আমাদের মধ্যে একটা সাধারণ ধারণা বিদ্যমান যে, তেমন ক্ষমতাসম্পন্ন জ্যোতিষী হলে মৃত্যুর দিনক্ষণও জানাতে পারেন। কিন্তু বাস্তবে তেমন কি জ্যোতিষীর দেখা মেলে? তার আগে আর একটা প্রশ্ন— জ্যোতিষ শাস্ত্র কি মৃত্যুর কথা প্রকৃতই জানাতে পারে?
মৃত্যুর দিন ও ক্ষণ আগাম জানানোকে জীবনের সবথেকে বড় প্রেডিকশন বলে ধরা হয়। জ্যোতিষীরা সাধারণত এই জাতীয় প্রশ্ন এড়িয়ে যান। অথবা একটা অনুমানিক উত্তর দেন। কিন্তু সনাতন জ্যোতিষ শাস্ত্র অনুযায়ী, মৃত্যুর দিন ও ক্ষণ নির্ণয় করা যায়। কিন্তু এই হিসাব অত্যন্ত কঠিন। গ্রহের অবস্থান, দশা, অন্তর্দশা ইত্যাদির অতি সূক্ষ্ম বিচার থেকে এই বিশেষ ভবিষ্যদ্বাণী করা সম্ভব বলেই জানায় জ্যোতিষ শাস্ত্র।
জ্যোতিষে মৃত্যুর ভবিষ্যদ্বাণী করার ক্ষেত্রে কোনও শর্টকাট পদ্ধতি নেই। বহু বিষয়কে মাথায় রেখে এই কাজটি করতে হয়। কিন্তু ঠিক কোন মুহূর্তে মৃত্যু আসন্ন, তা জানা যায় না। কারণ জ্যোতিষ মূলত ইঙ্গিতের শাস্ত্র। গ্রহের অবস্থান থেকে এখানে মানুষের ভবিষ্যত সম্পর্কে জানানো হয়। তেমন কোনও একটিমাত্র গ্রহ নেই যা কালান্তক হিসেবে কারোর কুণ্ডলীতে আবির্ভূত হবে। বেশ কিছু গ্রহ একত্রে এই মহাদশাকে নির্মাণ করে। বিষয়টি অত্যন্ত জটিল। তবে কয়েকটি গ্রহের অবস্থান থেকে মৃত্যুযোগকে বোঝা যায় বলেই জানান জ্যোতিষীরা। এখানে তাদের কথা বর্ণিত হল—
• শনি— শনিগ্রহ অনেক সময়েই কোনও কিছুর সূত্রপাত অথবা অন্তকে নির্দেশ করে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে মৃত্যুকে নিশ্চিত ভাবে সে জানাতে পারে। কোনও সম্পর্কের অন্ত, চাকরি যাওয়া ইত্যাদি ‘মৃত্যু’ শনিগ্রহের অবস্থান থেকে জানা গেলেও প্রকৃত মৃত্যুর কথা জানা যায় না।
• ইউরেনাস— এই গ্রহ শনির বিপরীতে কাজ করে। কুণ্ডলীতে এর সহসা উদয় হলে আকস্মিক মৃত্যুর যোগ দেখা দিতে পারে বলে জানায় জ্যোতিষ শাস্ত্র।
• নেপচুন— এই গ্রহের অবস্থান জল সংক্রান্ত অনেক কিছুকেই জানাতে সক্ষম। জলে ডুবে মৃত্যুর কথা এই গ্রহের অবস্থান থেকে বোঝা যায় বলেই ধারণা শাস্ত্রের।
• প্লুটো বা যম— অতি ভয়ঙ্কর মৃত্যুর সঙ্গে এই গ্রহের অবস্থানের যোগ রয়েছে। এই মৃত্যুও আকস্মিক।
• মঙ্গল— অপঘাতে মৃত্যুর সঙ্গে মঙ্গলের যোগ রয়েছে। হত্যা, অগ্নিকাণ্ড ইত্যাদি কারণে মৃত্যুর যোগ মঙ্গলের অবস্থানের ফলে ঘটতে পারে।
• শুক্র— ঘুমের মধ্যে মৃত্যুর সঙ্গে শুক্রের দশা সম্পর্কযুক্ত।
• বৃহস্পতি— ক্যানসার বা ওই জাতীয় অসুখের ফলে মৃত্যুর কথা জানাতে পারে বৃহস্পতির অবস্থান। এক্ষেত্রে মৃত্যু ধীরে আসে।
• রবি— সূর্যের অবস্থানের সঙ্গে অন্য গ্রহগুলির অবস্থানকে মিলিয়েই মৃত্যুযোগকে নির্ধারণ করে জ্যোতিষ শাস্ত্র। সেক্ষেত্রে এই বিচারে রবির ভূমিকা সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ।
এই সব সত্ত্বেও মৃত্যু এক প্রহেলিকা হিসেবে বিদ্যমান জগৎ সংসারে। বহু হিসেব-নিকেশ সত্ত্বেও তাকে সঠিক ভাবে জানা সম্ভব হয় না বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই। খুবই দক্ষ জ্যোতিষীরা হয়তো এই কাজটি সম্পন্ন করতে পারেন। কিন্তু একথাও সত্যি, জীবনের অপ্রিয়তম সত্যকে কোনও জ্যোতিষীই জানাতে চান না।