কঠিন দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করে বিশ্বমঞ্চে লুকাকু

জীবন মানেই যুদ্ধ। সেই জীবনযুদ্ধে জয় করতে হলে প্রথমেই আমাদের সকলকে স্বপ্ন দেখতে হবে। আমরা সকলেই স্বপ্ন দেখি; স্বপ্ন দেখতে ভালবাসি। পৃথিবীতে এমন কোন ব্যক্তি নেই যে স্বপ্ন দেখে না। কিন্তু শুধু স্বপ্ন দেখলেই হবে না। স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে হলে ইচ্ছে শক্তি থাকতে হবে এবং প্রচুর পরিশ্রম করতে হবে। বেলজিয়ামের সুপারস্টার রোমেলু লুকাকু সেটাই করেছেন। কঠিন দারিদ্রের সাথে লড়াই করেছেন, অবশেষে সফল হয়েছেন। ‘পরিশ্রম সাফল্য অর্জনের মূল চাবিকাঠি’-কথাটা লুকাকুর সাথে খুব যায়।

অভাব অনটনের কারণে দুধের সাথে পানি মিশিয়ে স্থানীয় বেকারি থেকে ধার করা পাউরুটি খেয়েই কেটেছিল রোমেলু লুকাকুর ছোট বেলায়। সেই ছোট থেকেই কঠিন বাস্তবের সঙ্গে লড়াই শুরু হয়েছিল তার। তবে হাল না ছেড়ে জীবনের চাকা ঘোরানোর প্রতিজ্ঞাটা শৈশবেই করে ফেলেছিলেন বেলজিয়ামের এই তারকা ফুটবলার।

ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইটা সহজ ছিল না। কিন্তু যেভাবে লুকাকু সব বাধা টপকে বিশ্ব ফুটবলে নিজের জায়গা করে নিয়েছেন, ঠিক সেই রকম লড়াই করেই রাশিয়া থেকে বিশ্বকাপ নিয়ে বেলজিয়াম ফিরতে চান তিনি। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ফুটবলারটির সৌজন্যে তার পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরেছে। তবে লুকাকু এখনও পুরনো সেই দিনের কথা ভুলতে পারেননি। বলছিলেন, ‘আমি জানতাম, কষ্ট করে আমাদের সংসার চলে। কিন্তু যখন প্রথম জানতে পারলাম, মা দুধে পানি মিশিয়ে আমাদের দিচ্ছে তখন বুঝতে পারলাম দারিদ্র ঠিক কতটা আমাদের গ্রাস করেছে। আমি সেদিন একটা কথাও বলিনি। মা-কে কিছু জি়জ্ঞেসও করে কষ্ট বাড়ায়নি। কিন্তু সেদিনই আমি প্রতিজ্ঞা করি, জীবনে এমন কিছু করে দেখাব যাতে এই কষ্ট আর কখনও আমাকে আর আমার পরিবারকে পেতে না হয়।’

তারকা এই ফরোয়ার্ডের বাবাও ফুটবলার ছিলেন। তিনি ফুটবল থেকে অবসর নেওয়ার পরই দারিদ্র যেন চরমে পৌঁছেছিল। এমন অবস্থা হয়েছিল যে, টাকার অভাবে বাড়ির বিদ্যুৎ সংযোগ পর্যন্ত কেটে দেওয়া হয়। তিন সপ্তাহ অন্ধকারে কাটাতে হয়েছিল তাদের। ‘মা আর ভাইয়ের সঙ্গে অন্ধকারে বসে প্রার্থনা করতাম। আর ভাবতাম একদিন এই অবস্থার পরিবর্তন হবেই।’
সংগ্রামী লুকাকু

লুকাকু আরো যোগ করেন, ‘একদিন স্কুল থেকে ফিরে দেখি মা কাঁদছে। সেদিন আর থাকতে পারিনি। মাকে জড়িয়ে ধরে বলি, আমি ফুটবল খেলেই সব পাল্টে দেব। তোমাকে আর কষ্ট পেতে দেব না।’ ছেলেবেলার দারিদ্রের সঙ্গে লড়াইয়ের ফলেই হয়তো মানসিক ভাবেও অনেক শক্তিশালী হয়ে উঠেছেন লুকাকু। যে কোনও পরিস্থিতিতে লড়াই করতে তিনি পিছপা হন না।

যেমন মঙ্গলবার (১০ জুলাই) বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে নিজের সেরাটা দিয়ে বেলজিয়ামকে স্বপ্নে ফাইনালে তুলতে বদ্ধপরিকর তিনি। তবে টিমের মধ্যে যাতে আত্মতুষ্টি না আসে তার জন্য সতীর্থদের সাবধান করেন দেশটির সর্বোচ্চ গোলদাতা। তিনি বলেন, ‘টুর্নামেন্টের সেরা দল ব্রাজিলকে হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠেছি ঠিকই, তবে আমরা এখনও বিশ্বকাপ জিতিনি। আমাদের লক্ষ বাকি দু‘ম্যাচ জিতে প্রথম বারের মতো শিরোপায় চুমু খাওয়া। আমরা সেই লক্ষ্যেই এগিয়ে যাচ্ছি।’