মালয়েশিয়াকে গড়তে হবে কোরআন ও নবীর (সা.) নির্দেশনা অনুযায়ী: মালয়েশিয়ান উপ প্রধানমন্ত্রী

মালয়েশিয়ার উপ প্রধানমন্ত্রী ডা. ওয়ান আজিজাহ ওয়ান ইসমাইল বলেছেন, বর্ণবাদ ও চরমপন্থা সহ একাধিক ব্যাখ্যার কারণে আজকে ইসলাম সঙ্কটের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে। রোববার দেশটির পারমাতং পুয়াহ’য় অনুষ্ঠিত একটি ধর্মীয় সমাবেশে তিনি এই মন্তব্য করেন।

উপ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা নবী করিম (সা.) দিকে তাকালে দেখতে পাই, তিনি বহু বিশ্বাসে বিভক্ত মদিনাবাসীদের একটি সম্প্রদায়ের মধ্যে একত্রিত করেছিলেন; যেখানে প্রত্যেকেরই একই অধিকার ও দায়িত্ব ছিল। সেসময়ে আমরা এমন একটি সমাজ দেখতে পাই যেখানে মুসলমান ও অমুসলমানরা একসাথে বসবাস করেছে।’

তিনি বলেন, ‘ইসলামের অনুসারীরা যদি অব্যাহতভাবে মানবজাতির মধ্যে বিভেদ ও দ্বন্দ্ব ছড়িয়ে দিতে থাকে, তবে ইসলামের বৃদ্ধি ঘটবে না এবং অন্যেরা ইসলামের সৌন্দর্যের প্রতি আকৃষ্ট হবে না।’ ড. ওয়ান আজিজাহ বলেন, মুসলমানদের তাদের ত্রুটিগুলি মনে রাখা এবং সেগুলো সংশোধন করার জন্য সংগ্রাম করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একে অপরকে সাহায্য ও পরামর্শ দেওয়ার মাধ্যমেই জীবনকে আলোকিত করার বিষয়টি প্রত্যেককে স্মরণ রাখা উচিৎ।

তিনি বলেন, ‘কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠী বা জাতির প্রথা বা ধর্ম-কর্মের উপর ভিত্তি করে ইসলামের অনুসরণ না করে আসুন আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দেখানো পথে এর অনুসরণ করি।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমি এই অনুষ্ঠানে অন্যান্য বিশ্বাসী মানুষ এবং নেতাদের দেখতে পেয়ে অত্যন্ত আনন্দিত। এই অংশগ্রহণ জাতিগত সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করেছে। আমাদের কোরআন ও নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশনা অনুযায়ী আমাদের মালয়েশিয়াকে গড়তে হবে।’

মালয়েশিয়ার প্রথম নারী উপ-প্রধানমন্ত্রী ওয়ান আজিজাহ ওয়ান ইসমাইল একজন চিকিৎসক, চক্ষু বিশেষজ্ঞ, দৃষ্টি সমস্যায় আক্রান্তদের আরোগ্যের কারিগর, আনোয়ার ইব্রাহীমের স্ত্রী। তার জীবন সংগ্রাম নিয়ে লেখা হয়েছে ‘স্ট্রাগল ফর জাস্টিস: দি স্টোরি অব ডা. ওয়ান আজিজাহ ওয়ান ইসমাইল অব মালয়েশিয়া’। একজন সুযোগ্য কন্যা, একজন মমতাময়ী মা একজন দায়িত্বশীল স্ত্রী, একজন সমাজসেবক, একজন রাজনীতিবিদ – সবকিছুর সমন্বয় ঘটেছে ৬৫ বছর বয়সী এই সংগ্রামী নারীর জীবনে।

১৯৫২ সালে জন্মগ্রহণ করেন ডা. আযিযাহ ইসমাইল। Tunku Kurshiah কলেজে অধ্যায়নের পরে তিনি আয়ারল্যান্ডের রয়াল কলেজ অব সার্জনে গাইনোকলোজি ও অবসটেট্রিকসে কৃতিত্বের স্বাক্ষর হিসাবে গোল মেডেল পান। পরে অপথ্যালমলজিতে বিশেষজ্ঞ হন। সরকারি চাকরিতে যোগ দেয়ার পরে দীর্ঘ ১৪ বছর চিকিৎসা সেবা দেন। এরপরে সামাজিক কাজের সাথে জড়িয়ে পড়েন এবং জাতীয় ক্যান্সার কাউন্সিলের একজন উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৯৮ সালে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের স্বীকার হয়ে যখন আনোয়ার ইব্রাহীম গ্রেফতার হন তারপর থেকেই তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ১৯৯৯ সালে Keadilan Rakyat নামে দল প্রতিষ্ঠা করেন এবং প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হন। তার দল পরে মালয়েশিয়ান পিপলস পার্টির সাথে একীভূত হয়। সেখানেও তিনি সভাপতি নির্বাচিত হন। ডাঃ আযিযাহ ইসমাইল প্রথম সংসদ নির্বাচন করেন ১৯৯৯ সালে এবং সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

এবারের জাতীয় নির্বাচনে তার দল মাহাথির মোহাম্মাদের সাথে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশ নেয় এবং বড় ব্যবধানে জয়লাভ করে। আনোয়ার ইব্রাহীমের অনুপস্থিতিতে দলকে ধরে রাখা, সামাজিকও রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বৈষম্য দূর করাই ছিল তার রাজনীতিতে আসার মূল কারণ। পেশা এবং রাজনীতির বাইরে তিনি একজন চমৎকার ব্যক্তিও। ৬ সন্তানের জননী তিনি। নাতি নাতনি নয়জন।

মায়ের সম্পর্কে বলতে গিয়ে তার বড় মেয়ে, যিনি নিজেও একজন সংসদ সদস্য, নুরুল ইজ্জাহ আনোয়ার বলেন, ‘আমার মা জীবনে অনেক ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে এসেছেন। তিনি একজন আধ্যাত্মিক মানুষ। সবকিছুতে তিনি স্রষ্টার ওপর নির্ভর করেন। শত ব্যস্ততার পরেও তিনি পরিবারকে সময় দেন। সপ্তাহে একদিন সন্তান ও নাতি নাতনিদের নিয়ে একসাথে বসেন পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় রাখতে।’

আনোয়ার ইব্রাহীম গ্রেফতার হওয়ার পরে ২০০০ সালে একবার এক সাক্ষাৎকারে সাংবাদিকরা তাকে বলেন, কষ্টের মাঝেও আপনি দেখছি সবসময় হাসিমুখে। জবাবে তিনি বলেন, আমি কুরআন পড়ি। ওখানে একটা আয়াত আছে যে, আল্লাহ কাউকে তার দায়িত্ত্বের ওপরে কিছু চাপিয়ে দেন না। তাই আমি মনে করি যা কিছুই ঘটুক তার পেছনে কল্যাণ আছে।