পশ্চিমাদের দীর্ঘ অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞায় রাশিয়ার অর্থনীতি যখন খুঁড়িয়ে চলছিলো তখন আশীর্বাদ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে বিশ্বকাপ ফুটবল। বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্বকাপ ফুটবলের মধ্য দিয়ে রাশিয়ায় পর্যটক আগমনের যে স্রোত তৈরি হয়েছে, তা দীর্ঘ মেয়াদে থাকবে। এর পাশাপাশি দেশটির অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি সঞ্চার হবে, যা দেশটির ভগ্ন অর্থনীতিতে নতুন করে গতি সঞ্চার করবে।
রাশিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়নমন্ত্রী মেক্সিম ওরেশকিন স্থানীয় এক পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হিসাব অনুযায়ী রাশিয়ায় বিশ্বকাপ চলাকালীন বিদেশিরা ১০০ বিলিয়ন রুবল (১.৬ বিলিয়ন ডলার) ব্যয় করবে। এ সময়ে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা কোনো ক্ষতিই করতে পারবে না।’ তিনি বলেন, এখানে রাজনীতি আছে, অর্থনীতিও আছে। আছে সাধারণ মানুষের প্রাত্যহিক জীবন। ফলে বিশ্বকাপের মতো একটি প্রতিযোগিতামূলক ইভেন্টের অর্জন সব সময় উচ্চমাত্রায়।
অ্যাসোসিয়েশন অব ট্যুর অপারেটরস অব রাশিয়া জানায়, বিশ্বকাপ ফুটবলকে ঘিরে জুন থেকে জুলাইয়ের মধ্যে চার লাখ পর্যটক রাশিয়া ঘুরে যাবে। ফলে পর্যটক আগমনে প্রবৃদ্ধি জোরালো হবে। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী বছরও পর্যটক আগমনে প্রবৃদ্ধি আসবে ২০ শতাংশ।
মেক্সিম ওরেশকিন বলেন, বিশ্বকাপকে ঘিরে রাশিয়ায় অবকাঠামোর যে আধুনিকায়ন করা হয়েছে তাতে অর্থনীতির অনেক খাতই উপকৃত হবে। মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটবে। নতুন নতুন হোটেল, রাস্তাঘাট, বিমানবন্দর নির্মাণ করা হয়েছে। এতে মানুষের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডেও গতি এসেছে।
গত ১৪ জনু থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত ফিফা বিশ্বকাপ-২০১৮ অনুষ্ঠিত হচ্ছে রাশিয়ার ১১টি শহরের ১২টি স্টেডিয়ামে। ফলে পর্যটকদের পদচারণায় এ শহরগুলো এখন সরগরম। পরিবহন থেকে শুরু করে স্থানীয় দোকানপাটগুলোতে বিক্রি বেড়েছে কয়েকগুণ।
আয়োজকদের হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বকাপ ম্যাচগুলো দেখবে পাঁচ লাখ ৭০ হাজার বিদেশি ফ্যান এবং সাত লাখ রাশিয়ান। যা হোটেল-রেস্টুরেন্ট থেকে শুরু করে সার্বিক পর্যটন খাতকে দারুণ নাড়া দেবে। রেটিং এজেন্সি মুডিস জানায়, মস্কোভিত্তিক বিমানবন্দরগুলো সবচেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছে। কারণ আধুনিকায়নের ফলে যাত্রী যাতায়াত অনেক বেশি বেড়েছে। সিঙ্গাপুরের একজন সাবেক ফুটবলার আল সুসিকুমার সিএনবিসিকে বলেন, ‘সব হোটেলই বুকড, রেস্টুরেন্ট-বারে মানুষে ঠাসা। আপনি ধারণা করতে পারবেন না, এমন একটি ইভেন্টের মাধ্যমে রাশিয়া কী পরিমাণ লাভবান হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘এ আয়োজনের মাধ্যমে রাশিয়া বিশ্ববাসীকে আবারও স্বরূপ চেনাচ্ছে। তারা জানিয়ে দিচ্ছে পরাশক্তি রাশিয়ার অর্থনৈতিক জৌলুস এখনো শেষ হয়ে যায়নি। আমি এখানে মস্কোর যে রূপ দেখতে পাচ্ছি। মনে হচ্ছে আমার দেখা বিশ্বের অন্যতমবৃহৎ সেরা শহর এটি।’
রাশিয়ার শহরগুলোর মধ্যে বেশ পরিচিত মস্কো এবং সেন্ট পিটার্সবার্গ। আশা করা হচ্ছে, এ দুই শহরেই চার লাখ পর্যটক আসবে। বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইউরোমনিটর মনে করে, বিশ্বকাপকে ঘিরে রাশিয়ায় পর্যটকের যে স্রোত শুরু হয়েছে, তা খেলা শেষের পরও অব্যাহত থাকবে। সংস্থার মতে, ২০২২ সাল পর্যন্ত রাশিয়ায় পর্যটক আগমনে প্রবৃদ্ধি থাকবে ৪ শতাংশ করে। ইউরোমনিটরের স্পোর্টস শিল্প ব্যবস্থাপক অ্যালান রোওনান বলেন, ফুটবল বিশ্বকাপের ফলে রাশিয়ায় পর্যটক আগমন ১.৪ শতাংশ বাড়বে ২০১৮ সালে।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখলকে কেন্দ্র করে দেশটির ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। পরবর্তী সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হস্তক্ষেপের অভিযোগেও দেশটি সমালোচিত হয়। এ ছাড়া যুক্তরাজ্যের সঙ্গেও রাজনৈতিক টানাপড়েন চলছে। ফলে দীর্ঘ অর্থনেতিক বিচ্ছিন্নতায় রাশিয়ার অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়েড়ে। তাই দেশটির অর্থনীতির জন্য চলমান বিশ্বকাপকে প্রণোদনা হিসেবেই দেখছেন অর্থনীতিবিদরা।