ফিলিপে কৌতিনিয়োর গোলে ব্রাজিল এগিয়ে গেলেও লিড ধরে রাখতে পারেনি। দ্বিতীয়ার্ধে গোল হজম করে ড্র দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করল পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। রোস্তভ অ্যারেনায় ১-১ গোলে ড্র করেছে তারা।
টানা ১১ ম্যাচ অজেয় থেকে বিশ্বকাপে ‘হট ফেভারিট’ হিসেবে রাশিয়ায় গিয়েছিল ব্রাজিল। রবিবার রোস্তভ অ্যারেনায় প্রথম ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ ছিল সুইজারল্যান্ড, যারা গত বছরের ১০ অক্টোবর থেকে কোনও ম্যাচ হারেনি। ব্রাজিলের মতো তারাও ছিল আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে। দুই দলের লড়াইও হলো সমানে সমান। ব্রাজিল প্রথমার্ধে এগিয়ে গেলেও তাদের জিততে দেয়নি সুইজারল্যান্ড।
বিশ্বকাপে সবশেষ মুখোমুখি লড়াইয়েও ড্র করেছিল তারা। ১৯৫০ সালের বিশ্বকাপে ব্রাজিল ও সুইজল্যান্ডের ম্যাচটি শেষ হয় ২-২ গোলের ড্রয়ে।
শুরুতে ব্রাজিলের গোলমুখে শট নিয়ে হুঁশিয়ার করেছিল সুইসরা। ৩ মিনিটে জারদান শাকিরির নিচু ক্রস থেকে বল পেয়েছিলেন জেমাইলি। লক্ষ্যে শট নিয়েছিলেন তিনি, কিন্তু বলটা চলে যায় গোলবারের উপর দিয়ে।
তারপর ঘুরে দাঁড়ায় ব্রাজিল। পরের ২৫ মিনিট ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল তারা। ১১ মিনিটে দারুণ সুযোগ তৈরি করে তারা। নেইমার ডিবক্সে ঢুকে প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারদের ফাঁকি দিয়ে বল পাঠান পাউলিনিয়োর কাছে। কিন্তু বলে ঠিকমতো পা লাগাতে না পারায় লক্ষ্যভেদ করতে পারেননি বার্সেলোনা তারকা।
এই ব্যর্থতার কিছুক্ষণ পর এগিয়ে যায় ব্রাজিল। রোস্তভ অ্যারেনায় ব্রাজিলের দর্শকরা উল্লাসে মাতে ২০ মিনিটে, উপলক্ষটা এনে দেন কৌতিনিয়ো। বক্সের সীমানায় এসে নেইমার বাঁ দিকে মার্সেলোর কাছে বল বাড়ান। ব্রাজিল অধিনায়কের ক্রস বিপদমুক্ত করতে হেড করেন সুইস ডিফেন্ডার। কিন্তু বল পড়ে কৌতিনিয়োর সামনে। বাঁকানো শটে সুইজারল্যান্ড গোলরক্ষক ইয়ান সোমারকে পরাস্ত করেন লিভারপুলের সাবেক তারকা।
বিরতির দুই মিনিট আগে কর্নার পায় ব্রাজিল। নেইমারের ক্রস থেকে থিয়াগো সিলভা হেড করেছিলেন লক্ষ্যের দিকে। কিন্তু পিএসজি ডিফেন্ডারের হেড গোলবারের উপর দিয়ে চলে যায়। প্রথমার্ধ সেলেসাওরা শেষ করে ১-০ গোলে এগিয়ে থেকে।
প্রথমার্ধের শুরুতে সুযোগ তৈরি করেও ব্যর্থ হয়েছিল সুইজারল্যান্ড। কিন্তু বিরতির পর ফিরেই সেই আক্ষেপ কাটায় তারা। ৫০ মিনিটে শাকিরির কর্নারে বল ব্রাজিলিয়ান খেলোয়াড়দের মাথার উপর দিয়ে গোলপোস্টের সামনে আসে। সবার অলক্ষে থাকা স্টিভেন জুবের সুযোগটি কাজে লাগান। ক্ষিপ্রগতির হেডে ব্রাজিল গোলরক্ষক অ্যালিসনকে অসহায় বানান তিনি।
৫৮ মিনিটে ডিবক্সের সামনে কৌতিনিয়োকে দুইবার রুখে দেয় সুইসরা। ফিরে আসা বলে নেইমার শট নিলেও কর্নার হয় তার চেষ্টা।
দ্বিতীয় গোল করার ভালো সুযোগ পেয়েছিলেন কৌতিনিয়ো। ৬৯ মিনিটে বুক দিয়ে ঠেকিয়ে বলের নিয়ন্ত্রণ নেন তিনি। কিন্তু তার শট লক্ষ্যে না ছুটে গোলবারের পাশ দিয়ে চলে যায়।
৪ মিনিট পর মানুয়েল আকাঞ্জির চ্যালেঞ্জে সুইসদের ডিবক্সে গাব্রিয়েল হেসুস পড়ে গেলে পেনাল্টির জোর আবেদন জানায় ব্রাজিল। তারা রেফারিকে ভিএআর দেখার অনুরোধ করে, কিন্তু সিজার রামোস তাদের প্রত্যাখ্যান করেন।
৭৯ মিনিটে জেসুসের বদলি নেমে ফিরমিনো একাই বল নিয়ে ছুটে যান ডিবক্সের মধ্যে। নেইমার বক্সের মধ্যে থাকলেও তাকে পাস না দিয়ে কোনাকুনি শটে গোল করতে চেয়েছিলেন তিনি। পারেননি, বল গোলবারের উপর দিয়ে জায়গা করে নেয় মাঠের বাইরে।
নির্ধারিত সময়ের শেষ ২ মিনিটে সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করে ব্রাজিল। ৮৮ মিনিটে গোলমুখের সামনে থাকা নেইমারের হেড লুফে নেন সোমার। পিএসজি ফরোয়ার্ডের ৯০ মিনিটের ফ্রি কিক থেকে ফিরমিনোর হেড দারুণ দক্ষতায় দূরে ঠেলে দেন সুইজারল্যান্ড গোলরক্ষক। ইনজুরি সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে মিরান্দার ভলি গোলপোস্টের পাশ দিয়ে গেলে আবারও আক্ষেপে পোড়ে ব্রাজিল।
একেবারে শেষ মুহূর্তে নেইমার ফ্রি কিক পেয়েছিলেন। কিন্তু পারেননি লক্ষ্যভেদ করতে। জয়ের শেষ আশাও ভেঙে যায় সেলেসাওদের।
ব্রাজিল-সুইজারল্যান্ডের এই ড্রয়ে ‘ই’ গ্রুপের শীর্ষে থাকল কোস্টারিকাকে ১-০ গোলে হারানো সার্বিয়া।
খেলার সংক্ষিপ্তবৃত্তি: