সিঙ্গাপুরে যেতে রাজি হয়েছেন খালেদা জিয়া

বেগম জিয়াকে প্যারোলে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে তাঁর পরিবার। আজ দুপুরে সরকারের দায়িত্বশীল উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে বেগম জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার এই প্রস্তাব দেন। গতকাল শনিবার শামীম ইস্কান্দার সহ বেগম জিয়ার ৫ আত্মীয় কারাগারে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। দেড় ঘণ্টার এই সাক্ষাতে বেগম জিয়ার মুক্তির প্রসঙ্গ নিয়ে মূলত: কথা হয়। এখন আর ইউনাইটেড হাসপাতাল নয়, বরং বিদেশে চিকিৎসা নিতে আগ্রহী বেগম খালেদা জিয়া। বেগম জিয়ার পরিবার এর আগেও তাঁর প্যারোলে মুক্তি প্রক্রিয়া অনেকদূর এগিয়ে ছিল। কিন্তু জিয়া পরিবারের বাইরে কাউকে বিএনপির নেতৃত্বে আনতে হবে- এই শর্তে বেঁকে বসেন বেগম জিয়া এবং তারেক দুজনই। ভেস্তে যায় প্যারোলে মুক্তি নিয়ে লন্ডন যাবার প্রক্রিয়া। এরপর তিন মাস পার হয়েছে। বিএনপি না পেরেছে বেগম জিয়ার মুক্তির দাবিতে আন্দোলন করতে, না পেরেছে আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে বেগম জিয়াকে জামিনে মুক্ত করতে। এদিকে জিয়া এতিমখানা দুর্নীতি মামলার হাইকোর্টে আপিল শুনানি দ্রুত সম্পন্ন করার উদ্যোগ নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আদালত খোলার পরপরই দুদকের আইনজীবী প্রসঙ্গটি সংশ্লিষ্ট হাইকোর্ট বেঞ্চে উত্থাপন করেছেন। দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম, ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে আপিল নিষ্পত্তির জন্য হাইকোর্টের নির্দেশনাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। বেগম জিয়া মনে করছেন, এই মামলায় হাইকোর্ট যদি তাঁর বিরুদ্ধে দেওয়া নিম্ন আদালতের দণ্ড বহাল রাখে, তাহলে তাঁর রাজনৈতিক জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটবে। এ কারণেই, তিনি এই মামলার শুনানি ঝুলিয়ে দিয়ে আবার প্যারোলে আগ্রহী হয়েছেন। এই মামলায় হাইকোর্ট যদি তাঁর বিরুদ্ধে দেওয়া নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখে, তাহলে তাঁকে যেমন দীর্ঘমেয়াদী কারাভোগ করতে হবে, তেমনি তিনি আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের যোগ্যতাও হারাবেন। এ জন্যই কৌশলগত কারণে বেগম জিয়া আবার প্যারোলে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। তাঁর ভাইকে তিনি প্যারোলের জন্য সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ নতুন করে শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন বলে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া গেছে। শামীম ইস্কান্দারও বোনের নির্দেশনা পেয়ে আবার যোগাযোগ শুরু করেছেন।

একটি সূত্র বলছে, বেগম জিয়াকে মুক্ত করার ব্যাপারে সরকারের উপরও চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন বেগম জিয়াকে মুক্ত করার জন্য সরকারের একাধিক ব্যক্তিকে ‘পরামর্শ’ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

গত মার্চে সরকার ৫ শর্তে বেগম জিয়াকে প্যারোলে মুক্তি দিতে রাজি হয়েছিল। এই ৫ শর্তের মধ্যে ছিল বেগম জিয়া এবং তাঁর পুত্র আপাতত বিএনপির নেতৃত্ব থেকে অবসর নেবেন। বিএনপি আগামী জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে অংশ নেবে। বেগম জিয়া আগামী নির্বাচন থেকে দূরে থাকবেন, ইত্যাদি। কিন্তু সেসময় সমঝোতা অনেক দূর এগুলেও নেতৃত্ব ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারে বেগম জিয়া তীব্র আপত্তি জানান। তাঁর আপত্তির কারণেই সেসময় বেগম জিয়ার সমঝোতার প্যারোল প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। এবার অবশ্য তাঁর প্যারোলের ব্যাপারে সরকারেই অনীহা রয়েছে বলে জানা গেছে।