বাছাইপর্ব খেলেই মিশন শেষ। স্বপ্নের বিশ্বকাপ ফুটবলে বাংলাদেশ কখনো খেলেনি। ভবিষতে খেলবে এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। তবু বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ঠিকই দেখা মিলেছে। পাঠকরা এনিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়ারই কথা। যেখানে বিশ্বকাপ খেলেনি। সেখানে আবার বাংলাদেশের দেখা মিলবে কীভাবে? ফুটবলাররা না খেলুক বিশ্বকাপের ইতিহাসের সঙ্গে বাংলাদেশের একজন জড়িয়ে গেছেন। হ্যাঁ, আন্তর্জাতিক ফুটবলে বাংলাদেশকে বড় সাফল্যের মুখ না দেখালেও বাংলাদেশের একজন কোচ বিশ্বকাপে দুটি দেশকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।
লোকাল কেউ নন। একজন বিদেশি কোচের এই কৃতিত্ব রয়েছে। জার্মানির সঙ্গে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক-খেলাধুলার চুক্তির বদৌলতে ১৯৯৪ সালে বাফুফে পেয়েছিল জার্মান কোচ অটো ফিস্টারকে। ফিস্টারের আগমনে বাংলাদেশের ফুটবলাররা যেন নতুন প্রাণ ফিরে পাচ্ছিলেন।
বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশ প্রথম ট্রফি জিতে ফিস্টারের প্রশিক্ষণই। ১৯৯৫ সালে মিয়ানমারে চার জাতি চ্যালেঞ্জ কাপ ফুটবল অনুষ্ঠিত হয়। লিগ পর্বে ম্যাচে মিয়ানমারের কাছে শোচনীয়ভাবে হারলেও ফাইনালে স্বাগতিকদের বিপক্ষে জয় পেয়ে মোনেম মুন্নার নেতৃত্বে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়।
এমন সাফল্যের পর ফুটবলপ্রেমীদের প্রত্যাশা ছিল সাফ গেমসে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো সোনা জিতবে। ১৯৯৫ সালেই তৎকালীন মাদ্রাজে অনুষ্ঠিত হয় সাফ গেমস। বাংলাদেশ ফাইনালে উঠলেও ভারতের কাছে ১-০ গোলে হেরে যায়। তখন থেকেই তাড়ানোর পথ খুঁজছিল বাফুফে। ১৯৯৮ বিশ্বকাপ বাচাইপর্বে ব্যর্থ হওয়ার সুযোগটি কাজে লাগিয়ে তিরস্কার করে অটো ফিস্টারকে চাকরিচ্যুত করা হয়। অথচ জার্মান এই কোচ থাকতে চেয়েছিলেন। বলেছিলেন, তিন বছর প্রশিক্ষণ দিয়ে বাংলাদেশকে এশিয়ার অন্যতম সেরা দলে পরিণত করবেন।
অটোফিস্টারের এই কথা কেউ শোনেননি। ব্যর্থ কোচ বলেই অনেকটা তাকে তাড়িয়েই দেওয়া হয়েছিল। একজন যোগ্য কোচের বিদায়ে ফুটবলাররা ভেঙে পড়েছিলেন। মোনেম মুন্নার এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ফিস্টারকে প্রয়োজন ছিল। বিশ্বকাপে যে কোনো দলের কোচ হওয়ার যোগ্যতা আছে তার। শেষ পর্যন্ত তাই হয়েছে বাফুফে তাকে অযোগ্য বলে বিদায় করলেও কাজটি যে কত বড় ভুল ছিল তা টের পায় বাংলাদেশ।
দুদেশের চুক্তির বিনিময়ে এই খ্যাতনামা কোচ অনেকটা বিনা পয়সায় বাংলাদেশ জাতীয় দলের দায়িত্ব পালন করেন। আসার আগে বিশ্ব যুব ফুটবলে ঘানাকে চ্যাম্পিয়ন করিয়ে বিখ্যাত হয়েছিলেন অটোফিস্টার।
১৯৯৮ সালে ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত হয় বিশ্বকাপ। বাচাইপর্ব থেকে সৌদি আরব চূড়ান্তপর্বে জায়গা করে নেয় ফিস্টারের প্রশিক্ষণে। মজার ব্যাপার হচ্ছে সেই বাচাইপর্বে কয়েক ম্যাচে তিনি বাংলাদেশের দায়িত্ব পালন করেন। ৯৭ সালের দিকে কোচ হয়ে সৌদি আরবকে নিয়ে যান চূড়ান্তপর্বে। টোগো যে দেশের নাম অনেকে জানেই না। সেই টোগোকে ২০০৬ বিশ্বকাপের চূড়ান্তপর্বে নিয়ে যান অটো ফিস্টারই। অথচ অটো ফিস্টারকে কাছে পেয়েও কাজে লাগাতে পারল না বাংলাদেশ।
- ব্রেকিংবিডিনিউজ২৪ / ১২ জুন ২০১৮ / তানজিল আহমেদ