বিশ্বকাপের ফাইনালে আজ মুখোমুখি হবে ফ্রান্স ও ক্রোয়েশিয়া

৩২ থেকে ১৬, ১৬ থেকে ৮, ৮ থেকে ৪, ৪ থেকে ২। এবার ২ থেকে ১। চ্যাম্পিয়ন!

৩২ দলের চ্যাম্পিয়ন নির্ধারণ হবে আজ।

রাশিয়া বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন হচ্ছে কোন দল? জানতে হলে অপেক্ষা আর কিছুটা সময়ের। ৩২ দলের একদল হবে চ্যাম্পিয়ন। সেই যুদ্ধে রাশিয়ার মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে মাঠে নামছে ফ্রান্স ও ক্রোয়েশিয়া। দুই দলের যে দল জিতবে তারাই জিতবে শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট। জিতে যাবে আগামী চার মৌসুমের ফুটবল সাম্রাজ্য। যে সাম্রাজ্যের রাজা একমাত্র হবে তারাই।

ফুটবল বিশ্বের এ সাম্রাজ্যের স্বাদ আগে পেয়েছিল ফ্রান্স, ১৯৯৮ সালে। দিদিয়ের দ্যেশমের হাত ধরে ফ্রান্স পেয়েছিল শিরোপা। ক্রোয়েশিয়া প্রথমবারের মতো উঠল বিশ্বকাপে। ফাইনালে উঠার মধ্য দিয়ে ক্রোয়েশিয়া নিজেদের ইতিহাসের সেরা সাফল্য এরই মধ্যে নিশ্চিত করেছে। আজ যদি মস্কোতে শেষ হাসিটা হাসতে পারে তাহলে অমরত্বের স্বীকৃতি পেয়ে যায় নবযুগের ক্রোয়াটরা।

৩২ দলের বিশ্বকাপ শুরুর আগে কেউ হয়তো ভাবেনি ফ্রান্স-ক্রোয়েশিয়া উঠবে ফাইনালে। ফ্রান্সের কট্টর সমর্থকরাও হয়তো এমনটা ভাবেনি। আর ক্রোয়েশিয়া নিয়ে তো বাজিরদর ছিল তলানিতেই। কিন্তু একমাসের ব্যবধানে আজ পুরো বিশ্বের আলো তাদের দিকে। এজন্যই এটা, ‘দ্যা গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’।

দুই দশক পর ফের একই মঞ্চে ফ্রান্স। ১৯৯৮ সালে তারা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ঘরের মাটিতে। জিদানের অসাধারণ নৈপূণ্যে ব্রাজিলকে হারিয়ে ফ্রান্স পেয়েছিল শিরোপা। সেবার ফ্রান্সের অধিনায়ক ছিলেন দ্যেশম। সেই দ্যেশমের হাতেই ফ্রান্সের ভাগ্য। তার অপ্রতিরোধ্যে শিষ্যরা অসাধারণ ফুটবল উপহার দিয়ে দলকে তুলেছে ফাইনালে। গ্রুপ পর্ব থেকে সেমিফাইনাল পর্যন্ত ফ্রান্স ছিল ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। গ্রিজম্যান, এমবাপ্পে, পগবারা নিজেদের শক্তি ও সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়েছেন প্রতিটি স্তরে স্তরে। ফ্রান্সের সামনে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তির সুযোগ। নতুন তারকারা দেশের ঝান্ডা রাশিয়ায় শেষ পর্যন্ত উড়াতে পারে কিনা সেটাই দেখার।

অন্যদিকে ক্রোয়েশিয়া নতুন ইতিহাস লিখার অপেক্ষায়। বিশ্বকাপের নবম দল হিসেবে শিরোপা জয়ের প্রত্যাশায় তারা। ফ্রান্স যেমন বিশ্বকাপের শুরু থেকে অপ্রতিরোধ্য। সেখানে ক্রোয়েশিয়া তাদের থেকেও একধাপ এগিয়ে। বিশ্বকাপে সেমিফাইল পর্যন্ত উঠেছে কোনো ম্যাচ না হেরে, ড্র না করে। সবথেকে বড় কথা এ দলটা ভয়ডরহীন। শিরোপার ক্ষুধায় মগ্ন। প্রতিটি ম্যাচ তারা জিতছে শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত লড়াই করে। নক আউট পর্বে শেষ তিনটি ম্যাচই খেলেছে ১২০ মিনিট করে। এরপরই বিজয়মালা পড়েছে লুকা মড্রিচ, মারিও মানজুকিচ, ইভান রাকিতিচ, ইভান পেরিসিচরা। সেই হিসেবে তারা টুর্নামেন্টে সবথেকে বেশি সময় ধরে ম্যাচ খেলা দল। যাদের অধিক পরিশ্রমেও নেই ক্লান্তি। ফ্রান্সের যে কঠিন চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

তবে ইতিহাস বলছে মুখোমুখি লড়াইয়ে বড় কোনো প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি ক্রোয়েশিয়া। দুই দলের পাঁচ মুখোমুখিতে ফ্রান্স জিতেছে তিনবার। বাকি দুটি ড্র হয়েছে। এর মধ্যে ৯৮’এর সেমিফাইনাল তো রয়েছেই। সেবার সেমিফাইনালে ক্রোয়েশিয়াকে ২-১ গোলে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছিল ফ্রান্স।

এ নিয়ে তিনবার বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলছে ফ্রান্স। একবার জিতেছে, একবার হেরেছে। এবার কি হবে? ক্রোয়েশিয়ার হারানোর কিছু নেই। প্রথমবারের মতো ফাইনাল খেলছে ১৯৯১ সালে স্বাধীন হওয়া দেশটি। তবে বিশ্বকাপের সোনালি ট্রফি জিতে গেলে অমরত্বের স্বীকৃতি পেয়ে যাবেন তারা।

আজ মস্কোকে কারো স্বপ্নপূরণ হবে আবার কারো স্বপ্নভাঙ্গবে। হয়তো জন্ম হবে নতুন কোনো ইতিহাসের নয়তো হবে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি। হাসি-কান্নায় শেষ হবে বিশ্বকাপ। তাইতো শেষটাতে ধ্রুপদী লড়াইয়ের প্রত্যাশা কোটি ফুটবলপ্রেমির।