মালয়েশিয়ায় দিশেহারা অবৈধ বাংলাদেশিরা

মালয়েশিয়ায় অবৈধ প্রবাসীদের বৈধ হওয়ার (রি-হায়ারিং প্রক্রিয়া) সময়সীমা শেষ হওয়ার সংগে সংগে অভিযানে নেমেছে দেশটির আইন শৃংখলাবাহিনী। অবৈধ ধরতে ইতিমধ্যে দেশটির আইনশৃংখলা বাহিনীর সম্মিলিত অভিযানে আটক হয়েছে ১৭শ’অবৈধ অভিবাসী।

আটক হওয়া অভিবাসীর তালিকায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রয়েছে বাংলাদেশিও। তবে রি-হায়ারিং প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরপরই দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগ অবৈধ অভিবাসী ধরতে মেগা-থ্রী নামে যে অপারেশন পরিচালনা করছে, সেই অপারেশনে দিশেহারা অবৈধ বাংলাদেশিরা।

শুধু তাই নয়, এই অভিযান থেকে বাঁচতে এবং কোন প্রক্রিয়ায় বৈধ হওয়া যায় সে বিষয়টি নিয়ে কোন কুল-কিনারা খুঁজে পাচ্ছেন না প্রবাসীরা। অন্যদিকে, মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন বিভাগের প্রধান দাতুকে সেরি মোস্তাফার আলী অবৈধ অভিবাসী ধরতে কঠোর হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন ‘যদি এক লক্ষ অবৈধ অভিবাসী মালয়েশিয়ায় অব্স্থান করে তাহলে সেখানেও আমরা অভিযান চালাবো’।

এদিকে, মালয়েশিয়ার অবস্থানরত অবৈধ বাংলাদেশি শ্রমিকদের ইমিগ্রেশনের দেয়া ‘থ্রি প্লাস ওয়ান’ পদ্ধতি অনুসরণ করে আগামী আগস্টের মধ্যে বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার তাগিদ দিয়েছে বাংলাদেশ হাইকমিশন।

মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশনের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরে পহেলা জানুয়ারি থেকে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ২০ হাজার অবৈধ অভিবাসীকে গ্রেফতার করেছে দেশটির অভিবাসন বিভাগ। এর মধ্যে বাংলাদেশি অভিবাসী আটক হয়েছে ৩ হাজার ৯৭৫, ইন্দোনেশিয়ার ৬ হাজার ৮৯৫, মায়ানমারের এক হাজার ৯৯৫ ছাড়াও অন্যান্য দেশের কয়েকশ’ অবৈধ অভিবাসী রয়েছে।

আটক হওয়া এসব অভিবাসীদের ভাগ্যে কী ঘটছে যাচ্ছে তা এখনো জানা যায়নি মালয় অভিবাসন কর্তৃপক্ষ থেকে।তবে চলমান মেগা-থ্রী অভিযানে বেশ হয়রানি আর বিপদের মধ্যে অন্যান্য দেশের অভিবাসীদের মতো বাংলাদেশি অভিবাসীরাও।

তাঁরা জানান, পুলিশ প্রত্যন্ত অঞ্চলে সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছে।যেখানে-সেখানে দাঁড় করিয়ে ভিসা ও কাগজপত্র দেখতে চাচ্ছে। প্রবাসীদের কর্মক্ষেত্রে গিয়েও অবৈধদের ধরতে বেশ ঝামেলা করছে।

মালয়েশিয়ার বাণিজ্যিক রাজধানী কুয়ালালামপুর, পেনাং, পুত্রজায়া ও জালানপাও এলাকায় বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংগে কথা বলে জানা যায়, অবৈধভাবে যারা মালয়েশিয়ায় কাজ করছেন তাদের জন্য আর মালয়েশিয়া উপযুক্ত নয়। বৈধ কাগজপত্র না থাকলে এখন আর কোনো সুযোগ নেই কাজ করার।

পুত্রজায়ার সন্নিকটে একটি গ্লাস কোম্পানিতে কাজ করেন বাংলাদেশের সবুজ হাসান, অবৈধ অভিবাসী ধরার বিষয়ে তাঁর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, প্রতিটা রাত কাটে শঙ্কা আর আটক হওয়ার ভয়ে।আশপাশের এলাকাগুলোতে পুলিশ রাতে ও দিনে কয়েকবার অভিযান চালাচ্ছে। একদিকে ইমিগ্রেশন পুলিশ, অন্যদিকে সাদা পোষাকধারী পুলিশ। কখন কিভাবে কাকে আটক করছে সে বিষয়ে কিছুই জানা যাচ্ছে না। তাছাড়া কোনো আত্মীয়-স্বজন ধরা পড়লেও ছাড়িয়ে নিয়ে আসার কোনো সুযোগ নেই।

অবৈধ শ্রমিকদের গ্রেফতারে মালয়েশিয়া সরকারের মেগা-থ্রী অপারেশন এর বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ হাইকমিশনের শ্রম কাউন্সিলর মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, আপনারা যারা অবৈধ থেকে মালয়েশিয়ায় কাজ করছেন, এবং যথাযথ সময়ে মালয়েশিয়া সরকারের দেয়া বৈধকরণ প্রক্রিয়ার আওতায় অংশ নেননি, তাদেরকে আগামী ৩০ অাগস্টের মধ্যে দেশে ফিরে যাওয়ার আহবান জানাচ্ছি। যদি কোনো শ্রমিক গাফিলতি করে তাহলে মালয়েশিয়ার আইন প্রয়োগকারী সংস্থা যে কোনো মুহূর্তে গ্রেফতার করে ওই শ্রমিককে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে পারে।

উল্লেখ্য, মালয়েশিয়ায় অবৈধদের বৈধকরণ প্রক্রিয়ায় দেশটির সরকার যে সময়সীমা বেধে দিয়েছিলো তা শেষ হয়েছে গত ৩০ জুন। এরপর থেকে অবৈধ ধরতে সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত রেখেছে মাহাতির মোহাম্মদ নেতৃত্বাধীন সরকার।