সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রকাশ্য আর সিলেটে জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামীর অপ্রকাশ্য বিদ্রোহে হতচকিত বিএনপিতে ভোটের ফল নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। কারণ, দুটি নগরীকেই এই দলটির উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভোট আছে। সেটি বিএনপির বাক্সে না পড়লে তার সুফল পাবে প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ।
নতুন সম্পর্কের বার্তা নিয়ে জুনের শুরুতে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দলের ভারত সফরের সময় দেশটির নেতাদের পক্ষ থেকে জামায়াত ছাড়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে। এরপর বিএনপিতে এ নিয়ে আলোচনাও শুরু হয়। এর মধ্যেই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই জোটসঙ্গীর মধ্যে দূরত্বের বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গণে আলোচনা তৈরি হয়েছে।
আগামী ৩০ জুলাইয়ের ভোটকে সামনে রেখে রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেটে চলছে জমজমাট প্রচার। এর মধ্যে বরিশাল ছাড়া অন্য দুই নগরে বিএনপি অনেকটাই ‘একা’।
বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটে ১৯টি শরিক দল থাকলেও জামায়াত ছাড়া অন্য দলগুলোর তেমন একটা ভোট নেই। আবার রাজশাহীতে জামায়াত নিজের শক্তি দিয়েই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসতে সক্ষম। সিলেটেও দলটির উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভোট আছে-স্বীকার করেছেন বিএনপির একজন কেন্দ্রীয় নেতা।
এই অবস্থায় এই দুই নগরীতে ‘বিভেদের’ ফল বরিশালেও পড়ে কি না, এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে বিএনপি। কেবল সিটি নির্বাচনই না, জোটভিত্তিক রাজনীতিতেও এর ফল কী হয় না নিয়েও আছে আলোচনা।
একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘প্রভাব তো কিছুটা হলেও সাময়িকভাবে তো পড়ল। বিশেষ করে সিলেটের রাজনীতিতে পড়ল।’
‘এর আগেও গাজীপুর এবং খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জামায়াত মেয়র প্রার্থী দিয়ে জোটে দরকষাকষি করেছিল। পরে আলোচনার মাধ্যমে সেখানে তারা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছিল।’
‘কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সিলেটে জোটের একক প্রার্থী দেয়া সম্ভব হলো না। কারণ সেখানে জামায়াত এ বিষয়ে একেবারেই অনড় রয়েছে যে, ওখানে তাদের প্রার্থী থাকবেই। সেটা নিয়ে সেজন্য আর আমরা কিছু বলছি না।’
বিএনপি-জামায়াত জোটের শরিক লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির(এলডিপি) যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, ‘জোটের বৈঠকে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে সিলেট সিটিতে জোটগত প্রার্থী দেয়া হবে। কিন্তু এখন যে বিভক্তি দেখা দিয়েছে এটা সমাধান করতে না পারলে পরাজিত হবেই এমনকি এর প্রভাব পড়বে জাতীয় নির্বাচনেও। তাই বিএনপির উচিত দ্রুত এ বিষয়টা নিয়ে একটা সমাধানে আসা।’
জোটের অন্যতম শরিক দল বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেন, ‘স্থানীয় সব নির্বাচনকে সামনে রেখে জোটের বৈঠকে বলা হয় ২০ দল থেকে জোটগতভাবে প্রার্থী দেওয়া হবে। পরবর্তীতে তার কোন প্রতিফলন থাকে না। সিলেটে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় প্রমাণ করে দলের ভেতরে কোনো সমন্বয় নেই। সমন্বয় কমিটির দায়িত্বে থাকা নেতারাও ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন।’
অবশ্য জামায়াতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর মিয়া গোলাম পরওয়ার মনে করেন, সিটি নির্বাচন নিয়ে বিভেদের ফল সামগ্রিক রাজনীতি বা জাতীয় নির্বাচনে পড়বে না।
সরকারের সঙ্গে জামায়াতের যোগাযোগের কারণে দলের আমির মুক্তি পেয়েছেন- এমন গুঞ্জন আছে রাজনৈতিক মহলে। জানতে চাইলে পরওয়ার বলেন, ‘এমন মুখরোচক খবর সবসময় থাকে। আমাদের কাছেও থাকে এমন অনেক খবর। তিনি নয়মাস জেল খেটে বের হয়েছেন। জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। আর যদি সরাসরি গেট খুলে দিয়ে বের করে দিত তাহলে বলতে পারতেন সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে বোধহয় তাই না?’