হঠাৎ করেই হাসপাতালে ভর্তি হলেন। কিন্তু ইউনাইটেড হাসপাতালে বেশি দিন থাকা হলো না বিএনপি মহাসচিবের। চিকিৎসকরা জানিয়ে দিলেন তাঁর তেমন কোন অসুস্থতা নেই। শুক্রবার হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন মির্জা ফখরুল। কিন্তু তারপর থেকেই তিনি স্বেচ্ছা নির্বাসনে। সব কিছু থেকেই নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। দলের কর্মকাণ্ডেও তিনি অনুপস্থিত। নেতাদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাতও করছেন না। হঠাৎ বিএনপি মহাসচিবের আড়ালে যাওয়া নিয়ে বিএনপিতে নানা প্রশ্ন, অনেক গুঞ্জন। তিনি কি অভিমান করে নিজেকে আড়াল করেছেন? অবশ্য বিএনপি মহাসচিবের ঘনিষ্ঠরা বলছেন অন্যকথা। তাঁদের মতে, হাসপাতাল ছাড়লেও চিকিৎসক তাকে কয়েকদিন বাড়িতে বিশ্রাম নিতে বলেছেন। এ কারণেই তিনি বিশ্রামে আছেন।
৫ জুলাই বেগম জিয়ার মুক্তির দাবিতে পল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করতে চেয়েছিল বিএনপি। কিন্তু পুলিশের অনুমতি না দেওয়ায় ঐ সমাবেশ বাতিল হয়। এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ডেকেও কর্মসূচি পালন করতে পারেনি বিএনপি। বিএনপি কাল বেগম জিয়ার মুক্তির দাবিতে ‘প্রতীক অনশন’ কর্মসূচি পালন করবে। কিন্তু সেই কর্মসূচিও শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, আজ পর্যন্ত তা নিয়ে বিএনপির নেতারাই সংশয়ে। বিএনপি এখন রিজভী সর্বস্ব দলে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন দলীয় কার্যালয়ে বসে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব প্রেস ব্রিফ করেন। এটা নিয়েই বিএনপি তাঁর অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে। এ সময়ে অজানা কারণে চুপচাপ বিএনপি মহাসচিব।
বিএনপির অনেকের ধারণা, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে মির্জা ফখরুলের সঙ্গে সরকারের গোপন সমঝোতা হয়েছে। এ কারণেই তিনি এখন আন্দোলনের পক্ষপাতী নন। কিন্তু বিএনপিতে সরকারের বিরুদ্ধে ধাপে ধাপে আন্দোলন গড়ে তোলার চাপ আছে। এই চাপ এড়াতেই কি বিএনপি মহাসচিব নিজেকে আড়াল করেছেন?
বিএনপির অনেক নেতাই মনে করছেন, বেগম জিয়া কারান্তরীণ হওয়ার পর বিএনপি কিছুই করতে পারেনি মূলত নেতৃত্বের ব্যর্থতার জন্য। সবচেয়ে বেশি সমালোচিত হয়েছেন দলের মহাসচিব। কারণ বেগম জিয়া এবং তারেক জিয়ার অবর্তমানে তিনিই বিএনপির মূল নেতা। এজন্য ব্যর্থতার সব দায় তাঁর উপর বর্তাচ্ছে। এই সমালোচনার কারণেই হতাশ মির্জা ফখরুল কি আড়ালে গেলেন?
সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি-জামাত সম্পর্কে টানাপড়েন সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপি নেতারাই বলছেন, ১৯ বছরের সম্পর্ক এখন ভাঙনের মুখে। শুধু সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নয়, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ইস্যুতে বিএনপি-জামাত সম্পর্কের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে অবিশ্বাসের দেয়াল। আর এজন্য বিএনপি ও জামাত উভয়েই দায়ী করছেন বিএনপি মহাসচিবকে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাম ঘরানার রাজনীতি থেকে বিএনপিতে এসেছেন। দলের মধ্যে সবসময়েই তিনি জামাত বিরোধী হিসেবেই পরিচিত। দলের দায়িত্ব পাওয়ার পরপরই তিনি জামাতকে এড়িয়ে চলার নীতি গ্রহণ করেন বলেই অনেকে মনে করেন।
বিএনপিতে জামাতপন্থীদের মতে, মির্জা ফখরুলই জামাতকে দূরে ঠেলে দিয়েছেন। জামাতও প্রকাশ্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সমালোচনা করছে। অনেকের ধারণা, জামাতের সঙ্গে সম্পর্ক জোড়া লাগাতেই মির্জা ফখরুলকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। আগামীকাল সোমবার সিলেট সিটি করপোরেশনে মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন। এই সময় পর্যন্ত মির্জা ফখরুলকে অবসরে রেখে জামাতের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করছে বিএনপি।
বাংলা ইনসাইডার/