বিশ্বকাপে কেউ ফেবারিট নয়ঃ মালদিনি

জীবনের মতো খেলাতেও উত্থান-পতন থাকে। আর ৬০ বছর ইতিহাসে ইতালি এবার বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জনে ব্যর্থ ছিল। এটা নিয়ে ইতিমধ্যেই অনেক কথা বলা হয়েছে। তাই আমি আর নতুন করে কোনও বিশেষণ প্রয়োগ করছি না। আমার বক্তব্য খুব সহজ। যা হয়েছে তা হয়েছে। এবার সামনে তাকানোর সময় এসেছে। এগিয়ে যাওয়ার পথে দেখতে হবে কোথায় ভুল হল। সাফল্য এবং ব্যর্থতা দুটোকেই বিশ্লেষণ করতে হবে। তাতে বোঝা যাবে এই ঘটনা কেন ঘটল। দলে অনেক মাথা রয়েছে যারা এই পরিস্থিতিটাকে বুঝতে পারবে এবং সমাধান খুঁজে বের করবে। রবার্তো মানচিনির অধীনে দলের পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু হবে খুব শীঘ্রই। ও দারুণ কোচ। আমরা ঠিক ফিরে আসব। ইতালি বরাবর সেরাদের মধ্যেই থেকেছে। সেখানে আবার ফিরে আসছে। যারা বিশ্বকাপে গিয়েছে, তাদের কারওকেই আমার ফেবারিট মনে হচ্ছে না। জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেন, পর্তুগাল, ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনার অনেক ভাল প্লেয়ার রয়েছে। কিন্তু বড় দলের সঙ্গে ছোট দলের খুব একটা ফারাক নেই। যে কেউ যে কারওকে হারাতে পারে। বিশ্বকাপে সাধারণত সেটাই হয়। যেহেতু বিশ্বকাপটা রাশিয়ায় হচ্ছে, তাই আমার মতে ইউরোপীয় দলগুলো বাকিদের থেকে এগিয়ে থাকবে। আফ্রিকা এবং এশিয়ার বেশ কিছু দল গত কয়েক বছর ধরেই বিশ্বকাপ খেলছে। ওদের আত্মবিশ্বাস অনেক বেশি। এ কারণেই এই টুর্নামেন্টটা অনেক বেশি কঠিন এবং উত্তেজক হয়ে উঠেছে। এ ধরনের লম্বা টুর্নামেন্টে ডিফেন্সিভ সংগঠন ভাল হওয়া দরকার। যারা এটা পারবে তাদের সম্ভাবনা তত বেশি। গত বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিলের পরস্পর-বিরোধী স্কোরলাইন দেখলে এটা আরও ভাল করে বোঝা যাবে। জার্মানির ম্যাটস হামেলস, ফ্রান্সের দু’?জন রাফায়েল ভারানে এবং স্যামুয়েল উমতিতি, উরুগুয়ের দিয়েগো গোডিন এরা হল এমনই কয়েকজন যাদের দিকে আমি তাকিয়ে থাকব। দেখতে চাই ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনা এই বিভাগটায় কেমন খেলে এই ব্যাপারে ইউরোপীয় দলগুলো কিন্তু এগিয়ে থাকবে। বেশিরভাগের দলেই ডিফেন্স কিন্তু শক্তিশালী। ছোটখাটো ভুল ওদের থেকে দেখতে পাওয়া যায়ই না। তুলনায় বাকি দলগুলোর ডিফেন্সে ভুল একটু যেন বেশিই। ভাল ডিফেন্ডার হতে গেলে জায়গা নেওয়ার ক্ষমতা, ফোকাস, মনঃসংযোগ, অ্যান্টিসিপেশন এবং দলের নিজের ভূমিকা এগুলো ভাল করে জানার দরকার তা সত্ত্বেও নিখুঁত ডিফেন্ডিং আপনাকে বাঁচাতে পারবে না যদি ম্যাচটা টাই- ব্রেকারে গড়ায়। তিনবার হেরে যাওয়া দলে থাকার সুবাদে, পেনাল্টি যে কত ভয়ঙ্কর জিনিস সেটা আমি চাইলেও ভুলে পারি না। এতেই বোঝা যায় যে দায়বদ্ধতা, প্রতিভা এবং দলগত প্রচেষ্টা থাকা সত্ত্বেও জেতার জন্য ভাগ্যের দরকার। সেটা কিন্তু ১৯৯০-এর সেমিফাইনালে বা ১৯৯৪-এর ফাইনালের এবং ১৯৯৮-এর কোয়ার্টার ফাইনালে আমাদের সঙ্গে ছিল না। প্রথমটা বেশি বেদনাদায়ক ছিল, কারণ সেটা ছিল ঘরের মাঠে। দেখে ভাল লেগেছিল যে চতুর্থবার, অর্থাৎ ২০০৬-এর ফাইনালে আমাদের দল সেটা ভাঙতে পেরেছে। যতদিন পর্যন্ত স্মৃতি রয়েছে, ততদিন পর্যন্ত আমি হয় এসি মিলান নয় ইতালির জাতীয় দলকেই সমর্থন করে এসেছি। অন্য কোনও দলের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করতে পারিনি। একইসঙ্গে, নিজেকে ফুটবল থেকে দূরে রাখতেও পারিনি। তাই এখন আমার মধ্যে একটু অদ্ভুত অবস্থা চলছে। এরকম অভিজ্ঞতা এই প্রথমবার। কিন্তু বিশ্বকাপে শুরু হলে আমি নিশ্চিত সেটা বরাবরের মতোই উত্তেজক হবে।