ম্যাচটি টাইব্রেকারে গড়াতে পারতো। কিন্তু মারিও মানজুকিচ সেটি হতে দিলেন না। অতিরিক্ত সময়ে গোল করে দলকে জয় এনে দিলেন। রাশিয়া বিশ্বকাপে বুধবার দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডকে ২-১ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠে গেল ক্রোয়েশিয়া। ম্যাচে প্রথমে কাইরান ট্রিপিয়ারের গোলে এগিয়ে গিয়েছিল ইংল্যান্ড। এরপর ইভান পেরিসিচের গোলে সমতা আনে ক্রোয়েশিয়া। অতিরিক্ত সময়ে ক্রোয়েশিয়ার জয়সূচক গোলটি করেন মারিও মানজুকিচ।
মঙ্গলবার বেলজিয়ামকে ১-০ গোলে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছে ফ্রান্স। আগামী ১৫ জুলাই মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় রাত নয়টায় ফাইনাল ম্যাচে মুখোমুখি হবে ফ্রান্স ও ক্রোয়েশিয়া। এর আগে ১৪ জুলাই তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে বেলজিয়ামের মুখোমুখি হবে ইংল্যান্ড।
ক্রোয়েশিয়া এবার পঞ্চমবারের মতো বিশ্বকাপে অংশ নিচ্ছে। এর আগে বিশ্বকাপে তাদের সর্বোচ্চ অর্জন ছিল সেমিফাইনাল। ১৯৯৮ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে অংশ নিয়ে সেমিফাইনালে খেলেছিল ক্রোয়েশিয়া। এরপর ২০০২, ২০০৬ ও ২০১৪ সালে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেয় ক্রোয়েশিয়া। অন্যদিকে, ইংল্যান্ড এবার তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠেছিল। তাদের সামনে সুযোগ ছিল দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে ওঠার। কিন্তু তারা সেটি পারল না।
লুঝনিকি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচটিতে বল দখলের লড়াইয়ে এগিয়ে ছিল ক্রোয়েশিয়া। পুরো ম্যাচে তারা ৫৫ শতাংশ সময় ধরে বল নিয়ন্ত্রণে রেখেছিল। ৪৫ শতাংশ সময় ধরে বল নিয়ন্ত্রণে ছিল ইংল্যান্ড। ক্রোয়েশিয়া টার্গেটে শট নিয়েছে সাতটি। ইংল্যান্ড টার্গেটে শট নিয়েছে দুইটি।
ম্যাচটি শুরু হতে না হতেই এগিয়ে যায় ইংল্যান্ড। ম্যাচের পঞ্চম মিনিটে ফ্রি কিক থেকে গোলটি করেন কাইরান ট্রিপিয়ার। চতুর্থ মিনিটে ডি-বক্সের একেবারেই সামনে ডেলে আলিকে ফাউল করেন লুকা মদ্রিচ। ফ্রি-কিকের সিদ্ধান্ত দেন রেফারি। ফ্রি-কিকের সুযোগ কাজে লাগিয়ে দলকে এগিয়ে দেন ট্রিপিয়ার। আন্তর্জাতিক ফুটবলে ট্রিপিয়ারের এটি প্রথম গোল।
১৫তম মিনিটে ব্যবধান বাড়াতে পারত ইংল্যান্ড। কর্নার কিক থেকে উড়ে আসা বল হেড করেছিলেন মাগুইরি। কিন্তু বল চলে যায় সাইডবারের সামান্য পাশ দিয়ে। ২৯তম মিনিটে একেবারে সহজ সুযোগ মিস করেন ইংলিশ অধিনায়ক হ্যারি কেন। ৩১তম মিনিটে গোল পেতে পারতো ক্রোয়েশিয়া। কিন্তু রেবিচের জোরালো শট দুর্দান্তভাবে ঠেকিয়ে দেন ইংলিশ গোলরক্ষক জর্ডান পিকফোর্ড। ১-০ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় ইংল্যান্ড।
বিরতির পর ম্যাচে ১-১ সমতা আনে ক্রোয়েশিয়া। ৬৮তম মিনিটে গোলটি করলেন ইভান পেরেসিচ। ডি-বক্সের মধ্যে থাকা পেরিসিচকে লক্ষ্য করে ক্রস দেন ভিরসাজকো। ক্রস থেকে পা বাড়িয়ে দিয়ে বল জালে পাঠিয়ে দেন পেরিসিচ। নির্ধারিত ৯০ মিনিটে ম্যাচে ১-১ সমতা থাকায় খেলা গড়ায় অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে।
৯৯তম মিনিটে গোল পেতে পারতো ইংল্যান্ড। কর্নার কিক থেকে দারুণভাবে হেড করেন স্টোনস। বল জালে পৌঁছাতে পারতো। কিন্তু তার আগে হেড বল ক্লিয়ার করে দেন ভিরসাজকো। (১০৫+২) মিনিটে গোল পেতে পারতো ক্রোয়েশিয়া। কিন্তু গোলরক্ষক পিকফোর্ডের প্রচেষ্টায় অল্পের জন্য বেঁচে যায় ইংল্যান্ড।
১০৯তম মিনিটে ম্যাচে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে যায় ক্রোয়েশিয়া। গোলটি করেন মারিও মানজুকিচ। ডি-বক্সের মধ্যে বল পেয়ে গোলরক্ষক জর্ডান পিকফোর্ডকে বোকা বানিয়ে বল জালে পাঠান মানজুকিচ। ম্যাচের বাকি সময়ে কোনো গোল না হওয়ায় ২-১ ব্যবধানে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে ক্রোয়েশিয়া। আজ ম্যাচ সেরা হয়েছেন ক্রোয়েশিয়ার ইভান পেরেসিচ।
‘ডি’ গ্রুপ থেকে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠে ক্রোয়েশিয়া। এরপর তারা ডেনমার্ককে টাইব্রেকারে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে। কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচে স্বাগতিক রাশিয়াকে টাইব্রেকারে পরাজিত করে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে তারা।
অন্যদিকে, ‘জি’ গ্রুপ থেকে গ্রুপ রানার আপ হয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠে ইংল্যান্ড। দ্বিতীয় রাউন্ডের ম্যাচে কলম্বিয়াকে টাইব্রেকারে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে ইংলিশরা। কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচে সুইডেনকে ১-০ গোলে হারিয়ে সেমিফাইনালে ওঠে ইংল্যান্ড।