মেসি জাতীয় দলে হয়ে কিছু জেতার সুযোগ দ্রুতই পেয়ে যাচ্ছেন। আগামী দুই বছরে দুটি বড় টুর্নামেন্ট পাবেন। তিন বছরে সেটি তিনটি টুর্নামেন্টও হয়ে যেতে পারে। চার বছরে চারটি!
আর্জেন্টিনার জার্সিতে কিছু জেতা হয়নি তাঁর, কথাটা পুরো সত্যি নয়। লিওনেল মেসি যুব বিশ্বকাপ জিতেছেন। জিতেছেন অলিম্পিক। কিন্তু এসব ছেলে ভোলানো ছড়ায় মেসি নিজেই সান্ত্বনা খুঁজবেন না। চার-চারটি ফাইনালে উঠেও জাতীয় দলের হয়ে কিছু জিততে না পারা অবসরের দুয়ারে নিয়ে গিয়েছিল তাঁকে। এবার আরও একটি বিশ্বকাপ-ব্যর্থতার পর আর্জেন্টিনার অধ্যায়টির শেষে কি চিরতরে যতিচিহ্ন এঁকে দেবেন মেসি?
প্রশ্নটা নিয়ে গুঞ্জরণ চলছে। মেসি নিজে এখনো কিছু বলেননি। বিশ্বকাপের আগে যদিও জোর গলাতেই বলেছিলেন, বিশ্বকাপ না জেতা পর্যন্ত অবসর নেবেন না। কিন্তু এই কথাটিকে ধনুকভাঙা পণ ভেবে নেওয়ার সুযোগ নেই। কারণ, মেসি এ-ও বলেছিলেন, বিশ্বকাপ জেতার জন্য তাঁদের প্রজন্মের এটাই শেষ সুযোগ। ২০২২ বিশ্বকাপে মেসি-প্রজন্মের সিংহভাগই থাকবে না।
মেসি আশার দিকটাও দেখতে পারেন। কদিন আগে ৩১-এ পা রাখা মেসি জাতীয় দলে হয়ে কিছু জেতার সুযোগ কিন্তু দ্রুতই পেয়ে যাচ্ছেন। শুধু তা-ই নয়; আগামী দুই বছরে দুটি বড় টুর্নামেন্ট পাবেন। তিন বছরে সেটি তিনটি টুর্নামেন্টও হয়ে যেতে পারে। চার বছরে চারটি! ২০১৯ সালেই কোপা আমেরিকা। এবারের আসর হবে ব্রাজিলে। বেশ জমজমাট এক কোপা আমেরিকা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০২০ সালেও আবার একটি কোপা আমেরিকার দেখা মিলবে। অনেকটা ২০১৫ ও ২০১৬ সালের মতো। সেবারও পরপর দু বছর কোপা আমেরিকার আসর বসেছিল।
কোপা আমেরিকা সাধারণত বিশ্বকাপের পরের বছরেই হয়। গতবারও হয়েছিল। কিন্তু শতবর্ষপূর্তি উপলক্ষে ২০১৬ সালে বিশেষ কোপা আমেরিকার আসর বসে। দুবারই আর্জেন্টিনা ফাইনালে উঠেও পারেনি চিলির কাছে। দুবারই ফাইনালে হেরেছে পেনাল্টি শুট আউটে। এর মধ্যে ২০১৬ আসর শেষে মেসি তো অবসর ঘোষণাই করে দেন। ২০০৭ কোপা আমেরিকাসহ সব মিলিয়ে চারটি ফাইনালে ওঠার পরও যে পারেননি কিছু জিততে!
মেসিকে আরও সুযোগ এনে দিচ্ছে সামনের দুটি বছর। ২০১৫ কোপা আমেরিকা হওয়ার কথা ছিল ব্রাজিলে। কিন্তু ২০১৩ সালে কনফেডারেশনস কাপ, ২০১৪তে বিশ্বকাপ আর ২০১৬তে অলিম্পিক আয়োজনের ভার নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে ব্রাজিল চিলির সঙ্গে আয়োজনের ভার অদলবদল করে। ২০১২ সালেই এটা ঠিক করে রাখা হয়েছিল, ২০১৫ আসর আয়োজন করবে চিলি, ২০১৯ কোপা আমেরিকা হবে ব্রাজিলে। চার বছর পরপর আয়োজন করা এই আসরের স্বাগতিক দেশ হয় বর্ণনাক্রম অনুসারে। চিলির ‘সি’ এর আগেই ব্রাজিলের ‘বি’ আসে।
গতবারের অদলবদলের কারণে এবারের আয়োজক হবে ব্রাজিল। পরের বছর আরও একটা কোপা আমেরিকা, সেটির আয়োজক যেমন ইকুয়েডর (ডি দিয়ে কোনো দেশ নেই দক্ষিণ আমেরিকায়)। এখন থেকে কোপা আমেরিকা আর ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ হবে একই বছরে। দক্ষিণ আমেরিকা আর ইউরোপের শ্রেষ্ঠত্বের দুই আসর একই সময়ে আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়ার পেছনে আছে ক্লাবগুলোর সূচি। দক্ষিণ আমেরিকার অনেক ফুটবলার ইউরোপের ক্লাবগুলোতেই খেলেন। ফলে পরপর দুই বছর জাতীয় দলের জন্য খেলোয়াড় ছেড়ে দেওয়ার এই ‘ঝামেলা’ ক্লাবগুলো এক বছরেই কাটিয়ে উঠতে চায়। ফলে ২০২০ সালে ইউরোর পাশাপাশি হবে কোপা আমেরিকাও। তখন থেকে প্রতি চার বছরে তা-ই হবে।
ফলে মেসি আরও দুটি বড় টুর্নামেন্ট তো পাচ্ছেন। যদি ২০১৯-এ ব্রাজিলে গিয়ে কোপা আমেরিকা জিতে আসতে পারেন, যার সম্ভাবনা নিতান্তই ক্ষীণ বলে মনে হচ্ছে এখনকার বাস্তবতায়; আরও একটি বড় টুর্নামেন্ট পাবেন মেসি। ২০২১ সালে কাতারে হবে কনফেডারেশনস কাপ। বিশ্বকাপের আগের বছরে স্বাগতিক দেশে একটি মহড়া টুর্নামেন্ট হয়। যাতে ফিফার ছয় মহাদেশীয় চ্যাম্পিয়ন, বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন আর স্বাগতিক দেশ খেলে।
২০১৯-এ কোপা আমেরিকা, ২০২০-এ আরও একটি কোপা আমেরিকা, ২০২১-এ কনফেডারেশনস কাপ, ২০২২-এ বিশ্বকাপ…লিওনেল মেসির অবসর নেওয়া হবে বোকামি। এই সময়ে আর্জেন্টিনাকে তাঁর সবচেয়ে বেশি দরকার!