সৌদতে দুর্ঘটনায় নিহত মনিরুল ও হোসেন আলীর শোকের মাতম

বুধবার ভোরে সৌদি আরবের জেদ্দায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে মনিরুল মোল্যা (২৮) ও সৈয়দ হোসেন আলীর (৩২) বাড়ি নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলায়। তাদের দুই পরিবারেই চলছে শোকের মাতম । আত্মীয়স্বজন এবং পাড়া-প্রতিবেশীদের আহাজারিতে এলাকার বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে। অনেকে শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দিচ্ছেন।

বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার আড়পাড়া গ্রামের মৃত মহসিন মোল্যার ছেলে মনিরুলের বাড়িতে গিয়ে জানা গেছে, সাত ভাইবোনের মধ্যে মনিরুল সবার ছোট। জেলার সদর উপজেলার শাহাবাদ মাদ্রাসা থেকে কামিল পাস করে বড় ভগ্নিপতি চর মল্লিকপুর গ্রামের সৌদিপ্রবাসী মঞ্জুর শেখের মাধ্যমে এক বছর আগে সৌদি আরবে যায়।

নিহত মনিরুলের মা আমেনা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার ছেলে এবার দেশে ফিরে এসে বিয়ে করবে বলে আমাদের মেয়ে দেখতে এবং বাড়িঘর মেরামত করতে বলেছিল। কিন্তু তার সে স্বপ্ন আর পূরণ হলো না।’ এ সময় মনিরুলের বোন জেসমিন ও নাইচ বেগম বিলাপ করতে করতে জানান, ‘টাকা দিয়ে কী হবে? আমার ভাই বিদেশে গিয়েছিল অনেক টাকা আয় করতে কিন্তু সে এখন লাশ হয়ে ফিরছে।’

এ ছাড়া সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত উপজেলার লাহুড়িয়া গ্রামের সৈয়দপাড়ার সৈয়দ আশরাফ আলীর ছেলে সৈয়দ হোসেন আলীর বাড়িতেও মৃত্যুর খবরে চলছে কান্নার রোল। নিহতের স্ত্রী রাকিয়া বেগম তার দুই শিশু ছেলে ফাহাদ ও হামজাকে জড়িয়ে ধরে বিলাপ করে বলছে, ‘তোদের বাবা আর কোনো দিন আমাদের মাঝে ফিরে আসবে না। তোদের পৃথিবীতে বাবা বলে ডাকার আর কেউ থাকল না।’

নিহতের বড় ভাই সৈয়দ নাসির আলী জানান, হোসেন প্রথমে পাঁচ বছর কুয়েতে ছিল। দেশে ফিরে গত ৮-৯ মাস আগে সৌদি আরবে চলে যায়। তার মৃত্যুর খবরে বৃদ্ধ বাবা-মা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। এদিকে নিহত দুই পরিবারের সদস্যরা নিহত মনিরুল ও হোসেনের লাশ দ্রুত দেশে ফিরে আনার দাবি জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য, সৌদি আরবের জেদ্দায় বুধবার ভোরে কিং আবদুল আজিজ সড়কের সামারি কোর্ট ও রেড সি মলের মধ্যবর্তী এলাকায় মাইক্রোবাস উল্টে ছয় বাংলাদেশি প্রবাসী নিহত হয়। নিহতদের মধ্যে দুজন লোহাগড়া উপজেলার লাহুড়িয়ার সৈয়দ পাড়ার হোসেন আলী ও নোয়াগ্রাম ইউপির আড়পাড়া গ্রামের মনিরুল মোল্যা। এছাড়া উপজেলার কুমড়ি গ্রামের আফসার ফকিরের ছেলে মাসুদ ফকির গুরুতর আহত হয়ে জেদ্দার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে জানা গেছে।