স্টেডিয়ামের নিচেই কারাগার, ফিফার নিয়ম ভাঙলেই জেল

ফিফাকে আমরা শুধু ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থা বলেই জানি। কিন্তু বিশ্বকাপের আয়োজন করতে গিয়ে সংস্থাটি রীতিমতো কারাগারও পরিচালনা করে। যেখানে নিরাপত্তা বিধিভঙ্গকারী মানুষকে বন্দি করে রাখা হয়।

এবার রাশিয়া বিশ্বকাপে এমনই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন মার্কিন সাংবাদিক মলি জাকারম্যান।

রাশিয়া ও মিসরের মধ্যকার খেলার দিন তাকে সেন্ট পিটার্সবার্গ স্টেডিয়ামের নিচে অবস্থিত কয়েদখানায় পাঁচ ঘণ্টা কাটাতে হয়েছে। সঙ্গে ছিলেন আরও ছয়জন। সেখানে এমনকি নিরাপত্তারক্ষীও ছিলেন। খবর বিবিসি বাংলার।

মলির অপরাধ হল তিনি তার এক বন্ধুর নামে ইস্যু করা ফ্যান আইডিকার্ড ব্যবহার করে স্টেডিয়ামে ঢোকার চেষ্টা করেছিলেন। রাশিয়াতে এই কার্ড টুরিস্ট ভিসা হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।

ওই কার্ড ব্যবহারের নিয়ম না মানার বিষয়ে জাকারম্যান বলছিলেন, আমি ভেবেছিলাম ধরা পড়লে এমনকি আর হবে। বড়জোর মাঠে ঢুকতে দেবে না। কিন্তু তাকে আটক করা হয়।

জানা গেছে, বিশ্বকাপ আয়োজন করতে গিয়ে ফিফা নিরাপত্তার বিষয়ে বেশ কড়াকড়ি আরোপ করে থাকে। সেক্ষেত্রে বিশ্বকাপের আয়োজক দেশকে নিরাপত্তাবিষয়ক প্রচুর নিয়ম মেনে নিতে হয়।

আর নিরাপত্তার জন্য ফিফার নতুন আইন প্রবর্তন এবং নতুন ধরনের আদালত তৈরি করার ইতিহাসও রয়েছে।

যেমন দক্ষিণ আফ্রিকায় বিশ্বকাপের সময় ফিফার নিয়মভঙ্গকারীদের সামাল দেয়ার জন্য এমনকি এক ধরনের আদালত পরিচালনার অনুমোদন নিয়েছিল ফিফা।

ফ্ল্যাশ কোর্ট নামে সেই আদালতের আওতায় এমনকি ফিফার পণ্য সম্পর্কিত নিয়মভঙ্গের বিচারও করা হয়েছে।

কিন্তু রাশিয়াতে আগে থেকেই রয়েছে কঠোর নিয়মকানুন। সেখানে প্রায় সব ধরনের খেলার স্টেডিয়ামে আগে থেকেই কয়েদখানা রয়েছে। যেখানে বিশৃঙ্খল ফুটবল অনুরাগীদের জায়গা হয়।

সেন্ট পিটার্সবার্গের স্টেডিয়ামটি রাশিয়ার সবচেয়ে আধুনিক। ১০ বছর আগে ১০০ কোটি ডলারের বেশি অর্থ খরচ করে এটি তৈরি করা হয়েছে।

এ স্টেডিয়ামে ঢুকতে গিয়েই ধরা পড়েন মলি জাকারম্যান। তার কার্ডের ছবিটি দেখে ফেলে তাকে পাকড়াও করেন এক নিরাপত্তারক্ষী।

মলির ভাষ্য, ৩০ জনের মতো আমাকে ঘিরে ধরল। একজন আমার ব্যাগ খুলে দেখল এবং এভাবেই আমার জেলযাত্রা শুরু।

কারাগারে যাওয়ার পরের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে মলি বলেন, জায়গাটা খুব একটা বড় নয়। একজন ট্যুর গাইডকে মেক্সিকান এক নাগরিক তার মেয়ের টিকিটটি দিয়েছিলেন। ওই লোকটিও ছিলেন আমার সঙ্গে। দুজন ছিলেন খুবই মাতাল।

মার্কিন এ সাংবাদিককের বর্ণনায়- কারাগারের ভেতরে তিনটি সেল রয়েছে, যেখানে মাতালদের রাখা হয়। বাকিদের জন্য আলাদা এলাকা।

বাইরে একটি ডেস্কে বসে একজন পুলিশ আটকদের জবানবন্দি নিচ্ছিলেন। মলি কিছুটা রাশিয়ান ভাষা বোঝেন। তাই গার্ডদের কথাবার্তা খানিকটা বুঝেছেন।

তারা নাকি এমনও আলাপ করছিলেন যে, এই আমেরিকান নারী সম্ভবত গুপ্তচর কিছু একটা হবে।

তবে আটক করলেও তাদের কারোর মোবাইল ফোন বা ব্যাগ নেয়া হয়নি।

জবানবন্দি নেয়ার পর মলিকে স্থানীয় থানায় পাঠানো হয়। সেখানে ৫০ ডলারের জরিমানা দেয়ার পর তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।

ফিফা অর্গানাইজিং কমিটির এক কর্মকর্তা বিবিসি নিউজকে জানিয়েছেন, ফুটবল ফ্যানদের নিজেদের নিরাপত্তার জন্যই এসব নিয়মকানুন। অতএব তা মেনে চলুন। আর মলি জাকারম্যানও নিয়ম মানছেন।