সৌদিকে সহযোগিতা দেওয়া বন্ধ করে ইয়েমেনের প্রতি সমর্থন ঘোষণা মালয়েশিয়ার

মালয়েশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোহাম্মদ সাবু জানিয়েছেন, তার দেশ ইয়েমেনের বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধে সৌদি আরবকে সামরিক সহযোগিতা দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে। তিনি ইয়েমেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে আরো বলেন, এখন থেকে তার দেশ ইয়েমেন যুদ্ধে হস্তক্ষেপ করবে না এবং খুব শিগগিরি মালয়েশিয়ান সেনাদেরকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে।

মালয়েশিয়ায় মাহাথির মোহাম্মদের নেতৃত্বাধীন জোটের বিজয়ের পর দেশটির নতুন সরকারের নীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত সাম্প্রতিক নির্বাচনে পরাজিত ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের সঙ্গে সৌদি আরবের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। সৌদি আরবের সঙ্গে সহযোগিতার সময় তার বিরুদ্ধে ব্যাপক আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে এবং এখন সেসবের তদন্ত চলছে।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ইয়েমেন যুদ্ধে সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট থেকে মালয়েশিয়ার বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনা সৌদি শাসকদের জন্য আরেকটি ব্যর্থতা ও আঘাত। তারা এটাকে দু’দিক থেকে মূল্যায়ন করছেন। প্রথমত, সৌদি আরব বর্তমানে ইয়েমেনের চোরাবালিতে আটকা পড়েছে এবং এ অবস্থায় মালয়েশিয়ার বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনা সৌদি আরবের জন্য মরার ওপর খড়ার ঘায়ের মতো যা রিয়াদের জন্য অনেক বড় আঘাত।

দ্বিতীয়ত, মাহাথির মোহাম্মদ ফের ক্ষমতায় আসায় এবং প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় মুসলিম বিশ্বের ব্যাপারে দেশটির নীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। নতুন সরকার ফিলিস্তিন ও ইয়েমেনে আগ্রাসীদের বিরুদ্ধে ওই দেশ দু’টির জনগণের প্রতিরোধ সংগ্রামের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। মোট কথা, উগ্র তাকফিরি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী দায়েশের প্রতি সৌদি শাসকদের সমর্থন এবং সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান যখন দখলদার ইসরাইলের প্রতি নির্লজ্জ সমর্থন জানিয়েছেন তখন মালয়েশিয়া সরকারের সৌদি বিরোধী নীতি রিয়াদের জন্য বিরাট ব্যর্থতা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ আল তামিমি মনে করেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক ক্ষমতা হারানোর পর তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা শুরু হওয়ায় সৌদি আরব চিন্তিত হয়ে পড়েছে। কারণ মালয়েশিয়ায় ব্যাপক আর্থিক দুর্নীতি ও দেশটির কোষাগার লুণ্ঠনের পেছনে অনেক সৌদি প্রিন্সদের হাত রয়েছে। এ ছাড়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মালয়েশিয়াকে সৌদি আরব ও উগ্র ওয়াহাবিদের গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি হিসেবে মনে করা হত।

কিন্তু সরকার পরিবর্তন হওয়ায় সৌদি ওয়াহাবিরা তাদের ঘাঁটি হাত ছাড়া করেছে। মালয়েশিয়ার আগের সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্কের সুযোগে সৌদি আরব ওই দেশটিতে ওয়াহাবি মতবাদ প্রচারের সুযোগ পায়। যদিও মালয়েশিয়ার বিভিন্ন ইসলামপন্থী সংগঠন উগ্র ওয়াহাবিদের প্রভাব বিস্তারের পরিণতির ব্যাপারে বহুবার হুঁশিয়ার করে দিয়েছিলেন।

মালয়েশিয়ার রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর কন্যা মারিয়ানা মাহাথির বলেছেন, সেদেশে সৌদি প্রভাব বিস্তারের সঙ্গে দেশটি উগ্রপন্থার দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। আরবদের স্টাইলে পোশাক-আশাকে পরিবর্তন ওই উগ্রতার প্রমাণ পাওয়া যায়। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে, মালয়েশিয়ার অনেকে সৌদি আরবের মতো আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়েছিল।

যাইহোক, মালয়েশিয়ার জনগণ বিশেষ করে দেশটি নারীরা অনেক শিক্ষিত এবং তারা উগ্রপন্থা বিস্তারের মাধ্যমে সৌদি আরবের লক্ষ্য উদ্দেশ্য সম্পর্কে ভালোভাবে অবহিত। এ কারণে তারা মাহাথির মোহাম্মদের জোটের প্রতি সমর্থন জানায়। সাম্প্রতিক নির্বাচনে শুধু যে নাজিব রাজাকের পরাজয় ঘটেছে তাই নয় বরং এটাও প্রমাণিত হয়েছে সেদেশের জনগণ কখনই উগ্র ওয়াহাবিদের প্রভাব বিস্তারের সুযোগ দেবে না।