আওয়ামী লীগের ৬৯ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে একটি লিখিত বিবৃতি তৈরি করেছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কিন্তু দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার তীব্র আপত্তির মুখে শেষ পর্যন্ত বিবৃতিটি গণমাধ্যমে দিতে পারলেন না বিএনপি মহাসচিব। শুধু তারেক জিয়া নয়, বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দও মির্জা ফখরুলের বিবৃতির ব্যাপারে আপত্তি তোলেন। এ যাত্রায় হেরে গেলেন মির্জা ফখরুল।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ৬৯ বছর পূর্ণ করল আজ। এ উপলক্ষে দলটিকে শুভেচ্ছা জানিয়ে একটি বিবৃতি তৈরি করেছিলেন বিএনপি মহাসচিব। যে বিবৃতিতে তিনি আওয়ামী লীগকে একটি ‘ঐতিহ্যবাহী’ দল হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। মির্জা ফখরুল তাঁর বিবৃতিতে দেশের গণতন্ত্র এবং স্বাধীকার আন্দোলনে অনেক অবদানের কথাও স্মরণ করেন। এটি উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকের আওয়ামী লীগ ‘ভ্রান্ত নীতিতে’ চলছে। গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করা দলটি গণতন্ত্রের হন্তারক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে বলেও মির্জা ফখরুল বিবৃতিতে উল্লেখ করেছিলেন।
বিএনপি মহাসচিব তাঁর বিবৃতির শেষাংশে আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন যে, ‘নিশ্চয়ই আওয়ামী লীগের বোধোদয় ঘটবে এবং দলটি ‘জনগণের অধিকার’ ফিরিয়ে দেওয়ার পথ উন্মুক্ত করবে। একটি অবাধ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে পদত্যাগ করবে।’
বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, আজ সকালেই এই বিবৃতিটি গণমাধ্যমে দেওয়ার কথা ছিল। বিএনপি মহাসচিব বিবৃতিটি চূড়ান্ত করে এরকম একটি বিবৃতি দেওয়ার অভিপ্রায় জানিয়ে দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন। দুজন সিনিয়র নেতা এরকম সময়ে এই বিবৃতি দেওয়া যুক্তিসঙ্গত হবে কিনা সে প্রশ্ন তোলেন। তাঁদের বক্তব্য ছিল, বিএনপি এখন চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, এসময় এই বিবৃতি কর্মীদের বিভ্রান্ত করতে পারে। এদের আপত্তির কারণেই মির্জা ফখরুল লন্ডনে অবস্থানরত তারেক জিয়ার দ্বারস্থ হন। তারেক জিয়া বিএনপি মহাসচিবকে ই-মেইলে বিবৃতিটি পাঠাতে বলেন। তাৎক্ষণিক ভাবেই মির্জা ফখরুল এটি তারেক জিয়ার ই-মেইলে পাঠান। কিন্তু বিবৃতি পাঠানোর মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যেই তারেক কেবল বিবৃতি বাতিলই করেননি বরং ‘এরকম চিন্তা মাথায় আনার জন্য বিএনপি মহাসচিবের তিরস্কার করেন।’
একাধিক সূত্র বলছে, তারেক বিএনপি মহাসচিবকে নতুন ইতিহাস শিখিয়েছেন। তারেকের মতে আওয়ামী লীগ মোটেও ঐতিহ্যবাহী দল নয়। তাছাড়া আওয়ামী লীগ এখন জোর করে ক্ষমতা দখল করে আছে বলেও তারেক দাবি করেন। এরকম একটি দলের কাছে, গণতন্ত্রের জন্য অনুনয়-বিনয় অর্থহীন বলেও দাবি তাঁর। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলে কথা। মহাসচিবকে তো চেয়ারম্যানের নির্দেশ অনুযায়ী চলতে হবে। অত:পর তিনি বিবৃতিটিকে ‘মৃত’ঘোষণা করলেন। তবে তাঁর সঙ্গে থাকা কর্মীদের বললেন, ‘সৌজন্যতা ও শিষ্টাচারের রাজনীতির দিন শেষ।’
উল্লেখ্য, এর আগেও বিএনপি মহাসচিব একাধিক বক্তৃতায় আওয়ামী লীগকে ‘ঐতিহ্যবাহী’ গণতান্ত্রিক দল হিসেবে অভিহিত করে সমালোচিত হয়েছিলেন। বাম ধারার রাজনীতি থেকে বিএনপিতে আসা ফখরুল সম্মানী এবং ভদ্রলোক হিসেবে দলের বাইরে সমাদৃত। সূত্রঃ ভোরের পাতা