ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পর সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী সংগঠনের নেতৃত্বে থাকা একজনের ওপর হামলা হয়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথে।
সোমবার তিন দফা দাবিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মানববন্ধনে অংশ নিতে গিয়ে হামলার শিকার হন কোটা সংস্কার দাবিতে আন্দোলনকারী সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক রাতুল সরকার। হামলাকারীরা তাকে ধাক্কা দিয়ে রাস্তার পাশের নালায় ফেলে দেয়।
বেলা পৌনে একটার দিকে বসুন্ধরা আবাসিক অবস্থিত নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ নম্বর গেটে এই ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর স্থানীয়দের সহায়তায় রাতুল সেখান থেকে সরে আসেন।
রাতুল সরকার ঢাকাটাইমস জানান, কোটা সংষ্কার আন্দোলনের নেতাদের উপর হামলাকারীদের শাস্তি, আটক নেতাদের মুক্তি এবং কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন দ্রুত দেবার দাবিতে মানবন্ধনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে বসুন্ধরা আবাসিকের প্রধান গেটে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অবস্থান করছিল। ঝামেলা এড়াতে ও বৃষ্টি শুরু হওয়ায় দুপুর একটার দিকে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ নম্বর গেটে মানববন্ধন শুরু হয়।
হঠাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের একজন কর্মকর্তার নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠানটির নিরাপত্তারক্ষীরা শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করে। এসময় তারা ব্যানার কেড়ে নেয়।
‘আমি মোবাইলে ছবি তুলতে গেলে তারা আমাকে মারধর করে এবং ধাক্কা দিয়ে ড্রেনে ফেলে দেয়। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় সেখান থেকে সরে আসি’-বলছিলেন রাতুল।
‘হামলাকারীরা বার বার বলছিল এখানে কোন ধরনের আন্দোলন সংগ্রাম করা যাবে না। আমরা তাদের বলেছিলাম, দেশে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নেই, কোটা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর সন্ত্রাসীদের হামলা হচ্ছে, শ্লীলতাহানির শিকার হচ্ছে নারী শিক্ষার্থীরা। এসবের প্রতিবাদে আমরা শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করছি। কিন্তু তারা কোন কথা শোনেনি। উল্টো বিভিন্ন জায়গায় মোবাইল আমাদের শায়েস্তা করতে লোক ডাকা হচ্ছিল।’
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হয় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণসংযোগ কর্মকর্তা বেলাল আহমেদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এমন কোনো ঘটনা আমার জানা নেই। বসুন্ধরার ভেতর আরও বিশ্ববিদ্যালয় আছে তাদের সাথে শিক্ষার্থীদের কোন ঝামেলা হতে পারে। তবে বিষয়টি খোঁজ নিতে হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তারক্ষীদের পোশাকের সাথে ভিডিওর হামলাকারীদের পোশাকের মিল আছে এমন প্রশ্নে বেলাল বলেন, ‘হ্যাঁ, আমাদের নিরাপত্তারক্ষীদের একসেস আছে যে কোন ধরনের নিরাপত্তা হুমকি ঠেকানো। আমি বিস্তারিত জেনে পরে আপনাকে জানাব।’
গত এপ্রিলে কোটা সংস্কারের আন্দোলন তীব্র হওয়ার সময় সরকারি চাকরিতে অনীহা দেখানো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাও মাঠে নামে। রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক বন্ধ করে গিয়ে তারাও ব্যাপক ভোগান্তি তৈরি করে। আর ১১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী সংসদে কোটা বাতিলের ঘোষণা দেয়ার পর পরিস্থিতি শান্ত হয়।
তবে প্রজ্ঞাপনের দাবিতে সম্প্রতি আন্দোলনকারীদের আবার মাঠে নামার চেষ্টা আর কোটা আন্দোলনের নেতা রাশেদ খাঁন ফেসবুক লাইভে এসে তাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে, ‘রক্ত গরম হয়ে গেছে’, ‘মনে হয় তার বাপের দেশ’- এ জাতীয় বক্তব্য দিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করে দেন।
এরপর ৩০ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা আন্দোলনের নেতাদের ওপর হামলা হয়। এর প্রতিবাদে ২ জুলাই ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসূচিতেও হামলা হয়। রাজশাহীতে এক শিক্ষার্থীকে পেটানো হয় হাতুড়ি দিয়ে। এতে তার পায়ের হাড় ভেঙে যায়।