জীবিকার টানে এখন বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার নারী যায় বিদেশে। আর তার বেশি সংখ্যকই পাওয়া যাবে মধ্য প্রাচ্যে। সৌদি আরবেও অসংখ্য বাংলাদেশি নারী প্রবাসির দেখা মেলে। তবে সেখানে তারা এমনও কিছু কাজ করতে হয় যা তাদের জীবনেরও ঝুকি থাকে। আবার অনেক সময় নির্যাতনের মাঝেও কাওকে কাছেও পাওয়া যায় না সেখানে।
সৌদি নিয়ে গিয়ে তাকে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ভাগ্য ফেরাতে সৌদি আরব যাওয়া কল্পনা বিশ্বাস (ছদ্মনাম)। কল্পনার অভিযোগ, ‘আলসামি সার্ভিস ইন্টার ন্যাশনালের’ মাধ্যমে সৌদি আরব যান তিনি। সেখানে যাওয়ার পর তাকে বিক্রি করে দেওয়া হয়।
কল্পনা জানান, হানিফ চৌধুরী ও জহিরের মাধ্যমে গত ১ জুন রাতে সৌদি আরব যান তিনি। সেখানে হোসাইন নামের এক লোক তাকে বাসায় নিয়ে যান। বাসায় নিয়ে যাওয়ার পর তৃতীয় দিন থেকে কল্পনাকে খারাপ প্রস্তাব দিতে থাকেন হোসাইন। এ সময় তার প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় কল্পনাকে প্রতিনিয়ত মারধর করতে থাকে হোসাইন। খাবারও বন্ধ করে দেয়। ১৬ জুন পর্যন্ত এভাবে চলে। এরপর ১৬ জুন, চাবুকের মেরে অজ্ঞান করে ওই বাড়ির তৃতীয় তালায় একটা রুমে নিয়ে আটকে রাখা হয় কল্পনাকে। সেখানে আরও ১৬ জন বাংলাদেশি নারী ছিল।
ওইখানে বসে বাংলাদেশে স্বামী সুশান্ত সরকারকে ফোন করে কল্পনা। তখন তাকে তার স্বামী, যেভাবে হোক ওইখান থেকে পালিয়ে পুলিশের সহায়তা নিয়ে দেশে ফেরার কথা বলে। এরপর একইদিন রাতে কল্পনাও ওই ১৬ নারী চিৎকার শুরু করলে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
কল্পনা বলেন, ‘১৯ জুন বিকেল ৩টার দিকে সৌদি আরবের থানা থেকে হোসাইন আমাকে ছাড়িয়ে রিয়াদে আবু মোহাম্মাদের বাসায় দেওয়ার কথা বলে রিয়াদের বিমানে উঠিয়ে দেন। সেখানে বাংলাদেশি শাহজাহান নামের এক লোক তাকে বিমানবন্দর থেকে নিয়ে যায়। তার কাছ থেকে আবু আবদুল্লাহ রিয়াদ ও তার স্ত্রী আরবি নামের দুজন এসে বাংলাদেশের অফিসে নেওয়ার কথা বলে মেলাজ নামক জায়গায় তার বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে গিয়েও বিপাকে পরতে হয়। রিয়াদ নামের ওই লোক প্রতিদিন মারধর করে ভয়-ভীতি দেখিয়ে দেহ ব্যবসা করানোর চেষ্টা করে। দেহ ব্যবসা না করলে তাকে দশ লাখ টাকা দিতে হবে বলে জানায়।’
এদিকে কল্পনার স্বামী সৌদিয়ান আবু মোহাম্মাদ ও বাংলাদেশের দালাল হানিফ চৌধুরী ও জহির কাছে কল্পনাকে ফিরিয়ে আনার কথা বলেন। এ সময় আবু মোহাম্মাদ, হানিফ ও জহির ৯০ হাজার টাকায় কল্পনাকে ফিরিয়ে দিতে রাজি হয়। এরপর ২৮ জুন বিকেলে তাদের ৯০ হাজার টাকা প্রদান করলে ২ জুলাই সকাল ৬টায় সৌদি আরব থেকে বিমানে তুলে দেয়া হয় কল্পনাকে। পরে ৩ জুলাই সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটের বিমানে এসে বাংলাদেশে দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটের সময় বাংলাদেশ এয়ারপোর্টে পৌঁছায় কল্পনা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশি দালাল হানিফ চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘কল্পনার স্বামীর সাথে সমাধান হয়েছে। তিনি আমাদের ৯০ হাজার টাকা দিয়েছেন, আমরা তার স্ত্রীকে দেশে ফিরিয়ে এনেছি।’
আলসামি সার্ভিস ইন্টার ন্যাশনালের মালিক সৌদিয়ান আবু মোহাম্মাদের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার সহকারী মাসুম বিল্লাহ বলেন, ‘স্যারে অফিসে নাই, কখন আসবে বলা যায় না, এ ব্যাপারে অফিসে এসে কথা বলেন।’