছরে এমন প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে কয়েকশ বাংলাদেশি কোটিপতি হয়েছেন। পুলিশের কাছে এ সংক্রান্ত প্রায় ১০টি মামলা জমা পড়েছে। প্রতারকরা প্রতি শ্রমিকের কাছ থেকে চার হাজার থেকে ৯ হাজার রিংগিত পর্যন্ত হাতিয়ে নিয়েছে।
এদিকে, প্রতারণার খবরে উদ্বিগ্ন হয়ে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জাহিদ হামিদি প্রতারকদের পাকড়াও করার নির্দেশ দিয়েছেন। ২০ ডিসেম্বর ইমিগ্রেশন দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ৯৫ শতাংশ অভিবাসী বৈধভাবেই কাজ করতে আসে এবং করতে চায়। তবে তাদের মাঝে কিছু শ্রমিক এজেন্টে রূপান্তরিত হয়েছে, যারা প্রতারণা করছে। পুলিশকে প্রতারক এজেন্ট ও সিন্ডিকেটদের গ্রেফতারে নজর দেয়ার কথা বলেছেন দেশটির উপ-প্রধানমন্ত্রী ও স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী জাহিদ হামিদি।
প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী, বৈধ কাগজপত্র ছাড়া মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত শ্রমিকদের সময় ৩১ ডিসেম্বরে শেষ হয়েছে। বিধি লঙ্ঘনকারী কেউ গ্রেফতার হলে তার সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার রিংগিত জরিমানা এবং পাঁচ বছর কারাদণ্ডের বিধান করা হয়।