খালেদা জিয়ারএই চিঠি নিয়েই তাহলে বিএনপির ভিতরে বাইরে এত তোলপাড়!

৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারান্তরীণ বেগম খালেদা জিয়া। নাজিমউদ্দিন রোডের পুরোনো কারাগারে তিনি নি:সঙ্গ বন্দী। তাঁর জন্য রয়েছে সার্বক্ষণিক প্রহরী, কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী। যারা তাঁর প্রহরার দায়িত্বে আছেন তাঁদের কঠোর নজরদারির মধ্যে রাখা হচ্ছে। নিরাপত্তা প্রহরীদের ঘন ঘন বদলি করা হচ্ছে। আগের দিনও একজন কারাবন্দী জানেন না পরদিন তাঁর বেগম জিয়ার ডিউটি আছে কিনা। কিন্তু বেহুলার বাসর ঘরে যেমন ছিদ্র ছিল, সেখান দিয়ে সাপ ছোবল দিয়েছিল লখিন্দরকে। ঠিক তেমনি বেগম জিয়ার কারাগার থেকে দলের নেতাকর্মীদের নানা বার্তা পাঠাচ্ছেন বলে গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য এসেছে।

বিএনপির নেতাদের মধ্যেও ফিসফাস আলোচনা হয় বেগম জিয়ার গোপন বার্তা নিয়ে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্তত দুটি বৈঠকে বেগম জিয়ার চিঠি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, বেগম জিয়া তাঁর আত্মীয়দের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে এই চিঠি হস্তান্তর করেছেন। একটি অসমর্থিত সূত বলছে, কারাগার থেকেই বেগম জিয়া নেতাদের নানারকম বার্তা পাঠাচ্ছেন। বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা এ ব্যাপারে মুখ খুলতে রাজি হননি। তবে, বিএনপির বিভিন্ন নেতা আকার ইঙ্গিতে এটা স্পষ্ট করেছেন যে, তাদের সঙ্গে বেগম জিয়ার যোগাযোগ আছে। বেগম জিয়া নেতাদের কাছে নানারকম বার্তা পাঠাচ্ছেন।

একটি সূত্র বলছে, গাজীপুর বিপর্যয়ের পর তিন সিটিতে নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে কারান্তরীণ বেগম জিয়াই সবুজ সংকেত পাঠিয়েছেন। একটি চিরকুটে তিনি তিন সিটিতে বিএনপিকে অংশগ্রহণের নির্দেশ দেন। একমাত্র গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ছাড়া বিএনপির কোনো নেতাই ঐ চিরকুট নিয়ে চ্যালেঞ্জ করেননি। গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এনিয়ে প্রশ্ন তুললেও বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এটা ম্যাডামেরই লেখা।‘ আরও দুজন বিএনপি নেতাও ঐ চিরকুটের লেখা বেগম জিয়ার বলে রায় দেন। ওই চিরকুট ছাড়াও আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ সংক্রান্ত একটি চিরকুট নিয়েও বিএনপিতে তোলপাড় চলছে। গত শনিবার বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্থায়ী কমিটির বৈঠকে পাঞ্জাবীর পকেট থেকে আরও একটি চিরকুট বের করেন। যাতে বলা হয়েছে, ‘নির্বাচনে যেতেই হবে। নির্বাচন ছাড়া পথ নাই। প্রস্তুতি নাও।’ এই চিরকুটের লেখাও বেগম জিয়ার লেখার মতো হুবহু। কিন্তু এর ব্যাখ্যা নিয়ে বিএনপির সিনিয়র নেতারা একমত হতে পারেনি। অনেকে বলেছে, এত নিরাপত্তার মধ্যে এভাবে জেল থেকে চিরকুট আসে কীভাবে? গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এক ধাপ এগিয়ে বলেন, ‘স্বাক্ষর যদি জাল করা যায়, তাহলে হাতের লেখা কেন জাল করা যাবে না?’ ঐ বৈঠকে গয়েশ্বর স্পষ্ট করেই বলেছেন, সরকারের লোকজন এসব চিরকুট বাজারে ছাড়ছে। ম্যাডাম চিরকুট লেখার মানুষ নন। আর কি এমন হলো যে, জেলে গিয়ে তিনি মত পাল্টালেন। যদিও বিএনপি মহাসচিব দৃঢ় ভাবেই বলছেন এই ’চিরকুট’ জেল থেকেই পাওয়া। গোপনীয়তার স্বার্থে তিনি এটা কিভাবে পেয়েছেন সে সম্পর্কে কিছু বলতে রাজি হন নি। কিন্তু এসব চিরকুট নিয়ে বিএনপিতে রীতিমতো তোলপাড় চলছে। বিএনপির অনেকেরই ধারণা, এই চিরকুট গুলো একটি মহল তৈরি করছে। বিএনপিতে বিভ্রান্তি সৃষ্টিই এই চিরকুটের উদ্দেশ্য। অনেকে অবশ্য এই চিরকুটের সত্যতা আছে বলে মনে করছেন।

বাংলা ইনসাইডার