মালয়েশিয়া হতে দেশে ফিরতে হবে দুই-আড়াই লাখ কর্মীকে!

মালয়েশিয়ায় গত চারদিনে বাংলাদেশী ৪ হাজার কর্মীসহ বিভিন্ন দেশের ২০ হাজার অবৈধ অভিবাসীকে আটক করেছে অভিবাসন বিভাগ। ৩০ জুন বৈধ হওয়ার ‘রিহায়ারিং’ কর্মসূচীর শেষ দিন থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত এদের আটক করা হয়। আটক অভিযান চলমান রয়েছে।

আটক ব্যক্তিদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এতে বাংলাদেশের দুই থেকে আড়াই লাখ কর্মীকে দেশে ফিরে আসতে হবে। অন্যদিকে, দেশটির মানবসম্পদমন্ত্রী এম কুলাসেগারান বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করেছেন। মানবসম্পদ পাচারের অভিযোগের মুখে থাকা একটি সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত মালয়েশিয়া কোন কর্মীকে নিয়োগ না দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে।

দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগের মহাপরিচালক দাতুকে সেরি মোস্তাফার আলী সাংবাদিকদের জানিয়েছে, আটক অবৈধ অভিবাসীদের ইন্দোনেশিয়ার কর্মীই বেশি। এরপরই বাংলাদেশের অবস্থান। ইমিগ্রেশন বিভাগ দেশটিতে বসবাসরত অবৈধ অভিবাসীদের ধরতে ১ জুলাই থেকে ‘মেগা-থ্রি’ নামে অভিযান শুরু করেছে।

মেগা থ্রি অভিযানের চারদিনে বাংলাদেশের চার হাজারের বেশি কর্মী আটক হয়েছে। অভিযান চলমান থাকবে। অভিবাসন খাতে সব ধরনের অনিয়ম দুর্নীতি দূর করতে আটক অভিযান কতদিন চলবে তা তিনি পরিষ্কার করে কিছু বলেননি। রি-হায়ারিং প্রোগ্রামের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকে মেগা-থ্রি নামে এই অভিযান শুরু করা হয়েছে। মালয়েশিয়ায় বিভিন্ন পথে বিভিন্ন দেশের কয়েক লাখ লোক অবৈধ প্রবেশ করেছে। অবৈধ এই ¯্রােত ঠেকাতে অভিযান চালানো হচ্ছে।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ২০১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয় অবৈধ অভিবাসীদের বৈধকরণ প্রক্রিয়া। এরপর ১৬ সালের ১৫ আগস্ট নিবন্ধনের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর করা হয়। পরবর্তীতে মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি থেকে সর্বশেষ সময় বাড়িয়ে চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত করা হয়। এই সময় শেষ হওয়ার পরই দেশটির কর্তৃপক্ষ আটক অভিযান শুরু করেছে। এই কর্মসূচীর আওতায় অনেক অবৈধ কর্মী বৈধ হয়েছেন। যারা এ সুযোগ নিতে পারেননি তারা আর দেশটিতে বসবাস করতে পারবেন না।

তাদের দেশে ফিরতেই হবে। পুলিশের হাতে আটক হলেও তাদের দেশে দেশে ফিরতে হবে। কারণ অবৈধ কোন কর্মীকে মালয়েশিয়ার কোন কোম্পানি নিয়োগ দিতে পারবে না। যদি কোন মালিক অবৈধ কর্মীদের নিয়োগ দেন তাহলে ওই মালিককেও শাস্তি পেতে হবে। ফলে কোন মালিকই এমন ঝুঁকি নেবেন না। বর্তমানে বৈধ করণ প্রক্রিয়ার সুযোগ না থাকায় মালয়েশিয়া জুড়েই এক যোগে অভিযান চালানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশের প্রায় ২০ হাজার কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। আটকদের ৩০ আগস্টের মধ্যে স্বেচ্ছায় দেশে ফেরত যেতে হবে। না গেলে জেল জরিমানার আওতায় চলে যেতে হবে।

দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগ ঘোষণা করেছে, অবৈধ অভিবাসীদের ধরতে অভিযান অব্যাহত থাকবে। যেসব মালিক অবৈধ অভিবাসীদের নিয়োগ দিয়েছেন বা পুনঃনিবন্ধন করাননি তাদেরও গ্রেফতার করা হবে। দেশে অবৈধ অভিবাসীর ¯্রােত ঠেকাতে এই পদক্ষেপ নেয়া হযেছে। এর আগে ১৯ হাজার ৯৭৯ বিদেশী অভিবাসীকে আটক করে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে। এরমধ্যে ৫৩৬ মালিকের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আটক হওয়া অভিবাসীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছেন ইন্দোনেশিয়ার। প্রতিবেশী এই দেশটির ৬ হাজার ৮৯৫ অবৈধ অভিবাসীকে আটক করা হয়েছে। এরপরই রয়েছে বাংলাদেশ। ৪ হাজার বাংলাদেশীকে আটক করা হয়েছে। বাংলাদেশী পাসপোর্ট নিয়ে ধরা পড়েছে ১ হাজার ৯৯৫ রোহিঙ্গা।

জানা গেছে, মালয়েশিয়ায় বৈধভাবে জনশক্তি রফতানি শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত দেশটিতে প্রায় তিন লাখ কর্মী সাগর পথে ঢুকেছেন। এখনও এই ধারা বজায় রয়েছে। এছাড়া ট্যুরিস্ট, ছাত্র ভিসা নিয়েও হাজার হাজার কর্মী মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করেছে। এসব অবৈধ অভিবাসী মুক্ত করে নতুন করে মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগ করবে নতুন সরকার।