পাথরে খোদাই করা একটা ভাস্কর্য। খোদিত ভাস্কর্যটি ঘিরে ভিড়। সেলফির যুগে কেউ কেউ সেলফি তুলছেন। কেউ শুধু দাঁড়িয়ে গভীর আগ্রহে চেয়ে আছেন ভাস্কর্যটির দিকে। ভাস্কর্যটি ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিনের, রাশিয়ার মহান নেতার। তার পেছনেই বুক উচুঁ করে দাঁড়িয়ে লুঝনিকি স্টেডিয়াম। রাশিয়া বিশ্বকাপ এখানেই শুরু, এখানেই শেষ।এখানেই প্রথম বাঁশি বাজাবেন নেস্টর পিটানা, শেষটা বাঁজাবেন আফ্রিকান কোনো রেফারি।
রাশিয়া বিশ্বকাপের জমজমাট উদ্বোধনী ম্যাচ আর স্বপ্নের ফাইনাল হবে রাজধানী মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে। পরিচ্ছন্ন বিশ্বকাপ আয়োজনে ভেন্যুটির প্রস্তুতির কাজ ইতিমধ্যেই শেষ করেছে আয়োজক রাষ্ট্র। ৮১ হাজার ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন স্টেডিয়ামটিকে বলা হচ্ছে একটা রঙ্গমঞ্চ! কারণ এখানেই জয় দিয়ে হাসিমুখে বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু করবে একদল, আরেক দল ফাইনাল হারের মধ্য দিয়ে শেষ করবে মিশন। একদল হাসবে, আরেকদল কাঁদবে। এর থেকে বড় রঙ্গমঞ্চ কি আর হতে পারে? জীবনের রঙ্গমঞ্চ!
বিশ্বকাপ আজ থেকে ডানাপালা মেলতে শুরু করেবে। ‘দ্য গ্রেটেন্ট শো অন আর্থ’ খ্যাত বিশ্বকাপের যাত্রা শুরু হবে জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে। অনুষ্ঠান মাতাবেন গ্লোবাল মিউজিক আইকন রবি উইলিয়ামস, রাশিয়ার তরুণ সপরানো শিল্পী আইদা গারিফুলিনা। বিশ্বকাপের মহিমা বর্ণনায় থাকবেন ব্রাজিলের হয়ে দুইবার (১৯৯৪ ও ২০০২) বিশ্বকাপজয়ী তারকা রোনাললো। তার উপস্থিতি যে বিশ্বকাপ রাঙিয়ে উঠবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
৩২ দলের ৩১ দিনের মহারণ শুরু হবে স্বাগিতক রাশিয়া ও সৌদি আরবের ম্যাচ দিয়ে। ৭৩৬ জন খেলোয়াড় মাতিয়ে রাখবেন বিশ্বকাপ। তাদের মধ্যেই কেউ হবে সেরা। শ্রেষ্ঠত্বের মুকুটের বড় দাবিদার হিসেবে ব্রাজিলকে শীর্ষে রাখছে সবাই। কারণ ওদের দলে ম্যাচ উইনারের সংখ্যা অনেক। হেক্সা মিশন নিয়েই মাঠে নামবেন নেইমার, কুতিনহোরা।
ভয় রয়েছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন জার্মানিকে নিয়ে। যেকোনো পরিস্থিতি সামলে নিয়ে দারুণ লড়তে জানে জার্মানরা। সবচেয়ে ভয় ফ্রান্সকে নিয়ে। ১৯৯৮ বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের আরেকটি বিশ্বকাপ জয়ের সম্ভবনা জোরালো। লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে রাখলেও ভরসা পাচ্ছে না অনেকে। আর্জেন্টাইন সমর্থকদের ক্ষিপ্ত করেছে স্পোর্টস ডাটা কোম্পানি গ্রেসনোট। পেরুর এক কোম্পানির দাবি ব্রাজিলের বিশ্বকাপ জয়ের সম্ভাবনা ২১ শতাংশ, আর্জেন্টিনার ৮ শতাংশ। আর্জেন্টাইন সমর্থকদের চোখ স্বপ্নরঙিন হয়ে আছে, হলে এবার নইলে আর হবে না।
ঠিক একই অবস্থা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোরও। পর্তুগাল একবারও বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলেনি। ৬৬’র বিশ্বকাপে তৃতীয় স্থান তাদের সেরা সাফল্য। বিংশ শতাব্দীর ০৬’র বিশ্বকাপে হয়েছিল চতুর্থ। ওই সময়ে রোনালদো ছিলেন দলে। ছিলেন তরুণ তুর্কী হিসেবে। এখন রোনালদো পর্তুগিজদের স্বপ্নসারথি। ইউরোর মুকুট জিতে কিংবদন্তি হওয়ার পথে এক পা দিয়ে রেখেছেন সিআর-সেভেন। ইতিহাসের পাতায় টিকে যাবেন রাশিয়া বিশ্বকাপ জিতলেই। চোখে স্বপ্ন, শিরোপার ক্ষুদা রয়েছে রোনালদোর। কিন্তু পর্তুগাল দলের কি শিরোপা দর্শনের মোহ আছে? সময়ই জানিয়ে দেবে সেই উত্তর।
আর্জেন্টিনার নেস্টর পিটানা বাঁশিতে আজ ফুঁক দেবেন। তার ফুঁকেই শুরু হবে বিশ্বকাপ দামামা। পরের ৩০ দিন ফুটবল প্রেমেই বুঁদ হয়ে থাকবেন কোটি কোটি ফুটবলপ্রেমী। ৩২ দলের যেকোনো একদল হবে চ্যাম্পিয়ন। ৩১ দলের হৃদয় ভাঙবে। কিন্তু সারা বিশ্বকে এক সুতোয় বাঁধায় তাদেরকেও দিতে হবে বাহবা। ৩২ দলের ময়দানি লড়াই, ৬৪ ম্যাচের রোমাঞ্চ। সবই ঘিরে ওই ৬ দশমিক ১৭ কেজি ওজনের ট্রফিটির জন্য।
রাশিয়া বিশ্বকাপ এখন রঙিন হওয়ার অপেক্ষায়। তীর্থে আজ যে আনন্দধারা শুরু হচ্ছে তা ফুটবলের সত্য, সুন্দর, মঙ্গল ও শুদ্ধ চিন্ময়ানন্দ পাওয়ার।