‘ব্রাজিল শুক্রবার বিস্ময়কর ফুটবল খেলেছে। কী বল ব্রাজিলের বন্ধু?’ প্রশ্ন শুনে ভ্রু কুঁচকে তাকালেন অগাস্তু। ব্রাজিলের এক নামকরা দৈনিকের রিপোর্টার। তারপর কথায় কথায় জানালেন অনেক কিছু। ব্রাজিল ফুটবল দলটা আর আগের মতো নেই। ফুটবলের দর্শনটাই এখন বদলে গেছে ব্রাজিলে। ‘জোগো বোনিতো’র উত্তরাধিকার আর বহন করছে না ব্রাজিল। পেলেদের ‘বিউটিফুল গেম’ কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। নেইমার, কটিনহো, উইলিয়ান, জেসুসরা জয় দিয়ে ভক্তদের সন্তুষ্ট করলেও ব্রাজিলের ফুটবলে সেই আবেগ কোথায়! শিল্প কোথায়! পঞ্চাশোর্ধ্ব অগাস্তু জীবনে কম দেখেননি। কিন্তু গত কয়েক বছরের ব্রাজিল দল যেন মরূদ্যান খুঁজতে খুঁজতে পথ হারিয়ে ভিন্ন কোনো এক বাঁকে এসে দাঁড়িয়েছে। যে বাঁক থেকে ছড়িয়ে গেছে অনেক পথ। সঠিক পথটাই বেছে নিতে পারছে না তারা। বিশ্বকাপে তাই ব্রাজিলকে নিয়ে খুব বড় কিছু আশা করেন না ব্রাজিলীয় সাংবাদিকরা। আর্জেন্টিনার অবস্থাও একই। মস্কোর স্পার্টাক স্টেডিয়ামের মিডিয়া সেন্টারে আর্জেন্টাইন সাংবাদিক কায়েতানোর বক্তব্য ছিল, এই দলটার গ্রুপ পর্ব পাড়ি দেওয়াই কঠিন হবে। ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনার সাংবাদিকরা বিশ্বকাপে এসে নিজেদের হতাশা প্রকাশ করছেন। কারণ, তারা অনেক খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে চিন্তা করেন। সমর্থকদের এসব নিয়ে ভাবার সময় নেই। তারা দেখেন, আর্জেন্টিনায় আছেন লিওনেল মেসি। ব্রাজিলে আছেন নেইমার। দুই দলের দুই মহাতারকা। যারা বিশ্ব ফুটবলে এরই মধ্যে আলোড়ন তুলেছেন। ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছেন। সমর্থকরা ভাবেন, নেইমার ব্রাজিলকে বিশ্বকাপের হেক্সা উপহার দেবেন। মেসি আর্জেন্টিনাকে ত্রিমুকুট এনে দেবেন। কিন্তু গ্রুপ পর্বের প্রথম দুটি করে ম্যাচ খেলে বিশ্বকাপের দুই ফেবারিট নিজেদের পথ অনেকটাই অমসৃণ করে তুলেছে। দুই দলকেই এখন কঠিন হিসাব কষতে হচ্ছে। এ যেন একেকটা ভয়ঙ্কর রকমের গণিত পরীক্ষা! তবে এখনো আশা জেগে রয়েছে দুই দলের।
ব্রাজিলের সামনে পথ অনেকটা সহজ। গ্রুপ পর্ব পাড়ি দিতে হলে তাদের শুধু পরের ম্যাচটা জিততে হবে সার্বিয়ার বিপক্ষে। হারলেই মহাবিপদ। সে ক্ষেত্রে সুইজারল্যান্ড আর সার্বিয়া নকআউট পর্বের পথ ধরবে। অবশ্য ব্রাজিলকে ড্র করলেও চলবে। গ্রুপ পর্বের বাধা পাড়ি দিতে পারবে সিলেকাওরা। কিন্তু তাতে বিপদ কমবে না। রানার্স-আপ হলেই ব্রাজিলের দ্বিতীয় রাউন্ডে দেখা হতে পারে এফ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন দলের সঙ্গে। সে ক্ষেত্রে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ দল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ব্রাজিলকে তাই গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্যই লড়াই করতে হবে। ব্রাজিলের সামনে সমীকরণ সহজ হলেও আর্জেন্টিনাকে বেশ কঠিন অঙ্ক কষতে হচ্ছে। ডি গ্রুপে প্রথম ম্যাচ আইসল্যান্ডের সঙ্গে ড্র এবং পরের ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার কাছে পরাজয়, আর্জেন্টিনাকে ঠেলে দিয়েছে খাদের একেবারে কিনারে। ২৬ জুন সেন্ট পিটার্সবার্গে আর্জেন্টিনা মুখোমুখি হবে নাইজেরিয়ার। এ ম্যাচ জিতলেই কেবল দ্বিতীয় রাউন্ড খেলার সুযোগ আসবে আলবেসিলেস্তদের সামনে। তাও তাকিয়ে থাকতে হবে আইসল্যান্ড-ক্রোয়েশিয়া ম্যাচের দিকে। এ ম্যাচে ক্রোয়েশিয়া জিতলে আর্জেন্টিনা দ্বিতীয় রাউন্ডে যাবে গ্রুপ রানার্স-আপ হিসেবে। একটা বিষয় এরই মধ্যে নিশ্চিত হয়ে গেছে। আর্জেন্টিনা গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে খেলতে পারছে না দ্বিতীয় রাউন্ডে। এর অর্থই হলো, নকআউট পর্বের শুরুতেই মেসিদের মুখোমুখি হতে হবে এবারের বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা দল ফ্রান্সের। টানা দুই ম্যাচ জিতে সি গ্রুপে শীর্ষে থেকে দ্বিতীয় রাউন্ড এরই মধ্যে মোটামুটি নিশ্চিত করে নিয়েছে ফরাসিরা।
ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার আশা টিকে আছে। কিন্তু দুই ফেবারিটকেই দ্বিতীয় রাউন্ডে কঠিন বাধার মুখে পড়তে হবে। পাড়ি দিতে হবে কঠিন পথ। শেষ ম্যাচ পর্যন্ত ঝুলে আছে দুই দলেরই ভাগ্য।