গ্রুপপর্বের ৪৮ ম্যাচে ম্যাচসেরা হয়েছেন যারা

দেখতে দেখতেই শেষ হয়ে গেল ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপের গ্রুপপর্বের লড়াই। এবারের টালমাটাল গ্রুপপর্বে ঘটেছে অনেক নাটকীয় ঘটনাই। ব্যক্তিগত কারিশমায় আলো ছড়িয়েছেন অনেকেই। নামাদামী খেলোয়াড়েরা যেমন তাদের বিশেষ কারিশমা দেখিয়েছেন, তেমনি ব্যক্তিগত নৈপূণ্যের ঝলকানিতে বিশেষভাবে নজর কেড়েছেন অনেক অখ্যাতরাও। ব্যক্তিগত নৈপূণ্যের মাপকাঠিতে দেওয়া গ্রুপপর্বের ৪৮ ম্যাচের ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার তালিকাও সে কথাই বলছে।

ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো, লিওনেল মেসি, লুইস সুয়ারেজ, লুকা মড্রিচ, হ্যারি কেনরা যেমন ম্যাচসেরার পুরস্কারে নিজেদের আলোকিত করেছেন। তেমনি মাঠে পারফরম্যান্সের দ্রুতি ছড়িয়ে ম্যাচসেরার পুরস্কার হাতে তুলেছেন ডেনিস শেরিচেভ, আন্দ্রে ক্যারিল্লো, জো হিউন উ’র মতো অখ্যাত খেলোয়াড়েরাও।

গ্রুপপর্বের প্রতিটি ম্যাচেই ম্যাচসেরার পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। তবে ৪৮ ম্যাচে ৪৮ জন নন, ম্যাচসেরার পুরস্কারের আনন্দে উৎসব করতে পেরেছেন ৪২ জন খেলোয়াড়! কারণ, ৩২ দলের মোট ৭৩৬ জন খেলোয়াড়ের দ্বৈরথে ৬ জন খেলোয়াড় দুবার করে ম্যাচসেরা হয়েছেন। মানে ৬ জনে ম্যাচসেরা হয়েছেন ১২ ম্যাচে। বাকি ৩৬ ম্যাচে ৩৬ জন।

তিন ম্যাচ করে খেলে দুই ম্যাচেই ম্যাচসেরার পুরস্কার পাওয়ার কৃতিত্ব দেখানো ৬ খেলোয়াড় হলেন-পর্তুগালের ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো, ক্রোয়েশিয়ার লুকা মড্রিচ, উরুগুয়ের লুইস সুয়ারেজ, ব্রাজিলের ফিলিপে কুতিনহো, ইংল্যান্ডের হ্যারি কেন ও স্বাগতিক রাশিয়ার ডেনিস চেরিশেভ।

গ্রুপপর্বের ৩ ম্যাচে ৪ গোল করা রোনালদো ম্যাচসেরা হয়েছেন স্পেন ও মরক্কোর বিপক্ষে। ক্রোয়েশিয়ার লুকা মড্রিচ এই অলঙ্কারে ভূসিত হয়েছেন নাইজেরিয়া ও আর্জেন্টিনার বিপক্ষে। সুয়ারেজ ম্যাচসেরা হয়েছেন সৌদি আরব ও রাশিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে। নেইমারকে আড়াল করে বিশ্বকাপে ব্রাজিলের ‘মাঠের নেতা’ হয়ে উঠা কুতিনহো ম্যাচসেরা হয়েছেন সুইজারল্যান্ড ও কোস্টারিকার ম্যাচে।

রাশিয়ার অখ্যাত ডেনিস চেরিশেভ ম্যাচসেরার পুরস্কার পেয়েছেন নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচেই, সৌদি আরব ও মিশরের বিপক্ষে। এই ৫ জনের চেয়ে অন্য একটা দিক থেকে এগিয়ে হ্যারি কেন। ইংল্যান্ড ফরোয়ার্ড খেলেছেন ৩ ম্যাচের দুটিতে। সেই দুই ম্যাচেই ৫ গোল করেছেন, দুই ম্যাচেই হয়েছেন ম্যাচসেরা।

বাকি যে ৩৬ জন একবার করে ম্যাচসেরা হয়েছেন তাদের অন্যতম হলেন লিওনেল মেসি। নাইজেরিয়ার বিপক্ষে ‘জিততেই হবে’ ম্যাচে দলকে দ্বিতীয় রাউন্ডে তুলে দেওয়া ২-১ গোলের জয় পাওয়া ম্যাচে ম্যাচসেরা হয়েছেন মেসি। তিনি ছাড়াও একবার করে ম্যাচসেরার পুরস্কার প্রাপ্তরা হলেন-বেলজিয়ামের আদনান ইয়ানুজাই (ইংল্যান্ডের বিপক্ষে), তিউনিসিয়ার ফখরেদ্দিন বিন ইউসুফ (পানামার বিপক্ষে), কলম্বিয়ার ইয়ারি মিনা (সেনেগালের বিপক্ষে), পোল্যান্ডের ইয়ান বেডনারেক (জাপানের বিপক্ষে), সুইজারল্যান্ডের ব্লেরিম ডিজেমাইলি (কোস্টারিকার বিপক্ষে), ব্রাজিলের পওলিনহো (সার্বিয়ার বিপক্ষে), সুইডেনের লুডউইগ অগাস্টিনসন (মেক্সিকোর বিপক্ষে), ক্রোয়েশিয়ার মিলান বাদেলাই (আইসল্যান্ডের বিপক্ষে), ডেনমার্কের বিপক্ষে গোলশূন্য ম্যাচে ম্যাচসেরা হয়েছেন ফ্রান্সের এনগোলো কন্তে।

এ ছাড়া পেরু আন্দ্রে ক্যারিল্লো অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে), পর্তুগালের রিকার্ডো কারেসমা (ইরানের বিপক্ষে), স্পেনের ইসকো (মরক্কোর বিপক্ষে), মিশরের মোহামেদ সালাহ (সৌদি আরবের বিপক্ষে), কলম্বিয়ার হামেশ রদ্রিগেজ (পোল্যান্ডের বিপক্ষে), সেনেগালের সাদিও মানে (জাপানের বিপক্ষে), জার্মানির মার্কোস রয়েস (সুইডেনের বিপক্ষে), মেক্সিকোর হাভিয়ের হার্নান্দেজ (দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে), বেলজিয়ামের এডেন হ্যাজার্ড (তিউনিসিয়ার বিপক্ষে), সুইজারল্যান্ডের জেরদান শাকিরি (সার্বিয়ার বিপক্ষে), নাইজেরিয়ার আহমেদ মুসা (আইসল্যান্ডের বিপক্ষে), ফ্রান্সের কিলিয়ান এমবাপে (পেরুর বিপক্ষে), ডেনমার্কের কিস্তিয়ান এরিকসন (অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে), স্পেনের দিয়েগো কস্তা (ইরানের বিপক্ষে), সেনেগালের এমবায়ে নিয়াং (পোল্যান্ডের বিপক্ষে), জাপানের ইয়া ওসাকো (কলম্বিয়ার বিপক্ষে), বেলজিয়ামের রোমেলু লুকাকু (পানামার বিপক্ষে), সুডেনের আন্দ্রেয়ান গ্র্যান্ডকুইভিস্ট (দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে), মেক্সিকোর হিরভিং লোজানো (জার্মানির বিপক্ষে), সার্বিয়ার আলেসান্দ্রো কোলারভ (কোস্টারিকার বিপক্ষে), ডেনমার্কের ইউসুফ ইয়ারারি পাউলসেন (পেরুর বিপক্ষে), আইসল্যান্ডের হানেস হালদোরসন (আর্জেন্টিনার বিপক্ষে), ফ্রান্সের আতোইন গ্রিজমান (অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে), মরক্কোর আমিনে হারিত (ইরানের বিপক্ষে) এবং মিশরের মোহামেদ এল শেনউয়ী ম্যাচসেরার পুরস্কার পেয়েছেন উরুগুয়ের বিপক্ষে।

উপরে উল্লেখিত ৪১ জনের অধিকাংশই ম্যাচসেরার পুরস্কার পেয়েছেন ম্যাচে গোল করার সুবাদে। তবে গোল ঠেকিয়েও গ্রুপপর্বে ম্যাচসেরা হয়েছেন একজন। তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার গোলরক্ষক জো হিউন উ। গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচে জার্মানির বিপক্ষে ২-০ গোলের অবিস্মরণীয় জয় পেয়েছে কোরিয়া। নিজেরা দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠতে না পারলেও কোরিয়া ঠিকই চ্যাম্পিয়ন জার্মানির বিদায়ঘণ্টা বাজিয়ে দিয়েছে!

আর জার্মানদের বিদায়ঘণ্টা বাজানোর পেছনে সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব দক্ষিণ কোরিয়ার গোলরক্ষক জো হিউন উ’র। টুর্নামেন্টে টিকে থাকার স্বপ্নে মরিয়া হয়ে আক্রমণ হানিয়েছে জার্মানি। গোলপোস্টে একের পর এক শটও নিয়েছে। কিন্তু গ্লাভস হাতে জো হিউন উ’র অবিশ্বাস্য দৃঢ়তায় জাল খুঁজেই পায়নি জার্মানরা। অসাধারণ সব সেভ করার সুবাদে ম্যাচসেরার পুরস্কারটি সেদিন উঠে তার হাতেই। গ্রুপপর্বে একমাত্র গোলরক্ষক হিসেবে তিনিই ম্যাচসেরা হয়েছেন।

গ্রুপপর্বের এই ম্যাচসেরাদের অনেকেই বিদায় নিয়েছেন। তবে বেশির ভাগই টিকে আছেন। হয়তো এখন জাল বুনছেন নতুন স্বপ্নের। গ্রুপপর্বের মতো নকআউটপর্বেও তারা আলো কাড়তে পারেন কিনা, সেটাই এখন দেখার বিষয়।