‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ ফুটবল বিশ্বকাপের পর্দা উঠছে আর মাত্র একদিন পরে। দুনিয়ার সকল ক্রীড়াপ্রেমীদের চোখ এখন রাশিয়ায়। শুধু সাধারণ ভক্ত সমর্থক নয় অন্যান্য খেলার তারকারাও মজেছেন মেসি-নেইমার-রোনালদোদের প্রেমে। ব্যাতিক্রম নয় বাংলাদেশে জাতীয় দলের ক্রিকেটাররাও। বেশিরভাগ ক্রিকেটার ভাগ হয়ে গেছেন আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলে। আবার অনেক টাইগার ক্রিকেটার আছেন যাদের প্রথম জীবনের টার্গেট ছিলো ফুটবলার হওয়া। এমনকি ফুটবলের প্রতি তাদের আলাদা একটা টান আছে। অবসর সময় পেলেই নেমে পরেন ফুটবল খেলতে।
ব্যাতিক্রম নয় জাতীয় দলের সেরা তারকা সাকিব আল হাসান। বরং অন্যদের চেয়ে সাকিবের ফুটবল প্রীতি ঢের বেশি। যার পিছনের কারিগর সাকিবের বাবা। ছোট বেলায় সাকিবের বাবা খন্দকার মাশরুর রেজার ইচ্ছা ছিল ছেলেকে ফুটবলার বানাবেন। নিজেও ভালো ফুটবল খেলতেন। সময়ে পেলেই ছেলেকে নিয়ে বেড়িয়ে যেতেন ফুটবল খেলতে। মাশরুর রেজা খেলেছেন জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে। জাতীয় দলে খেলার ইচ্ছা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা আর হয়ে উঠেনি।
তবে নিজ হাতে গড়ে তুলেছেন ভাগনে মেহেদী হাসান উজ্জ্বলকে। উজ্জ্বল খেলেছেন বাংলাদেশ ফুটবল দলে। চেয়েছিলেন ভাগনের পর নিজের ছেলেকেও বানাবেন দুর্দান্ত ফুটবলার। সে-ও খেলবে জাতীয় দলে। তবেই না নিজের অপূর্ণ স্বপ্নটা সত্যি হবে পুরোপুরি!
বাবার কাছ থেকে ফুটবলের তালিম নিচ্ছে ছোট্ট সাকিব
ছেলে তার জাতীয় দলে খেলেছেন ঠিকই! তবে সেটা ফুটবল নয় ক্রিকেট দলে। শুধু জাতীয় দলে বললে ভুল হবে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন গোটা বিশ্বে। দীর্ঘদিন ধরে রয়েছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের আসনে। ক্রিকেটে ছেলের এত অর্জন দেখে বাবা মাশরুর রেজার এখন আর আফসোস হয়না বরং গর্বই করেন।
বাবার ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে ক্রিকেটার হওয়া সাকিবের জন্য সহজ ছিলো না।বাবা ফুটবলার ছিলেন, ফুফাতো ভাই জাতীয় দলের ফুটবলার এমন একটা পরিবার থেকে উঠে এসে ক্রিকেটার হওয়া সহজ ব্যাপার না। কিন্তু সেই কঠিন কাজটাই করেছেন বর্তমান বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।
এ প্রসঙ্গে সাকিব বলেন,‘মনে হয় বাংলাদেশ আইসিসি ট্রফি জেতার পর ক্রিকেটার হওয়ার ইচ্ছেটা জাগে।’ বাবা মাশরুরও একমত, ১৯৯৭ আইসিসি ট্রফি জেতাটা যে বাংলাদেশের বহু কিশোরের মনে যে ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন এঁকে দিয়েছিল, সাকিব তাদের একজন।
ক্রিকেটার হলেও ফুটবলের সাথে সাকিবের একটা আত্মিক সম্পর্ক রয়েছে। সেই ভালোবাসাটা এমন যে বিকেএসপিতে একবার এক প্রীতি ফুটবল ম্যাচ খেলার জন্য সাকিব ইংল্যান্ড থেকে প্রায় এক লাখ টাকা দামের বুট কিনে এনেছিলেন। যে বুট পরে সাধারণত বিশ্বের সেরা ফুটবলাররা খেলে। এখনো অনুশীলনের ফাঁকে সুযোগ পেলেই ফুটবলার বনে যান সাকিব।
এই যেমন গত জানুয়ারীতে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে ইনজুরিতে পরে দীর্ঘ দিন অলস সময় কাটাচ্ছিলেন সাকিব। ১২ ফেব্রুয়ারি, মাঘের পড়ন্ত বিকেল। মন খারাপের বিকেলে কন্যা আলায়না হাসানকে নিয়ে চলে এলেন মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে। শৈশবে বাবা মাশরুর রেজার কাছে যেমন মাগুরা স্টেডিয়ামের সবুজ গালিচায় ফুটবলের কারিকুরি শিখতেন, সাকিব সেটিই যেন করতে চাইলেন নিজের মেয়ের সঙ্গে। সময়ের ব্যবধানে কী দারুণভাবে মিলে গেল ছবি দুটি! ফুটবলের সঙ্গে তাদের সম্পর্কটা যে আসলেই আত্মিক, ছবি দুটি যেন সে কথাই বলে।
তবে এখন দেশজুড়ে চলছে বিশ্বকাপ উত্তাপ। সেই উত্তাপের ছোঁয়া থেকে বাদ যায়নি বাবা-ছেল। এখানেও দুজনের বেশ অমিল। মাশরুর রেজা ব্রাজিল সাপোর্টার। পছন্দের খেলোয়াড় ব্রাজিলের রোনালদো, রোনালদিনহো। অন্যদিকে পুত্র সাকিব আর্জেন্টিনার অনেক বড় ভক্ত। প্রিয় খেলোয়াড় লিওনেল মেসি।