বিশ্বকাপের ‘সেরা’

আর্জেন্টিনা-ফ্রান্সের ম্যাচটাকে বলব সেরা। ৩৫ বছরের বেশি সময় ধরে খেলা দেখছি, এবারের ব্রাজিলের খেলা সবচেয়ে এলোমেলো মনে হয়েছে। ছন্দের টিম হচ্ছে ব্রাজিল, নান্দনিকতার টিম ব্রাজিল, গ্যালারি শো করার টিম হচ্ছে ব্রাজিল। আমি মূলত পেলের সাপোর্টার। বেলজিয়ামের সঙ্গে ব্রাজিল যেভাবে মিস করেছে, আগে কখনো এত মিস করতে দেখিনি তাদের। গোল হওয়ার কথা ছিল চার-পাঁচটা। বেলজিয়ামের লুকাকুর খেলা ভালো লেগেছে। ওদের কাউন্টার অ্যাটাক মনে হয়েছে একেকটা মৃত্যুফাঁদ। ক্রোয়েশিয়ার ফরোয়ার্ড লাইনটাও বেশ। রাশিয়া-ক্রোয়েশিয়ার ম্যাচে ড্যানিশ চেরিসেভ যে গোলটি দিয়েছে, সেটি অসাধারণ। উরুগুয়ের কাভানির দেওয়া একটা গোলও দারুণ লেগেছে।

এই বিশ্বকাপে নিশ্চিত হয়েছি, কোনো স্টারে আর কাজ হবে না, একা কেউ দলকে টেনে নিতে পারবে না। দলের ১১ জনকেই সমান তালে খেলতে হবে।

আব্দুন নূর তুষার

ব্রাজিল-বেলজিয়ামের ম্যাচটাকে এগিয়ে রাখব। ক্রোয়েশিয়া-আর্জেন্টিনা ও দক্ষিণ কোরিয়া-জার্মানি ম্যাচটাও ভালো লেগেছে।

সেরা খেলোয়াড় নির্বাচন করা কঠিন। ফ্রান্স চ্যাম্পিয়ন হলে এমবাপে অথবা পগবা পাবে গোল্ডেন বুট। নইলে বেলজিয়ামের লুকাকু।

স্পেনের বিপক্ষে রোনালদোর তিন নম্বর গোলটিকে এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপের সেরা গোল হিসেবে এগিয়ে রাখব। শট দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বোঝা গিয়েছিল, এটা গোল হবে; ম্যাচটা যদিও ৩-৩ ড্র হয়েছিল।

ইংল্যান্ডের হ্যারি কেইন আগেই নিজেকে প্রমাণ করেছে। তবে এটা ওর প্রথম বিশ্বকাপ, সেই হিসাবে ওকে ভালো লেগেছে। আর এমবাপে তো আছেই নতুন হিসেবে।

পৃথিবীর ফুটবলের উন্নতি হয়েছে। এখন আর তিন-চার দেশের বিশ্বকাপ নেই। এখন প্রায় সব দলই কাছাকাছি মানের খেলা খেলে। যেকোনো দিন যেকোনো দলকে হারিয়ে দিতে পারে। ভবিষ্যতে জাপান কিংবা দক্ষিণ কোরিয়া ফাইনাল খেললেও অবাক হব না।

অমিতাভ রেজা

অনেক ম্যাচই ভালো হয়েছে। আমার চোখে তিন ম্যাচ অসাধারণ লেগেছে—প্রথম রাউন্ডে পর্তুগাল-স্পেন, দ্বিতীয় রাউন্ডে জাপান-বেলজিয়াম এবং কোয়ার্টার ফাইনালে ক্রোয়েশিয়া-রাশিয়া ম্যাচ।

সেরা খেলোয়াড় কে হবে এখনই বলা মুশকিল। তবে রোনালদো ভালো খেলেছে, ফ্রান্সের পল পগবাও ভালো খেলছে। আমার মনে হচ্ছে, ফ্রান্স-বেলজিয়াম ম্যাচে যে জিতবে তারাই হবে চ্যাম্পিয়ন।

রাশিয়ার প্রথম ম্যাচে ফ্রি কিকের গোলটা অসাধারণ। স্পেনের বিরুদ্ধে রোনালদোর ফ্রি কিকের গোলও সেরা। বেলজিয়ামের ইয়েনিক কারাস্কো এবারের আসরের নতুন তারকা।

এবারের বিশ্বকাপের ব্রডকাস্টিং ব্রিলিয়ান্ট। এ পর্যন্ত যত বিশ্বকাপ দেখেছি, এবারের লাইভ কাভারেজ সেরা। এত এক্সট্রিম ক্লোজআপ, রাইট পয়েন্টে এডিট দুর্দান্ত—বিভিন্ন লীগের খেলাও দেখি আমি, এমন কোথাও দেখিনি।

ইরেশ যাকের

সেরা একটা ম্যাচের নাম বলা মুশকিল। স্পেন-পর্তুগাল, ডেনমার্ক-অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম-ব্রাজিল ম্যাচগুলোর কথা বলা যেতে পারে। ব্রাজিল বাদ না পড়লে সেরা খেলোয়াড় হিসেবে কৌতিনিয়োর নাম বলতাম। এখন তো কঠিন হয়ে গেল! গোল্ডেন বলটা পেতে হলে দলকে কমপক্ষে সেমিফাইনাল পর্যন্ত যেতে হবে। বেলজিয়ামের হ্যাজার্ড, ইংল্যান্ডের হ্যারি কেইন, ক্রোয়েশিয়ার লুকা মদ্রিচের একটা সম্ভাবনা দেখছি। ফ্রান্সের তিন-চারজন খুব এগিয়ে, ওরা কাপ জিতলে পেতে পারে।

ফ্রান্সের সঙ্গে ডি মারিয়ার গোলটা এখন পর্যন্ত সেরা। রাশিয়ার চেরিসেভের গোলটাও অসাধারণ। এবারের নতুন তারকা অবশ্যই ফ্রান্সের কিলিয়ান এমবাপে। বিশ্বকাপের আগেই সবাই অনুমান করেছে, ও ভালো করবে। এ সময়ের তাক লাগানো প্লেয়ার। ১৯ বছর বয়সেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সে নিজেকে প্রমাণ করেছে।

এই বিশ্বকাপে দলগুলোর মধ্যে এক ধরনের সমতা দেখতে পাচ্ছি। এ কারণে আগেই বলে দিতে পারব না কে জিতবে। কারণ জাপান বা সেনেগালের মতো দলের বেশির ভাগ প্লেয়ার এখন ইউরোপে খেলে। জাপানের সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার বাদে সবাই ইউরোপে খেলে। আগে যেটা হতো, বড়জোর এক-দুজন ইউরোপে বড় খেলোয়াড়দের সঙ্গে খেলতে পারত। এখন থেকে এই অঘটনগুলো নিয়মিতই ঘটবে। মহাদেশ ক্যাটাগরিতে যেকোনো দল ভালো খেলবে, এমনটা আর হবে না। এই বিশ্বকাপেই তার আলামত দেখতে পাচ্ছি।

মৌসুমী হামিদ

আমার দেখা সেরা ম্যাচ বেলজিয়াম-ব্রাজিল। লুকাকুর খেলা আমাকে মুগ্ধ করেছে। বল পায়ে পেলেই প্যানথার হয়ে যায় সে। বিপক্ষ দলের ডিফেন্স ভেঙেচুরে ঢুকে যায়। সত্যি অসাধারণ! বেলজিয়ামের বিপক্ষে ব্রাজিলের রেনাতো অগস্তের দেওয়া গোলটা দারুণ। এবারের বিশ্বকাপের একটাই বৈশিষ্ট্য, নতুন দলগুলো ভালো খেলেছে। বাংলাদেশের ভক্তরা মনে হয় এখন আর আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। অন্য দলের প্লেয়াররাও তাদের প্রিয়র তালিকায় থাকবে।