রাতে জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পর্দা উঠছে বিশ্বকাপ ফুটবলের। গোটা দুনিয়ায় উত্তেজনা।
চ্যাম্পিয়ন কে হবে? এবার ফেভারিট কে? গোল দিয়ে কিংবা গোল ঠেকিয়ে তারা হয়ে উঠবে তারকা? পুরনোরাই ঝলক দেখাবে? নাকি নতুনরা উঠে আসবে? প্রশ্নের পর প্রশ্ন। বাড়ছে বাজির দর। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন জার্মানির ভক্ত আমাদের দেশে কম। তবে এবার আবেগ পাশ কাটিয়ে সব পক্ষই তাদের গোনায় ধরছে। ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনা নিয়ে আবেগের মাত্রা তো অনেক বেশি। হিসাব-নিকাশি যারা তারাও কিন্তু তাদের চ্যাম্পিয়নদের দৌড়ে রাখতে বাধ্য হচ্ছে। লিওনেল মেসি অবশ্য আর্জেন্টিনার চেয়ে এগিয়ে রাখছেন জার্মানি, ব্রাজিল ও স্পেনকে। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে তিনে থাকা তারকাখচিত বেলজিয়ামকে ভুলে গেলে হবে না। একক নৈপুণ্যে ভাস্বর ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো র্যাঙ্কিংয়ে চারে থাকা পর্তুগালকে ইউরোপ সেরা বানিয়েছেন, এটাও মাথায় রাখছে ফুটবলবোদ্ধারা। নতুন তারকাসমৃদ্ধ ফ্রান্সও সব হিসাব উলট-পালট করে দিতে সক্ষম।
বাজিতে এগিয়ে জার্মানি
যে ২০ বার বিশ্বকাপ হয়েছে, মাত্র একবার ফাইনাল রাউন্ডে দেখা যায়নি জার্মানিকে। সেবার কোনো এক রাজনৈতিক জটিলতায় বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেনি তারা। জার্মানি বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছে ৮ বার এবং চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ৪ বার। গতবার ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে মেসির আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জিতে নেয় জার্মানি। তবে গত বিশ্বকাপে তাদের যে কীর্তি সবার মনে দৃষ্টান্ত হয়ে থেকে গেছে তা হলো ব্রাজিলের মাঠেই ব্রাজিলের মতো দলকে ৭-১ ব্যবধানে হারানো।
যদি এই বিশ্বকাপের কথাই ধরি, তা হলেও দেখব জার্মানিকে ফেভারিট না ভেবে উপায় নেই। বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে তুলনামূলক একটু সহজ গ্রুপে ছিল জার্মানি। ইউরোপের ‘সি’ গ্রুপে তাদের সঙ্গে ছিল নর্দান আয়ারল্যান্ড, চেক প্রজাতন্ত্র, নরওয়ে, আজারবাইজান এবং সান মারিনো। প্রতিটা ম্যাচ জিতে বিশ্বকাপে যোগ্যতা অর্জন করেছে জার্মানি। মোট ১০টি ম্যাচে জার্মানি গোল করেছে ৪৩টি, আর খেয়েছে চারটি। তারা তাদের এই ফর্ম চূড়ান্ত আসরেও ধরে রাখতে পারবে কি না। মূল পর্বে জার্মানি আছে ‘এফ’ গ্রুপে। এই গ্রুপে তাদের সঙ্গে রয়েছে মেক্সিকো, সুইডেন ও দক্ষিণ কোরিয়া।
বেশ কয়েক বছর ধরে জার্মানি দলের কোচের দায়িত্বে আছেন জোয়াকিম লো। অভিজ্ঞ এবং তরুণ ফুটবল প্রতিভার মিশ্রণে যে দল তিনি তৈরি করেছেন, তা এই পর্যন্ত বেশ সফল বলেই দেখা যাচ্ছে। তবে টানা দুইবার কাপ জয় কঠিন এক কর্ম। তাই রাশিয়ায় জার্মানির চ্যালেঞ্জ সবচেয়ে বেশি।
গ্রুপের খেলায় মেক্সিকো এক ধরনের বিপক্ষ, সুইডেন আর এক ধরনের বিপক্ষ, দক্ষিণ কোরিয়া আবার অন্য আর এক ধরনের। জার্মানির তিন প্রতিপক্ষ তিন রকম স্টাইলের ফুটবল খেলে। জার্মানির কাছে বিপক্ষের এই বৈচিত্র্য নতুন কিছু নয়। কারণ দলের অধিকাংশ খেলোয়াড়ই ইউরোপের প্রথম সারির দলে খেলে অভ্যস্ত। গোলকিপার স্টেগান বেশ নির্ভরতা দিয়েছে বার্সেলোনাকে। হোমেলসের নেতৃত্বে জার্মানির ডিফেন্স কোচ জোয়াকিম লোকে যথেষ্ট নির্ভরতা দিয়েছেন এ যাবৎ। মাঝমাঠে ওজিল, টনি ক্রুজ, খেদিরা, মার্কো বিচিত্র স্টাইলের দলের বিরুদ্ধে মাঝমাঠ সামলাতে পেরেছেন। মুলার আর গোমেজ যদি গোল পেতে পারেন তাহলে লোকে আর পায় কে!
সময় এখন ব্রাজিলের
পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলের সাম্প্রতিক উত্থানটা বলতে গেলে স্বপ্নের মতো। কোচ তিতের ফুটবল দর্শন ক্ল্যাসিক্যাল ব্রাজিলীয় ঘরানায় ভর করে বাছাইপর্বে দুর্দান্ত খেলে বিশ্বকাপে এসেছে তারা। খেলেছে দুর্দান্ত আক্রমণাত্মক ফুটবল। তাই ব্রাজিল হয়ে উঠেছে বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা ফেভারিট। তবে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, সময়ের সঙ্গে দৌড়ে বিশ্বকাপের আগে নেইমার কি সম্পূর্ণ ফিট হয়ে উঠতে পারবেন? তিনি যদি সত্যি সত্যি ফিট হয়ে ওঠেন, তাহলে ব্রাজিল দলে সিল্কের যে সংমিশ্রণ (উইলিয়ান, কৌতিনহো, জেসুস, নেইমার) এবং স্টিলের যে সংমিশ্রণ (কাসেমিরো, ফার্নান্দিনহো, মার্কুইনহোস, মিরান্দা) তা হবে সত্যি ভয়ংকর এবং অনেক বেশি শক্তিশালী। সঙ্গে যোগ করে নিতে পারেন দুই সেরা গোলরক্ষক অ্যালিসন এবং এডারসনকে। এছাড়া রয়েছেন উড়ন্ত দুই ফুলব্যাক দানি আলভেজ এবং মার্সেলো। আপনি চাইলে এই ব্রাজিল দলকে ১৯৫৮ সালের সঙ্গেও তুলনা করতে পারেন, যারা প্রথম ইউরোপের মাটি থেকে বিশ্বকাপ জয় করে নিয়ে গিয়েছিল।
ব্রাজিলের তারকা ফুটবলারদের সবাই আছেন ফর্মের তুঙ্গে। কোচ তিতে তার নিয়মিত লাইনআপ তৈরি করছেন ফর্মে থাকা ফুটবলারদের নিয়ে। ব্রাজিল ফুটবলাররাও জানেন, যদি তারা ভালো পারফরম্যান্স করতে পারেন, তাহলে তিতের দলে পরের সুযোগটা পাবেন। পারফরম্যান্সে কোনো ঘাটতি থাকলেই পড়ে যাবেন বাতিলের খাতায়। গত আট বছরের এই উদাহরণটা তৈরি হচ্ছিল না ব্রাজিল দলে। এবার যেটা করতে পেরেছেন তিতে। তার কারণেই এবার দলটিতে নেইমার-নির্ভরতা কমেছে। দলটিতে রয়েছে আরও বেশ কয়েকজন বিশ্বসেরা ফুটবলার। যেমন কৌতিনহো, উইলিয়ান, ডগলাস কস্তা, গ্যাব্রিয়েল জেসুসরা এখন নেইমারকে ছাড়াও জেতাতে পারেন দলকে।
তবুও আর্জেন্টিনা…
লাতিন আমেরিকার বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে কঠিন পরীক্ষা দিতে হয়েছে আর্জেন্টিনাকে। একসময় ছিটকে পড়ার শঙ্কায়ই পড়ে গিয়েছিল তারা। তবে শেষ ম্যাচে মেসির অসাধারণ এক হ্যাটট্রিকে ইকুয়েডরকে হারিয়ে মূল পর্বে জায়গা করে নেয় ১৯৮৬ সালে সবশেষ বিশ্বকাপ জেতা দেশটি। আক্রমণভাগে বিশ্বের অন্যতম সেরা সব খেলোয়াড় থাকা সত্ত্বেও বাছাইপর্বে রীতিমতো ধুঁকতে দেখা গেছে আর্জেন্টিনাকে। ১৮ ম্যাচে মাত্র ১৯ গোল করে তারা।
‘রাশিয়ায় বিশ্বকাপ জেতা আমাদের জন্য হবে ভালো সুযোগ। আর্জেন্টিনাকে এর ইতিহাস ও ঐতিহ্যের কারণে সব সময়ই শিরোপার দাবিদার ভাবা হয়। তবে এ বছর আমরা ফেভারিট নই। স্পেন, ব্রাজিল, জার্মানি আর ফ্রান্স আমাদের চেয়ে অনেক এগিয়ে আছে।’Ñ এই ভাষ্য বর্তমান দুনিয়ার অন্যতম ফুটবলার লিওনেল মেসির। প্রথম বাক্যটা সবার ভালো লেগে থাকার কথা। কিন্তু পরের কথাগুলো? না, হতাশ হওয়ার কারণ নেই। মেসি কথাগুলো বলেছেন কৌশলগত কারণে। বাছাইপর্ব যত খারাপই হোক না কেন, মেসির আর্জেন্টিনাকে গুনতেই হবে।
আর্জেন্টিনার বিপক্ষে অপবাদ, দলটি বড্ড বেশি মেসি-নির্ভর। এটা যেমন সত্য, তেমনি মেসি ছাড়াও যে খেলার মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো খেলোয়াড় আছেন, সেটাও মিথ্যা নয়। আর্জেন্টিনার শক্তির জায়গা হচ্ছে আক্রমণভাগ। বার্সেলোনার জার্সি গায়ে এ মৌসুমে ৫৪ ম্যাচে ৪৫ গোল করা মেসি এবারও আর্জেন্টিনাকে নিয়ে যাবেন টুর্নামেন্টের শীর্ষ পর্যায়ে এমনটাই বলছেন ফুটবলবোদ্ধারা। অন্যদিকে মেসিকে সঙ্গ দেওয়ার জন্য দলে রাখা হয়েছে ম্যান সিটি স্ট্রাইকার অ্যাগুয়েরাকেও। অ্যাগুয়েরা ম্যানসিটির হয়ে ৩৯ ম্যাচে করেছেন ৩০ গোল। ইনজুরির কারণে দল থেকে বাদ পড়ার আশঙ্কায় থাকলেও অবশেষে মূল দলে রাখা হয় এই স্ট্রাইকারকে। অন্যদিকে সাবেক রিয়াল মাদ্রিদ তারকা গঞ্জালো হিগুয়েন, পাওলো দিবালা আর ক্রিশ্চিয়ান পাভনের সমন্বয়ে সাজানো আক্রমণ ভাগ প্রতিরোধ করতে হিমশিম খেতে হবে প্রতিপক্ষকে। ১৬ জুন আইসল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু হবে আর্জেন্টিনার। ‘ডি’ গ্রুপে দুবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের অন্য দুই প্রতিপক্ষ ক্রোয়েশিয়া ও নাইজেরিয়া। সব ঠিক থাকলে সহজেই আর্জেন্টিনার নকআউট পর্বে যাওয়ার কথা।
স্পেন: ২০১০ না ২০১৪?
বিশ্বকাপের অন্যতম ফেভারিটের তালিকায় স্পেনের নাম না এনে কোনো উপায় নেই। প্রীতি ম্যাচে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে যে স্পেনকে দেখা গেছে, তা যদি বিশ্বকাপে তারা ধরে রাখতে পারে, তবে তাদের ঠেকানো দুঃসাধ্য হবে অন্যদের পক্ষে। সার্জিও রামোসের দলটিতে অসাধারণ অভিজ্ঞতা এবং টেকনিক্যাল উৎকর্ষের মিশেল ঘটেছে খুব নিখুঁতভাবে। যেটা ইতালি দেখতে পেয়েছে বাছাইপর্বে। প্রতিপক্ষ এক কোচের ভাষ্যমতে, ‘স্পেন দলটির ফুটবলাররা এক টাচে যেভাবে বল নিয়ে ছোটেন, যেন সেটা দানবীয় কিছু।’ দলটির দিকে একবার তাকিয়ে দেখুন! ডেভিড ডি গিয়া, সার্জিও বুস্কেটস, ডেভিড সিলভা, ইসকো, সার্জিও রামোস, জেরার্ড পিকে, জর্দি আলবা, থিয়াগো আলকানতারা, আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা এবং দিয়েগো কস্তা। লিওনেল মেসি এই দলটির দিকে তাকিয়ে বলেছেন, ‘আপনি কদাচিৎ এই দলটির মুখোমুখি হতে চাইবেন।’
২০০৮ থেকে ২০১২ ওই চার বছর নিঃসন্দেহে নিজেদের ফুটবল ইতিহাসের সেরা সময় কাটিয়েছে স্পেন। দুটি ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ এবং দেশের ইতিহাসের প্রথম বিশ্বকাপ জেতা হয়েছিল সেই সময়েই। আর তিনটি সাফল্যই এসেছিল স্প্যানিশ ফুটবলের সোনালি প্রজন্ম হিসেবে পরিচিত একঝাঁক প্রতিভাবান ফুটবলারের দৃষ্টিনন্দন ফুটবলে।
সেই ঝাঁকের অন্যতম পুরোধা জাভি ইতিমধ্যে অবসর নিয়ে ফেলেছেন। গোলরক্ষক কাসিয়াসের এখন আর দলে জায়গা নিশ্চিত নয়। তবে ইনিয়েস্তা, রামোস, পিকেরা এখনো আছেন। বয়সের ভারে তাদের কেউ কেউ এখন কিছুটা নিষ্প্রভ। তাতে কী! অভিজ্ঞতার ঝুলিটা নিশ্চয়ই খুব কাজে দেবে স্পেনের। সে আশাতেই তো তাদের ওপর ভরসা রাখছেন নতুন কোচ ইউলেন লোপেটেগুই।
লোপেটেগুইর প্রথম চাওয়া রাশিয়ায় যেন ২০১৪ বিশ্বকাপটা ফিরে না আসে। সেবার শিরোপা রক্ষার মিশন নিয়ে গিয়ে প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায় নিয়েছিল স্পেন। বলা চলে স্পেনের ফুটবলে তখন থেকেই শুরু হয় দুঃসময়। আশার কথা, বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের শেষ দিকে জ্বলে ওঠার পর থেকে ধীরে ধীরে প্রায় অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে অভিজ্ঞ আর নবীন ফুটবলারদের নিয়ে গড়া দলটি। এক সময় যে দলের চূড়ান্ত পর্বে ওঠাই ছিল অনিশ্চিত, সেই দল শুধু গা-ঝাড়া দিয়ে ওঠেনি, ফেভারিটের তালিকাতেও এখন রাখতেই হয় তাদের।
আবার ফর্মে ফ্রান্স
স্পেনের পর ফ্রান্সই হতে পারে এই বিশ্বকাপের অন্যতম ফেভারিট। কোচ দিদিয়ের দেশম ১৯৯৮ বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক। তার অধীনে দলটি এখন অনেকটাই সংগঠিত। সেরা তারকা নিঃসন্দেহে আন্তোনিও গ্রিজম্যান। ২০১৬ ইউরোয় সর্বোচ্চ (৬টি) গোলদাতা তিনি। এখনো যে ফর্মে রয়েছেন, নিশ্চিত রাশিয়ায়ও একই ফর্ম দেখাতে পারেন তিনি।
এরপর রয়েছে দলটির অন্যতম সেরা এবং মেধাবী তরুণ ফুটবলার কাইলিয়ান এমবাপে। মিডফিল্ডে এনগোলা কান্তের দারুণ পরিশ্রম এবং সেন্টার ব্যাকে রাফায়েল ভারানে ও স্যামুয়েল উমতিতি দলটির শক্তি অনেক বাড়িয়ে দিয়েছেন। ম্যানইউতে সমস্যায় থাকলেও নিজের দেশের হয়ে দারুণ খেলবেন পল পগবা। নিজেকে উজাড় করে দেবেন তিনিÑ এটাই ফরাসিদের আস্থা। ফরাসিদের প্রধান তারকাও তিনি। পগবাই পারেন স্টেডিয়ামে নীল জার্সির উৎসব সৃষ্টি করতে।
১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপজয়ী ফ্রান্স দলের অধিনায়ক ছিলেন আজকের কোচ দিদিয়ে দেশম। ছয় বছর ধরে তিনি দলের দায়িত্বে আছেন। তার নেতৃত্বে ফ্রান্স ২০১৬ সালে ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপে রানার্সআপ হয়েছিল। এতটাই তিনি দল গুছিয়ে এনেছেন যে, একাদশ নির্বাচনে মধুর সমস্যায় পড়তে হবে তাকে।
গোলবারের নিচে দেশমের প্রথম পছন্দ অবশ্যই হুগো লোরিস। যদিও বাছাইপর্বের খেলায় কলম্বিয়া ও সুইডেনের বিরুদ্ধে তিনি দুটো হাস্যকর ভুল করেছিলেন। টটেনহ্যামের হয়েও তেমন কিছু ভুল আছে তার। পরবর্তী পছন্দ হিসেবে থাকবেন মার্সেইর স্টিভ মানদানদা ও পিএসজির আলফোন্সে আরেওলা।
রক্ষণভাগ সেন্টার ব্যাক হিসেবে নিশ্চয় পছন্দে থাকবেন চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতা রিয়াল মাদ্রিদের রাফায়েল ভারানে ও বার্সেলোনার উমতিতি। মধ্যমাঠের সবচেয়ে বড় নাম পল পোগবা। যদিও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে শেষ মৌসুম তেমন ভালো কাটেনি তার। তবে তিনি যে আসলেই বিশ্ব সেরাদের একজন বিশ্বকাপে তা দেখানোর সুযোগ পাবেন তিনি। মাঝমাঠে পগবার সঙ্গে চেলসির কান্তে ও ইয়ুভেন্তুসের মাতুইদির থাকার সম্ভাবনা বেশি। আর রিজার্ভ হিসেবে থাকতে পারেন বায়ার্নের তোলিসো। ফরোয়ার্ড বিভাগের দায়িত্ব থাকবে অ্যাটলেটিকোর গ্রিজমান ও চেলসির জিরু। আরও আছেন পিএসজির এমবাপে, বার্সেলোনার ডেম্বেলে। সব মিলে অসাধারণ দল ফ্রান্স।
যদিও দলটির অন্যতম সমস্যা হচ্ছেÑ ধারাবাহিকতার অভাব। ২০১৬ ইউরোর ফাইনালে পর্তুগালের কাছে হারের রেশ এখনো কেটে যায়নি। এছাড়া বাছাইপর্বে বেলারুশ এবং লুক্সেমবার্গের কাছে পরাজয়ের পর সম্প্রতি প্রীতি ম্যাচে কলম্বিয়ার কাছে ২-০ গোলে হেরেছে ফ্রান্স। এরপর ফরাসিদের নিয়ে রাশিয়া বিশ্বকাপে ভক্ত-সমর্থকরা স্বপ্ন দেখতে সাহস পাচ্ছেন কম। তবুও দলটি অনেক বেশি মেধাবী ফুটবলারের সমন্বয়ে গড়া। এ কারণেই ফেভারিটের তালিকায় রয়েছে ফ্রান্স। কিন্তু একটি বাজে দিনই হয়তো নষ্ট করে দিতে পারে সব কিছু।
ডার্ক হর্স বেলজিয়াম, জায়ান্ট পর্তুগাল
অসাধারণ দল। এবারের বিশ্বকাপে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিতে পারে বেলজিয়াম। তাদের বলা হচ্ছে ডার্ক হর্স। মানে ফেভারিটদের হারিয়ে বিশ্বকাপ জিতে ফিরতে পারে তারা। আসলেই তো, বিশ্বকাপ জেতার মতো একটা দল হলো এই বেলজিয়াম। তাদের অসাধারণ দুইজন গোলকিপার আছেন যারা লিভারপুল ও চেলসিতে খেলেন। ভিনসেন্ট কোম্পানি, ভারমালিন, ম্যানিয়রের মতো ডিফেন্ডার দলটিতে। ব্রনে, হ্যাজার্ড, লুকাকু ফেলানিরা তো ইংলিশ লিগ মাতিয়ে বেড়াচ্ছেন। দলটির ৬-৭ জন খেলোয়াড় বিশ্বের টপ ক্লাস ক্লাবে খেলছেন। এই বেলজিয়ামকে নিয়ে বাজি ধরাই যায়। বিশ্বকাপে বড়দের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে এমন দলগুলোর মধ্যে রয়েছে ইউরোজয়ী রোনালদোর পর্তুগাল, নাইজেরিয়া, ক্রোয়েশিয়া এবং গ্যারেথ সাউথগেটের ইংল্যান্ড। স্বাগতিক রাশিয়াকেও কেউ হিসাবের বাইরে রাখলে ভুল করবে। সঙ্গে সুয়ারেজ-কাভানির উরুগুয়ে, মোহাম্মদ সালাহর মিশর গ্রুপপর্বে বড়দের জন্য বড় বাধা হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে।