যার কাঁধে ভর করে বেঁচে রইলো আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ স্বপ্ন

যার কাঁধে ভর করে- মরা-বাঁচার লড়াইয়ে গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে মাঠে নেমেছিল আর্জেন্টিনা। এই ম্যাচে জয় ছাড়া কোনো পথ খোলা ছিল না সাম্পাওলির শিষ্যদের।

নির্ধারিত সময়ের খেলা শেষ হতে বাকি আছে আর ৪ মিনিট। তখনও স্কোর ১-১ সমতা। ম্যাচটি ড্র হলেই বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ পড়বে মেসির আর্জেন্টিনা! এমন মুহূর্তে গ্যাব্রিয়েল মেরকাদো ডান দিক থেকে নিচু ক্রসটা দিলেন। এ সময় প্রতিপক্ষ নাইজেরিয়ার বক্সের ঠিক মাঝামাঝি চলে গেছেন মার্কোস রোহো। মেরকাদোর দেয়া উড়ে আসা ক্রসে ডান পায়ে ভলিটা করলেন সঙ্গে সঙ্গে বল গিয়ে আশ্রয় খুঁজে নিল জালে। তখন উল্লাসে ফেটে পড়ল পুরো আর্জেন্টিনা দল। আর টেলিভিশনের বসা কোটি কোটি আর্জেন্টিনা সমর্থক তো আছেই।

আর্জেন্টিনাকে রাশিয়া বিশ্বকাপের শেষ ষোলোতে তুলেছেন রোহো। মার্কোস রোহোর ৮৬ মিনিটের মহামূল্যবান ওই গোলই যে শঙ্কার মেঘ দূরে ঠেলে দিল আর্জেন্টিনার।

শেষ ষোলোতে উঠতে হলে গ্রুপের শেষ ম্যাচে মঙ্গলবার (২৬ জুন) নাইজেরিয়ার বিপক্ষে আর্জেন্টিনাকে জিতা ছাড়া কোনো পথ ছিল না। তাকিয়ে থাকতে হতো গ্রুপের অন্য ম্যাচটির দিকেও।

এদিন সেন্ট পিটার্সবার্গে আর্জেন্টিনা নাইজেরিয়াকে ২-১ গোলে হারিয়ে নিজেদের কাজটা করেছে। অন্য ম্যাচে ক্রোয়েশিয়া আইসল্যান্ডকে ২-১ গোলে হারানোয় ‘ডি’ গ্রুপের রানার্সআপ হিসেবে শেষ ষোলোর টিকিট নিশ্চিত হয়ে গেছে আর্জেন্টিনার।

প্রসঙ্গত, প্রথম ম্যাচে আইসল্যান্ডের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্রয়ের পর ক্রোয়েশিয়ার কাছে ৩-০ গোলের হার, বিশ্বকাপের গ্রুপপর্ব থেকে বাদ পড়ার শঙ্কা চোখ রাঙাচ্ছিল আর্জেন্টিনাকে।

নাইজেরিয়ার বিপক্ষে বাঁচা-মরার ম্যাচে শুরুর একাদশে পাঁচটি পরিবর্তন এনেছিলেন আর্জেন্টিনা কোচ হোর্হে সাম্পাওলি। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে মারাত্মক এক ভুল করা গোলরক্ষক উইলি কাবায়েরো এই ম্যাচে নিজের জায়গা হারান। তার জায়গায় অভিষেক হয় গোলরক্ষক ফ্রাঙ্কো আরমানির। তার সঙ্গে বানেগা, রোহো, ডি মারিয়া ও হিগুয়াইনকেও শুরুর একাদশে নিয়ে আসেন কোচ সাম্পাওলি।

শুরু থেকেই এদিন আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়েরা চমৎকার খেলতে থাকে। শারীরিক ভাষাতে ছিল জয়ের ক্ষুধা। ৩২ মিনিটে নিজের দ্বিতীয় গোলটাও পেতে পারতেন মেসি। নাইজেরিয়ার লিওন বালোগুন বাঁ দিকে বক্সের সামনে ডি মারিয়াকে ফাউল করায় ফ্রি-কিক দিয়েছিলেন রেফারি। মেসির বাঁ পায়ের জোরালো শট ডান কোণা দিয়ে জালে ঢুকে যাচ্ছিল। কিন্তু নাইজেরিয়ার গোলরক্ষক ঝাঁপিয়ে পড়লেন। তার হাত ছুঁয়ে বল লাগল পোস্টে। ফলে দ্বিতীয় গোল থেকে বঞ্চিত হন মেসি।

ম্যাচের ৪৯ মিনিটে কর্ণারের সময় হাভিয়ের মাশচেরানো নিজেদের বক্সে নাইজেরিয়ার লিওন বালোগুনকে জার্সি টেনে ধরে ফেলে দিলেন। রেফারিও পেনাল্টি দিয়ে দিলেন। পরে ভিডিও রিপ্লে দেখেও নিজের সিদ্ধান্ত বহাল রাখেন রেফারি। আরমানির প্রথম পরীক্ষা। ভিক্টর মোসেস শট নেওয়ার সময় আরমানি ডান দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু মোসেস বল মারেন বিপরীত দিকে। ফলে ১-১ গোলের সমতায় ফেরে নাইজেরিয়া।

এরপর একটু একটু করে সময় যাচ্ছিল। নকআউট পর্বে যেতে হলে একটা গোল যে খুবই দরকার। অতি প্রয়োজনীয় মুহূর্তে দলের ত্রাণকর্তা হয়ে সেই গোলটা এনে দিলেন মার্কাস রোহো। যে গোল বাঁচিয়ে রাখল আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ স্বপ্ন।

উল্লেখ্য, শেষ ষোলোয় আগামী শনিবার (৩০ জুন) রাত ৮টায় কাজানে ‘সি’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের বিপক্ষে খেলবে ‘ডি’ গ্রুপের রানার্সআপ আর্জেন্টিনা।