শিডিউল বিপর্যয়ের কারণে ১৪ জুলাই থেকে ১ আগস্ট পর্যন্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের রিয়াদ-ঢাকা এবং ঢাকা-রিয়াদ রুটের ফ্লাইট সাময়িক বাতিল করা হয়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। ফ্লাইট বাতিল হওয়ার কারণে আগে থেকে টিকিট বুকিং করা যাত্রীদের যাতায়াত এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, বিমানের টিকেট বুকিংয়ের সময়সূচি অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে যাত্রীরা সঠিক সময়ে রিয়াদে না আসতে পারলে ভিসা বাতিল এবং সবাই তাদের নির্ধারিত চাকরি হারানোর শঙ্কা রয়েছে। এছাড়া যারা ঈদুল-আযহার ছুটিতে রিয়াদ থেকে দেশে যাওয়ার জন্য টিকিট সংগ্রহ করে রেখেছেন তাদেরও দেশে গিয়ে ঈদ উদযাপন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
রিয়াদে বিমানের রিজিওনাল অফিস বলছে, ‘আসন্ন হজ উপলক্ষে কোনও ধরনের সমস্যা এড়ানোর জন্য হজ যাত্রীদের ঢাকা-জেদ্দা যেতে তিনটি বিমান রয়েছে। বাকি একটি ঢাকা থেকে দাম্মাম হয়ে লন্ডনে যাবে। যেহেতু দাম্মাম থেকে তেল সংগ্রহ করে লন্ডন এবং একইভাবে দাম্মাম থেকে ঢাকা যাওয়ার ব্যবস্থাটি পূর্ব নির্ধারিত, সেক্ষেত্রে এই রুটেই রিয়াদ-ঢাকার যাত্রীরা বাংলাদেশে যেতে পারবেন এবং ঢাকা থেকে একইভাবে রিয়াদ পৌঁছাতে পারবেন।
রিয়াদে বিমানের রিজিওনাল ম্যানেজার স্বাক্ষরিত ৫ জুলাই এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে সব এজেন্সি এবং শাখাগুলিকে জানানো হয়েছে, ১৪ জুলাই থেকে ১ আগস্ট পর্যন্ত রিয়াদ-ঢাকার এবং ঢাকা-রিয়াদের বিমানের ফ্লাইটগুলো সাময়িকভাবে বাতিল করা হয়েছে। এক্ষেত্রে আগে থেকে টিকিট বুকিং করা যাত্রীরা দাম্মাম হয়ে ঢাকা এবং দাম্মাম থেকে রিয়াদে যেতে পারবেন। এসব যাত্রীদের সুবিধার জন্য দাম্মাম থেকে রিয়াদ এবং রিয়াদ থেকে দাম্মাম যাতায়াতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সড়কপথে পরিবহন এবং দূরদুরান্তের যাত্রীদের জন্য হোটেলে থাকা এবং খাবারের ব্যবস্থা করবে। এছাড়া কোনও যাত্রী এই ব্যবস্থা না নিতে চাইলে তার টিকিট বাতিল করার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত চার্জ ছাড়াই টিকিট কেনার সম্পূর্ণ টাকা ফেরত দেওয়া হবে।
এদিকে বিমানের হঠাৎ এ ধরনের সিদ্ধান্তে রিয়াদ থেকে দেশে যাওয়া এবং দেশ থেকে রিয়াদ ফিরে আসা যাত্রীরা বড় ধরনের বিপাকে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন প্রবাসীরা।
এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য রিয়াদ প্রবাসী বাংলাদেশিরা রিজিওনাল অফিসে গেলে ওই সময় ম্যানেজার মো. আমিনুল হক ভূঁইয়াকে অফিসে পাওয়া যায়নি। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করে বলেন, ম্যানেজারের সঙ্গে সাক্ষাতের পূর্ব নির্ধারিত কথা থাকলেও এ ধরনের অনুপস্থিতি রহস্যজনক।
তারা আরও বলেন, প্রতি বছরের হজ একটি নির্ধারিত কর্মযজ্ঞ। এটি সম্পন্ন করার জন্য অন্তত ৬-৭ মাস আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়ে বিদেশি এয়ারক্রাফ্ট ভাড়া করে বিষয়টি সম্পন্ন করা যেতো। কিংবা রিয়াদ-ঢাকার জন্যও এমন ব্যবস্থা হতে পারতো। কিন্তু তা না হয়ে প্রায় ১৬ হাজার টিকিট বুকিংয়ের পর হঠাৎ করে এ ধরনের সিদ্ধান্ত দুঃখজনক।
এদিকে রিয়াদে বিমানের রিজিওনাল ম্যানেজার মো. আমিনুল হক ভূঁইয়াকে না পেয়ে প্রবাসী আওয়ামী পরিবারের একদল নেতাকর্মী ফাইন্যান্স ম্যানেজার এরশাদ রাফি তুহিনের কাছে একটি স্মারকলিপি দেন। স্মারকলিপিটি নেওয়ার সময় বিমান সংক্রান্ত বিষয়ে সাংবাদিকরা এরশাদ তুহিনকে প্রশ্ন করলে তিনি বিষয়টি বিমান ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।
এসময় তিনি জানান, ম্যানেজার সাহেব জরুরি ভিত্তিতে জেনারেল অথরিটি অব সিভিল এভিয়েশন (গাসা) অফিসে গেছেন।
এদিকে আসফার ট্রাভেল এজেন্সির বিক্রয় ব্যবস্থাপক মো. এ. রহমান ভূঁইয়া অভিযোগ করে বলেন, একটি সৌদি পরিবার তাদের কাছ থেকে টিকেট কনফার্ম করার পর এ ধরনের সিন্ধান্তের ফলে তারা বিপাকে পড়েছেন।
তিনি বলেন, এমনিতেই সৌদিরা বিমানের শিডিউল গড়মিলের কারণে বিমানে ভ্রমণ করতে চায় না। এখন এ ধরনের পরিস্থিতিতে অনেক সৌদি যাত্রীদের আমরা হারাবো।
এদিকে স্মারকলিপি দেওয়ার পরের দিন রিয়াদে বিমানের রিজিওনাল ম্যানেজার মো. আমিনুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘এ ব্যাপারে দ্রুত সমাধানের জন্য রিয়াদে জেনারেল অথরিটি অব সিভিল এভিয়েশনের সঙ্গে যোগযোগ করে রিয়াদে একটি স্লট নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তবে কতদিন নাগাদ এটি পাওয়া যাবে সে ব্যাপারে কিছুই বলতে পারনেনি।’
এদিকে বিষয়টি নিয়ে ঢাকায় বিমানের কেন্দ্রীয় অফিসে ফোনে যোগাযোগ করা হলে গণসংযোগ মহাব্যবস্থাপক শাকিল মেরাজ বলেন, ‘রিয়াদ-ঢাকা আসা-যাওয়াকারী যাত্রীদের জন্য আমরা মঙ্গোলিয়া, মালয়েশিয়া এবং এঙ্গোলা থেকে বিমান ভাড়া করার ব্যাপারে কাজ করছি। যত দ্রুত সম্ভব এই রুটের যাত্রীদের জন্য আমরা ভালো কিছু করতে পারবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ বিমানের মোট ১৩টি এয়ারোফ্ল্যাট থাকলেও ইউরোপ, আমেরিকা, ফারইস্টের জন্য ফ্লাইট নির্ধারণ করে ৪টি মধ্যপ্রাচ্যের জন্য রাখা হয়েছে। এছাড়া বেশকটি এয়ারোফ্লাইট বেশি থাকলেও পাইলট কম থাকার কারণে রিয়াদ রুটের শিডিউল রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না।’
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন