ইউরোপ ছাড়তে হবে লক্ষাধিক বাংলাদেশিকে!

অভিবাসন ইস্যু নিয়ে ইউরোপীয় দেশগুলোর টানা-পোড়ন চলছে দীর্ঘদিন ধরে।কখনো অভিবাস নিয়ে স্থায়ী সিদ্ধান্ত, আবার কখনো মধ্যপ্রাচ্যের শরণার্থী ফেরাতে চুক্তি। এসব কিছু নিয়ে দীর্ঘ সময় অসস্তিতে আছে শরণার্থী আশ্রয়ে শীর্ষ দেশ জার্মানিসহ অভিবাসী বান্ধব দেশগুলো।

তবে অভিবাসন ইস্যুতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্য দেশগুলো যে নতুন চুক্তিতে সম্মত হয়েছে, তাতে ইউরোপ ছাড়তে হতে পারে এক লাখ বাংলাদেশিকে।নতুন চুক্তি কার্যকর হলে এসব বাংলাদেশীর ইউরোপে থাকার আর কোনো সুযোগ থাকছে না। কারণ ইইউভুক্ত ২৮টি দেশ অভিবাসন ইস্যুতে গতকাল যে চুক্তিতে সই করেছে, তাতে বেশ জোর দিয়েই অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর কথা বলা হয়েছে।

অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে মহাদেশীয় সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ, ইউরোপে থাকা অভিবাসন-প্রত্যাশীদের বিশেষ হোল্ডিং সেন্টারে রাখা এবং আবেদন প্রত্যাখ্যাত হলে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইইউ। অভিবাসন-প্রত্যাশীদের এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাওয়া বন্ধ করতে এবং তুরস্ক ও লিবিয়ার মতো ইউরোপের সীমান্তের কাছের দেশগুলোকে অভিবাসন ঠেকাতে প্রণোদনা দিতেও একমত ইইউ সদস্যরা।

এছাড়া যাদের অভিবাসন বা আশ্রয়ের আবেদন গৃহীত হয়নি এবং যারা ইউরোপে সুরক্ষা পাওয়ার দাবিদার নন, তাদের ফেরত পাঠাতে সংশ্লিষ্ট দেশের সংগে সহযোগিতার সিদ্ধান্ত হয়েছে। চুক্তির এসব শর্তই বিপদে ফেলেছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অবৈধভাবে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের।

চলতি মাসে ইউরোপীয় পরিসংখ্যান দপ্তর ইউরোস্ট্যাটের প্রকাশিত হিসাব মতে, অবৈধভাবে ইইউতে প্রবেশ করা নাগরিকের সংখ্যা বিচারে বাংলাদেশের অবস্থান ৩০টি দেশের মধ্যে ১৬তম। ২০০৮ সাল থেকে সেখানে অবৈধভাবে গেছেন মোট এক লাখ ৪ হাজার ৫৭৫ বাংলাদেশি। ২০০৮-১৫ সময়কালে মোট ৯৩ হাজার ৪৩৫ জন বাংলাদেশি অবৈধ অনুপ্রবেশ করে।

ইইউর নতুন সিদ্ধান্তে অবৈধ এ অভিবাসীদের নিয়ে বাংলাদেশের ওপর কোনো বাড়তি চাপ আসবে কিনা জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, বিষয়টি যখন প্রথম উত্থাপন করা হয়েছে, তখন থেকেই এর ফলাফলের বিষয়ে আমরা নজর রাখছি।

যে চুক্তিতে ইইউ নেতারা উপনীত হয়েছেন, তাতে দেশ হিসেবে বাংলাদেশের ওপর এখনো কোনো বাড়তি প্রভাব পড়ার বিষয়টি আমাদের কাছে প্রতীয়মান হয়নি। তবে ইইউতে অবৈধভাবে পাড়ি দেয়া, রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করা বা শরণার্থী হিসেবে নতুন করে আবেদন করা অথবা বাংলাদেশিদের অনিষ্পন্ন আবেদনে এর প্রভাব অবশ্যই পড়বে বলে ধারণা করছি।

ইউরোস্ট্যাটের সর্বশেষ প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, অবৈধ এসব বাংলাদেশি ইইউ সদস্যভুক্ত ২৮টি দেশে অবস্থান করছে। ২০০৮ সালে অবৈধভাবে এসব দেশে গেছেন ৭ হাজার ৮৫ জন, ২০০৯ সালে ৮ হাজার ৮৭০, ২০১০ সালে ৯ হাজার ৭৭৫, ২০১১ সালে ১১ হাজার ২৬০ ও ২০১২ সালে ১৫ হাজার ৩৬০ জন বাংলাদেশি। এছাড়া ২০১৩ সালে ১০ হাজার ১৩০, ২০১৪ সালে ১০ হাজার ১৪৫, ২০১৫ সালে ২১ হাজার ৫৭৫ ও ২০১৬ সালে ১০ হাজার ৩৭৫ জন বাংলাদেশি ইইউ সদস্যভুক্ত দেশগুলোয় অবৈধভাবে প্রবেশ করেছে।