ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা ফের সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। রোববার এ ধরনের দুটি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সৌদি আরব, খবর বার্তা সংস্থা রয়টার্সের।
রয়টার্সের প্রত্যক্ষদর্শী এক সাংবাদিক জানিয়েছেন, অন্তত ছয়টি প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে ও রিয়াদের আকাশে কয়েকটি উজ্জ্বল আলোর ঝলকানি দেখা গেছে। রিয়াদের কূটনীতিক এলাকার একটি রাস্তায় ক্ষেপণাস্ত্রের টুকরা অংশ পড়ে থাকতে দেখা গেছে, তবে গুরুতর কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে জানিয়েছেন তিনি।
সৌদি রাজধানীর এই এলাকাটিতেই অধিকাংশ দূতাবাস অবস্থিত। এখানে অনেক বিদেশিও বসবাস করেন। এক বিবৃতিতে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন জোট বাহিনীর মুখপাত্র কর্নেল তুর্কি আল মালিকি বলেছেন, “ক্ষেপণাস্ত্রগুলো প্রতিরোধ করে ধ্বংস করে দিয়েছে সৌদির রাজকীয় বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী। প্রতিরোধ করা ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর কিছু ধ্বংসাবশেষ আবাসিক এলাকায় পড়েছে, তবে এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।”
হুতিদের নিক্ষেপ করা ক্ষেপণাস্ত্রগুলো যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ধ্বংস করে সৌদি বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী। ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর ধ্বংসাবশেষ আবাসিক এলাকাগুলোর অনেকটা অংশজুড়ে আঘাত হানে। যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিক মিশনের কাছে ও ওই এলাকার একটি স্কুলে ক্ষেপণাস্ত্রের টুকরা পড়ে এবং নিকটবর্তী একটি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ক্ষতিগ্রস্ত আবাসিক এলাকাগুলো পরিদর্শনের সময় রয়টার্সকে এসব কথা জানিয়েছেন কর্নেল মালিকি। হুতিদের পরিচালিত আল-মাসিরাহ টেলিভিশন জানিয়েছে, সৌদি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও অন্যান্য লক্ষ্যস্থলে বুরকান ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে। ১২ জুন সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট বাহিনী ইয়েমেনের সবচেয়ে বড় বন্দর শহর হোদেইদাহের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার লক্ষ্যে হুতি বাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযান শুরু করে।
হুতিদের প্রধান সরবরাহ লাইন বিচ্ছিন্ন করে তাদের দুর্বল করার উদ্দেশ্যে শুরু করা এই অভিযানের ফলে ইয়েমেনের তিন বছরব্যাপী যুদ্ধের সবচেয়ে বড় সম্মুখ লড়াইটি শুরু হয়। হোদেইদাহের লড়াই শুরু হওয়ার পর এই প্রথম রিয়াদে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাল হুতিরা। ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর রিয়াদের কূটনীতিক এলাকার নিরাপত্তা জোরদার করা হয় ও সেখানে দমকলের অগ্নিনির্বাপণে ব্যবহৃত কয়েকটি ট্র্রাক এনে রাখা হয়।
ক্ষেপণাস্ত্রের খণ্ডাংশ রিয়াদের কূটনীতিক এলাকা থেকে ১০ কিলোমিটার দক্ষিণে একটি নির্মাণাধীন প্রকল্পে আগুনের সূত্রপাত ঘটায় এবং একটি ব্যক্তিমালিকানাধীন বাড়ির ছাদেও আঘাত হানে। আল মায়াদ্বীন টেলিভিশনে হুতিদের মুখপাত্র মোহাম্মদ আব্দুল সালাম বলেছেন, “আগ্রাসন ও যুদ্ধ যত দীর্ঘদিন ধরে চলবে, আমাদের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের সক্ষমতাও তত বাড়বে।”
হোদেইদাহে সৌদি জোট বাহিনীর অগ্রগতি ও ইয়েমেনের অন্যান্য এলাকার লড়াইয়ে হুতিরা চাপে পড়ে তাদের শক্তি প্রদর্শনের চেষ্টায় এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছে বলে দাবি করেছেন মালিকি। বলেছেন, “আমরা জানি এসব (ক্ষেপণাস্ত্র হামলা) রিয়াদ বা সৌদি আরবের অন্যান্য এলাকার বেসামরিক জীবনে কোনো প্রভাব ফেলবে না।”
ইয়েমেনের রাজধানী সানাসহ দেশটির গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলো দখল করে রাখা হুতিরা সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সৌদি আরবে কয়েক ডজন ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। এ নিয়ে ডিসেম্বর থেকে রিয়াদে অন্তত ছয়টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হল। বিশ্লেষকরা ইয়েমেনে হুতিদের সঙ্গে সৌদি জোট বাহিনীর যুদ্ধকে আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইরানের সঙ্গে সৌদি আরবের ‘ছায়াযুদ্ধ’ হিসেবে বিবেচনা করেন।
২০১৫ সালে প্রতিবেশী ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধে হস্তক্ষেপ করে পশ্চিমা সমর্থিত সৌদি জোট বাহিনী। তারা ইরানপন্থি শিয়া হুতি বিদ্রোহীদের দমন করে ইয়েমেনের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সুন্নি সরকারকে ফের ক্ষমতায় বসাতে চায়। আব্দু মনসুর হাদির নেতৃত্বাধীন ইয়েমেনের ওই সরকার এখন রিয়াদে স্বেচ্ছা নির্বাসনে আছে।