ইয়েমেনের দক্ষিণাঞ্চলে আরব আমিরাত ও তার সহযোগী মিলিশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ এনেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। গুম, নির্যাতন ও জেলখানায় মৃত্যুর অভিযোগ তদন্ত শেষে এক প্রতিবেদনে সংস্থাটি এই অভিযোগ করেছে।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে অ্যামনেস্টি বলেছে, ইয়েমেনে আরব আমিরাতের কৌশলগত জোরপূর্বক গুম, নির্যাতনসহ অন্যান্য নিষ্ঠুরতা যুদ্ধাপরাধের শামিল। আমিরাতের স্থাপন করা বন্দিশালায় আটকে থেকে মৃত্যুর আশঙ্কা করছেন বন্দিরা। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।
ইয়েমেনে ২০১৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর জাতিসংঘের আহ্বানে ইয়েমেনে সব পক্ষের যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পরও বিভিন্ন স্থানে সংঘাত অব্যাহত আছে। অব্যাহত রয়েছে হুথি বিদ্রোহীদের লক্ষ্য করে সৌদি নেতৃত্বাধীন বাহিনীর বিমান হামলা। সংঘাতে অন্তত দশ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে, বাস্তুচ্যুত হয়েছে লাখ লাখ মানুষ। এই সংঘাতের কারণে তৈরি হয়েছে জাতিসংঘ বর্ণিত বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবিক বিপর্যয়। ইয়েমেন এখন দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে।
সৌদি জোটের অন্যতম সদস্য আমিরাত ইয়েমেনে আলাদা করে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। গত বছর মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি’র খবলে বলা হয়, ইয়েমেন সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে আরব আমিরাত ও তার সহযোগী মিলিশিয়ারা অনেকগুলো বন্দিশালা পরিচালনা করছে। জুন মাসে এপি জানায়, এসব বন্দিশালায় শত শত বন্দির ওপর যৌন নির্যাতন ও অত্যাচারের শিকার হয়েছেন। গত বুধবার ইয়েমেন সরকারও আমিরাতকে অনানুষ্ঠানিক বন্দিশালা বন্ধ করে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
৭০ জনের বেশি মানুষের সাক্ষাৎকার নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে অ্যামনেস্টি। প্রতিবেদনটির লেখকরা বলেছেন, আমিরাতের স্থাপিত কারাগারগুলোতে ‘নিষ্ঠুর ও বেআইনি’ আচরণ করা হয়। প্রতিবেদনে অ্যামনেস্টি অতিসত্বর এসব নির্যাতন বন্ধ করে বন্দিদের মুক্তি দিতে আরব আমিরাত সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। একই সঙ্গে আরব আমিরাতকে গোয়েন্দা সহযোগিতার পাশাপাশি অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করে দিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
অ্যামনেস্টি জানিয়েছে, ২০১৬ সালের মার্চ মাস থেকে ২০১৮ সালের মে মাস পর্যন্ত জোরপূর্ব ধরে নিয়ে গুম করার ঘটনা ঘটেছে ৫১টি। তাদের মধ্যে ১৯ জন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। সংস্থাটি মুক্তি পাওয়া বন্দি ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনদের সাক্ষ্য নিয়েছে।
অ্যামনেস্টির সংকট প্রশমন পরিচালক তিরানা হাসোন আল জাজিরাকে বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন পরিবার, সরকারি কর্মকর্তা, বর্তমান ও সাবেক বন্দিদের সাক্ষাৎকার নিয়েই এই প্রতিবেদন তৈরি করেছি’। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আদেনের বিষয়টিসহ অন্যান্য স্থানের ঘটনাও দেখিয়েছি যেগুলোতে নির্যাতনের ভয়ংকর সব ধরনগুলো তুলে ধরা হয়েছে। বছরের পর বছর ধরে এসব ঘটনা চলমান থাকলেও সেখানে দায়মুক্তির সংস্কৃতি চালু আছে’। তিরানা বলেন, সবচেয়ে গুরুতর সহিংসতার ঘটনাগুলো ঘটেছে আরব আমিরাতের স্থাপিত গোপন বন্দিশালাগুলোতে।
সাবেক একজন বন্দি অ্যামনেস্টিকে জানান, আদেনে সৌদি জোটের একটি ঘাঁটিতে আমিরাতি সেনারা তাকে আটকে রাখে। তারা রক্ত বের না হওয়া পর্যন্ত তার মলদ্বার দিয়ে বার বার শক্ত কিছু ঢুকিয়ে বের করতে থাকে। এছাড়া তাকে মাটিতে গর্ত করে শুধুমাত্র মাথা বাইরে রেখে তাকে পুতে ফেলা হতো। ওই অবস্থায় তার ওপর মলমূত্রও ত্যাগ করা হতো।
আরব আমিরাতের পক্ষ থেকে এসব অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। তবে বুধবার ইয়েমেন সরকারও আমিরাতকে অনানুষ্ঠানিক বন্দিশালা বন্ধ করে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। ইয়েমেনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, সোমবার আমিরাতের আন্তর্জাতিক সহায়তা মন্ত্রী ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট আবদ রাব্বু মানসুর হাদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আহমেদ আল মায়সারির সঙ্গে দেখা করেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসব বন্দিশালা বন্ধ করে দিয়ে আটককৃতের বিচারিক নিয়ন্ত্রণে আনা দাবি জানিয়ে আসছেন।