বর্তমান সরকারের মেয়াদ আছে আর মাত্র ৯৯ দিন। এরপর অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত হবে নির্বাচনকালীন সরকার। সে মন্ত্রিসভার আকার খুব ছোট হবে। এরপর ৯০ দিনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনকালীন সরকার নীতিগত কোনো সিদ্ধান্ত বা উন্নয়নমূলক কাজেও হাত দেবে না। তারা নিয়মিত কাজ পরিচালনা করবেন। সে কারণে এই ৯৯ দিনের উন্নয়ন কাজ ও দলকে সুসংগঠিত করার মাস্টার প্ল্যান নিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হিসাব মতে, আগামী ৩১ অক্টোবর থেকেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ক্ষণ গণনা শুরু হয়ে যাবে। এ অবস্থায় সরকারি মহলে নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ২৭ ডিসেম্বরকে ভোট গ্রহণের দিন হিসেবেও বেছে নেওয়া হতে পারে। তফসিল ঘোষণা হতে পারে নভেম্বরে। গত বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আগামী অক্টোবরে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা হবে। সে মন্ত্রিসভার আকার ছোট হবে। গেলবারের অভিজ্ঞতা থেকেই এটা হবে। তবে এ বিষয়ে সবকিছুর সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধানমন্ত্রী।
দলীয় সূত্রমতে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হ্যাটট্রিক বিজয়ে আত্মবিশ্বাসী আওয়ামী লীগ। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুরের উদাহরণ টেনে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে ক্ষমতার ধারাবাহিকতার ওপর জোর দেবে। সেভাবেই ঠিক হবে নির্বাচনী মূল স্লোগান। নির্বাচনী ইশতেহারও সেভাবে ঠিক করা হচ্ছে। দলকে পুনরায় ক্ষমতায় আনতে আবারও মাঠে নামছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
২০০৮ সালের নির্বাচনের পর যেসব জেলায় তিনি এখনো যাননি, সেসব জেলাকে প্রাধান্য দিয়ে ইতিমধ্যে কয়েকটি বিভাগ ও জেলা সফরের শিডিউল মোটামুটি চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর মাস্টার প্ল্যানকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ১০ দিন তিনি জেলা-উপজেলা নেতাদের কথা শুনবেন। এ জন্য আগামী শনিবার গণভবনে বিশেষ বর্ধিত সভা ডাকা হয়েছে। ওই সভায় তিনি জেলা-উপজেলা নেতাদের মতামত শুনবেন। সংসদ নির্বাচন সামনে থাকায় তিনি প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেবেন। এরপর ৬০ দিন অর্থাৎ দুই মাসের মধ্যে তৃণমূলকে উজ্জীবিত করতে কমপক্ষে ২০টি জেলায় নির্বাচনী জনসভা করবেন প্রধানমন্ত্রী। পরবর্তী ৩০ দিনে জোটের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি এবং দলীয় প্রার্থীদের গ্রিন সিগন্যাল দিয়ে মাঠে নামানো হবে। তরুণ ও নারী ভোটারদের কাছে টানতে যুগোপযোগী ইশতেহার তৈরি করা হচ্ছে। ১২ লাখ পোলিং এজেন্ট।
প্রশিক্ষণ, জেলা ও বিভাগীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটি, কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি এবং নির্বাচনী সব ধরনের প্রস্তুতি সারতে চায় এই সময়েই। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ২৩ জুন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী গণভবনে বিশেষ বর্ধিত সভা থেকে দলের নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে জয়ী হওয়ার নির্দেশনা দেবেন। প্রার্থী যেই হোক, নৌকার পক্ষে কাজ করার নির্দেশনা দেবেন তিনি। এতে নেতা-কর্মীরা উজ্জীবিত হবেন। সূত্রগুলো জানিয়েছে, দলের কেন্দ্রীয় নেতা যারা এমপি বা মন্ত্রী নন, তারা জুলাই মাসজুড়ে ব্যস্ত থাকবেন সিলেট, বরিশাল ও রাজশাহী সিটি নির্বাচন নিয়ে। আর যারা এমপি-মন্ত্রী রয়েছেন, তারা সিটি করপোরেশনের বাইরের এলাকায় সাংগঠনিক সফরে ব্যস্ত সময় পার করবেন। অক্টোবরের আগেই জরিপ, মাঠ পর্যালোচনা ও অতীত কর্মকাণ্ড বিবেচনা করে নির্বাচনে জয়লাভ করতে পারে, এমন প্রার্থীদের ‘গ্রিন সিগন্যাল’ দেওয়া হবে। জানা গেছে, জুলাই থেকে শুরু হবে ১২ লাখ পোলিং এজেন্টকে প্রশিক্ষণের কাজ। এ কাজের উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দেশব্যাপী কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠনের কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। অক্টোবরের আগেই তা পূর্ণাঙ্গ করার টার্গেট রয়েছে ক্ষমতাসীনদের। দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করার পাশাপাশি এ সময়ের মধ্যেই ১৪ দলীয় জোটের সঙ্গে আসন বণ্টন শেষ করতে চায় আওয়ামী লীগ। কেন্দ্রীয়ভাবে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। এখন জেলা ও বিভাগীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠনের কাজ শুরু করা হচ্ছে। আগামী দুই মাসের মধ্যেই তা সম্পন্ন করা হবে। -সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন