আরব দেশসমূহের নাগরিকদের ওপর চালানো এক জরিপে দেখা গেছে, অধিকাংশ আরব মনে করেন ফিলিস্তিনি সংকটের জন্য মূল দায়ী হচ্ছে ইসরাইল। সেইসাথে এই ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির ভূমিকাকেও নেতিবাচক হিসেবে দেখছেন তারা।
কাতারের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠান দ্য আরব সেন্টার ফর রিসার্চ এবং পলিসি স্টাডিজের একটি জরিপে দেখা গেছে, আরব বিশ্বের ৭৫ শতাংশ মানুষ মনে করেন যে ফিলিস্তিন ইস্যু আরবেরই সমস্যা। একইসাথে তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলকে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার হুমকি মনে করেন তারা। এ অঞ্চলে অস্থিরতার উৎস হিসেবে ইসরাইলকেই দায়ী করছেন এখানকার প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষই ।
দ্য আরব অপিনিয়ন ইনডেক্স নামে এক প্রজেক্টের অধীনে চালানো এ জরিপে আরও দেখা গেছে, ৮১ শতাংশ আরব মনে করেন যে সিরিয়া যুদ্ধে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির নেতিবাচক ভূমিকা আছে, ইরাকের ক্ষেত্রেও একই ধারণা পোষণ করেন ৮২ শতাংশ আরব।
এ বিষয়ে ওয়াশিংটন ডিসির আরব সেন্টারের অ্যাসিস্টেন্ট এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর এবং সিনিয়র ফেলো তামারা খারুব বলেন, আরব নেতাদের সাথে গত এক শতাব্দী জুড়ে করা চুক্তিগুলো ফেরি করে বেড়াচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক শান্তি কমিটি।
তিনি বলেন, এসব চুক্তির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, এতে ফিলিস্তিনিদের আকাঙ্ক্ষার বিষয়টিকেই গুরুত্ব দেয়া হয়নি। শুধু তাই নয় ফিলিস্তিনি ইস্যুকে আরবরা কীভাবে দেখে সেটিকেও অবমূল্যায়ন করা হয়েছে।
২০১১ সালের পর এ প্রথম ফিলিস্তিন ইস্যুতে সৌদি আরবের নাগরিকদের থেকে মতামত নিয়ে সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হন জরিপ চালানো কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিরা। দেশটির বিপুল সংখ্যক লোক এ ইস্যুতে কথাই বলতে চাননি। তার মধ্যে ৩৬ শতাংশ সৌদি নাগরিকই এ বিষয়ে কিছু জানে না বলে দেন বা উত্তর এড়িয়ে যান।
প্রজেক্টের কর্মকর্তারা জানান, সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমানের ক্ষমতার উত্তরণের কারণে দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে যে পরিবর্তন ঘটেছে এবং গত দুই বছরে সৌদি-ইসরাইল মধ্যকার আঞ্চলিক সুসম্পর্কের সূত্রপাত হয়েছে তা সাধারণ জনগণদের মধ্যেও প্রভাব ফেলেছে।
একইভাবে তাদের ভাষ্যমতে, সৌদি বিশিষ্ট নাগরিকদের অনেকেই ইসরাইলের সাথে সৌদি আরবের সম্পর্কের বিষয়টিকে স্বাভাবিকরণের চেষ্টায় নিয়োজিত আছেন। যেমন যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক আরবি পত্রিকা আশারক আল-অসাত গত মে মাসে জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তরকে ইতিবাচক হিসেবে দেখে এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে প্রশংসা করে সৌদি লেখক আমাল আবদুল আজিজ আল হাযযানির নিবন্ধ প্রকাশ করে।
তবে আরব সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি স্টাডিজ এর গবেষক দানা আল-কুর্দ বলেছেন, আরও সঠিকভাবে মত জানতে জরিপকারীরা বিভিন্ন জরিপ পদ্ধতি ব্যবহার করে দেখতে পেয়েছেন যে, আসলে সৌদি নাগরিকদের সমর্থন এখনও ফিলিস্তিনিদের প্রতিই। এর বিপরীতে অনেক মতানৈক্য থাকা সত্ত্বেও রাষ্ট্রীয় ভীতির কারণে উত্তর দিতে না চাওয়ায় এর সঠিক মতামতকারী সম্পর্কে অনুমান করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
উপসাগরীয় অঞ্চলের সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং বাহরাইন এবং সেইসাথে ইরানের জনগণও চায় না যে তাদের দেশ ইসরাইলকে স্বীকৃতি না দিক। ৮৭ শতাংশ মানুষই এ ব্যাপারে মত প্রকাশ করেন। তাদের অধিকাংশই ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলের অন্যায় আচরণ ও দখলদারি মনোভাবে সমালোচনা করেন।
তবে শুধুমাত্র ৮ শতাংশ আরবই মনে করেন কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে ফিলিস্তিন-ইসরাইল বিরোধ সমাধান করা উচিত। সেইসাথে তারা পশ্চিম তীর ও গাজায় ইসরাইলি দখলদারিত্বের অবসান ও ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন রাষ্ট্রের প্রতিও সমর্থনের কথা জানিয়েছেন।
এর আগে ২০১৬ সালে ওয়াশিংটন ডি.সি. এর একটি জরিপে ১১টি আরব দেশের মানুষের মতামতে ফিলিস্তিন ইস্যুতে মার্কিননীতির নেতিবাচক ভূমিকার কথা ওঠে এসেছিল। সেখানে ৮৭ শতাংশ মানুষ এ ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকাকে ভাল চোখে দেখেন না বলে জানা যায়। সূত্র: মিডলইস্ট আই