মনে হয় সব আশা শেষ আর্জেন্টিনার!!

প্রথম দুই ম্যাচে মাত্র এক পয়েন্ট। ম্যাচ বাকি আর একটি। ২০০২ সালের পর বিশ্বকাপের গ্রুপপর্ব থেকে বাদ পড়ার শঙ্কায় আছে আর্জেন্টিনা। অনেক হিসাব-নিকাশের ওপর নির্ভর করছে আর্জেন্টিনার দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়া।

দ্বিতীয় রাউন্ডে যেতে গ্রুপপর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে আর্জেন্টিনাকে জিততেই হবে। পাশাপাশি তাকিয়ে থাকতে হবে ক্রোয়েশিয়া ও আইসল্যান্ডের ম্যাচের দিকেও। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে আইসল্যান্ড না জিতলে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠবে আর্জেন্টিনা।

তবে শেষ ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার কোচ জ্লাটকো দালিচ দলের প্রথম পছন্দের ছয়জন খেলোয়াড়কে বিশ্রাম দিতে যাচ্ছেন। এর মধ্যে আছেন মিডফিল্ডার ইভান রাকিটিচ, স্ট্রাইকার মারিও মানজুকিচের মতো বড় খেলোয়াড়ও।

এটি তাই আর্জেন্টিনার জন্য যেমন একপ্রকার দুঃসংবাদ, একইসঙ্গে আইসল্যান্ডের জন্য সুসংবাদ বটে। দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়ার সুযোগ আছে যে আইসল্যান্ডের সামনেও।

নাইজেরিয়া ও আর্জেন্টিনার বিপক্ষে প্রথম দুই ম্যাচ জিতে এরই মধ্যে দ্বিতীয় রাউন্ডের টিকিট নিশ্চিত করেছে ক্রোয়েশিয়া। নকআউট পর্বে নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকি এড়াতেই মূলত ছয়জন খেলোয়াড়কে বিশ্রাম দেবেন দালিচ।

প্রথম ম্যাচে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে দুজন ও দ্বিতীয় ম্যাচে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে চারজন ক্রোয়াট খেলোয়াড় হলুদ কার্ড পেয়েছেন। অর্থাৎ আইসল্যান্ডের বিপক্ষে খেলতে নেমে আবার হলুদ কার্ড পেলে তারা নকআউট পর্বে এক ম্যাচ নিষিদ্ধ হবেন। ক্রোয়েশিয়ার কোচ তাই ঝুঁকি নিতে চান না।

ক্রোয়েশিয়ার কোচ দালিচ বলেছেন, ‘আমি গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হতে চাই। কিন্তু আমাদের যত্ন নেওয়া দরকার, কারণ আমাদের কয়েকজন খেলোয়াড় হলুদ কার্ড পেয়েছে। সুতরাং আমাকে লাইনআপে পরিবর্তন আনতে হবে। যারা হলুদ কার্ড পেয়েছে তাদের দিয়ে আমি শুরু করব না। কারণ এটা অনেক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাবে। এখানে ২২ জন খেলোয়াড় আছে যারা খেলতে পারে।’

আইসল্যান্ড আর্জেন্টিনার সঙ্গে ১-১ গোলে ড্রয়ের পর নাইজেরিয়ার কাছে ২-০ গোলে হেরেছে। এই তিন দলেরই পরের রাউন্ডে যাওয়ার সুযোগ আছে। আইসল্যান্ডকে অবশ্য আর্জেন্টিনার জয়ের জন্যও প্রার্থনা করতে হবে! কারণ নাইজেরিয়া জিতলে কোনো হিসাব-নিকাশ ছাড়াই ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গী হিসেবে আফ্রিকার ‘সুপার ঈগল’রা দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠে যাবে।

আর্জেন্টিনা ও আইসল্যান্ড জিতলে দুই দলেরই পয়েন্ট হবে সমান ৪। তখন প্রথমেই দেখা হবে গোল-পার্থক্যে কারা এগিয়ে। এখানে এগিয়ে আছে আইসল্যান্ড। প্রথম দুই ম্যাচে ১ গোল দিয়ে ৪ গোল খেয়েছে আর্জেন্টিনা, আইসল্যান্ড ১ গোল দিয়ে খেয়েছে ৩ গোল। দুই ম্যাচ শেষে গোল-পার্থক্যে ১ গোলে এগিয়ে আইসল্যান্ড। অর্থাৎ আর্জেন্টিনা ও আইসল্যান্ড একই ব্যবধানে জিতলে পরের রাউন্ডে যাবে আইসল্যান্ড।

ক্রোয়েশিয়ার বড় খেলোয়াড়দের বিশ্রাম তাই আইসল্যান্ডকে আশা দেখাচ্ছে। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে আইসল্যান্ডের অতীত রেকর্ড যদিও ভালো নয়। দুই দল এখন পর্যন্ত ছয়বার মুখোমুখি হয়ে ক্রোয়েশিয়া জিতেছে ৪টি, আইসল্যান্ড একটি, অন্য ম্যাচ ড্র হয়েছে। তবে আইসল্যান্ডের জয়টা দুই দলের সবশেষ দেখাতেই।

গত চার বছরে চারবার দেখা হয়েছে এই দুই দলের। ২০১৪ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের প্লে-অফে মুখোমুখি হয়েছিল তারা। যেখানে দুই লেগ মিলিয়ে ২-০ গোলের অগ্রগামিতায় বিশ্বকাপের টিকিট পেয়েছিল ক্রোয়েশিয়া।

রাশিয়া বিশ্বকাপের বাছাইপর্বেও একই গ্রুপে পড়েছিল ক্রোয়েশিয়া ও আইসল্যান্ড। দুই দলই বিশ্বকাপের চূড়ান্তপর্বে জায়গা করে নেয়। গ্রুপে ক্রোয়েশিয়ার চেয়ে দুই পয়েন্ট এগিয়ে শীর্ষে থেকে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের চূড়ান্তপর্বে ওঠে আইসল্যান্ড।

আইসল্যান্ডের কোচ হেইমার হালগ্রিমসন মনে করেন, ক্রোয়েশিয়া ও আইসল্যান্ড এখন অনেকটা বিবাহিত দম্পতির মতো, যারা বিবাহবিচ্ছেদ চাইছে; কিন্তু বারবার দেখা হয়ে যাচ্ছে! তবে ক্রোয়েশিয়ার খেলোয়াড়দের বিশ্রামের সুযোগটা তিনি নিতে চান।

হালগ্রিমসন বলেছেন, ‘গত চার বছরে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে আমরা চারবার খেলেছি। আমরা প্রায়ই বলেছি, আমরা অনেকটা বিবাহিত দম্পতির মতো, যারা বিবাহবিচ্ছেদের চেষ্টা করছে, কিন্তু সব সময় আমার দেখা হচ্ছে।’

‘যখন আমরা ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে খেলব, পরিস্থিতিটা আমরা জানি। এটা সত্যিই কঠিন একটা ম্যাচ হতে যাচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে এটা ইস্পাত আর ইস্পাতের লড়াই, সুযোগ বেশি থাকে না, হলুদ কার্ড অনেক। চার ম্যাচের মধ্যে তিনটিতে আমরা একটি লাল কার্ড পেয়েছি’- যোগ করেন আইসল্যান্ড কোচ।

ক্রোয়েশিয়া ও আইসল্যান্ডের ম্যাচটা হবে রোস্তভ অ্যারেনায়। যেটা আবার আইসল্যান্ডের তিন খেলোয়াড়ের খুব পরিচিত মাঠ। আইসল্যান্ডের বিঅর্ন সিগুর্ডসন, রাগনার সিগুর্ডসন ও সেভেরির ইনগি ইনগাসন ক্লাব ফুটবলে খেলেন রাশিয়ার এফসি রোস্তোভের হয়ে। একই সময়ে সেন্ট পিটার্সবার্গে মুখোমুখি হবে আর্জেন্টিনা ও নাইজেরিয়া।

পরিসংখ্যানে ক্রোয়েশিয়া-আইল্যান্ড

*ক্রোয়েশিয়া ও আইসল্যান্ড ২০১৮ বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে মুখোমুখি হয়েছিল- দুই দলই জিতেছিল তাদের ঘরের মাঠে (ক্রোয়েশিয়া ২-০, আইসল্যান্ড ১-০)।
*ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে আইসল্যান্ডের একমাত্র জয়টি এবারের টুর্নামেন্টের বাছাইপর্বে, তারা হেরেছে চারটি, ড্র করেছে একটি।
*১৯৯৮ সালের পর এই প্রথম বিশ্বকাপে টানা দুই ম্যাচে জিতেছে ক্রোয়েশিয়া। তারা টুর্নামেন্টে কখনো টানা তিন ম্যাচ জেতেনি।
*২০১০ সালে স্লোভাকিয়ার পর প্রথম বিশ্বকাপ অভিষিক্ত দল হিসেবে টুর্নামেন্টের নকআউট পর্বে ওঠার হাতছানি আইসল্যান্ডের সামনে।
*এবারের বিশ্বকাপে অন টার্গেটে দুই শট নিয়ে দুটিতেই গোল করেছেন ক্রোয়েশিয়ার মিডফিল্ডার লুকা মডরিচ।
*আইসল্যান্ডের মিডফিল্ডার গিলফি সিগুর্ডসন শেষ ম্যাচে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে মাত্র তিনটি শট নিতে পেরেছেন। এর প্রথম দুটি ছিল অন টার্গেটে প্রথম ছয় মিনিটের মধ্যে। অন্যটি ৮৩ মিনিটে, যেখানে পেনাল্টি থেকে তিনি গোল করতে পারেননি।

তথ্যসূত্র : ফোর ফোর টু।